গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।
হাবিব রহমান: মেলবোর্নের এভালন এয়ারপোর্ট থেকে গোল্ড কোস্টের বিমান ছাড়লো কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০.১০ মিনিটে।টানা ২ ঘন্টার উড়ানে আমাদের যখন কোলানগাটা এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো তখন সময় বারোটা বেজে দশ। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলীয় শহর। শহরটি রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনের প্রায় ৬৬ কিলোমিটার (৪১ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্যের উত্তর সীমান্তের কাছেই অবস্থিত। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার ৬ষ্ঠ বৃহত্তম শহর ও এটি অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম অ-রাজধানী শহর এবং কুইন্সল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর
অনুসন্ধানকারী জন অক্সলি দ্বারা সমুদ্র সৈকতে আবিষ্কারের আগে ১৮২৩ সাল পর্যন্ত গোল্ড কোস্ট অঞ্চলটি ইউরোপীয়দের মধ্যে উপেক্ষিত ছিল। এই অঞ্চল থেকে লাল সিডারের সরবরাহ ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সকলকে আকর্ষণ করে। পরে ১৮৮৫ সাল থেকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে গোল্ড কোস্ট খ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমানে শহরটি ব্রিসবেনের পরে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল এলাকা। গোল্ড কোস্ট তার চমতকার জলবায়ু সাথে পর্যটন গন্তব্য ,সার্ফিং সৈকত, সুউচ্চ ভবন,থিম পার্ক, নাইটলাইফ, এর জন্য অধিক পরিচিত।শহরটি ২১ তম কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করেছিল, যা ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলেছিল।
এয়ারপোর্টের ঝামেলা মিটতে বেশী সময় লাগলোনা।তবে বাইরে আসার পরই বাঁধলেী বিপত্তি।হোটেলের গাড়ী আমাকে রিসিভ করার কথা থাকলেও কাউকে প্লাকার্ড উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলোনা।যাত্রীদের ভীড়কমে গেলে লাগেজ ঠেলে খুঁজতে বেরোলাম নীল বৃত্তের মাঝখানে স্মল লেটারের সেই ‘আই’সাইনটাকে।যেটা বিদেশে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্হল।সারা ইউরোপেই এই চিহ্নটা ইনফরমেশন সেনিটারের প্রতীক।এরা সব রকমের সহায়তা করে টুরিস্টদের ।
অল্প দূরেই পাওয়া গেলো ইনফরমেশন সেন্টারের অফিসটা।রিসেপসানের মেয়েটাকে এড্রেসটা দেখাতেই চট জলদি যোগাযোগ করলো হোটেলের সাথে।সেখান থেকে জানানো হলো একটু দেরী হয়েঁছে গাড়ী পাঠাতে।আমি যেন ইনফরমেশন সেন্টারের সামনেই অপেক্ষা করি। হোটেলের লোকজন এসে আমাকে খুঁজে নেবে।
আমি কাউন্টারের মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে একটা বেন্চেএসে বসে পড়লাম।
শেরাটন হোটেলআমার পছন্দের একটি।দেশে এবং বিদেশে কোথাও গেলেই এদের আতিথ্য গ্রহন করি।গোল কোস্টে এদের দ্বায়িত্বহীনতা আমাকে পীড়া দিচ্ছিলো। আতিথ্যের পাশাপাশি এই হোটেলটির নিজস্ব প্রাইভেট বীচ ,হাঁটা দূরত্বে সী ওয়ার্ল্ড,শপিং সেন্টার ইত্যাদি আকর্ষন দেখেই বেছে নিয়েছিলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই হোটেলের গাড়ী এসে আমাকে পিক করলো।সাথে থাকা একজন তরুন দেরী হওয়ায় বার বার দু:খ প্রকাশ করে লাগেজ গুলি দ্রুত গাড়ীতে উঠিয়ে রওয়ানা হলো হোটেলের দিকে।
সমুদ্রের পাড়ঘেষে চমৎকার রাস্তা ধরে গাড়ী চলছিলো।আগেই জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়া অমন একটি দেশ যা ঘুরে দেখতে হলে অনেক সময় প্রয়োজন।সিডনি যেমন অস্ট্রেলিয়ার বানিজ্যিক রাজধানি,তেমনি মেলবোর্নকে হলো সাংস্কৃতিক রাজধানী আর পর্যটন রাজধানী বলা হয় এই গোল কোস্ট কে।শুধু বাইরের দেশ থেকে নয় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি প্রান্তের জনগন এখানে ছুটে আসে বিনোদনের জন্য।এখানে আছে অনেকগুলো ক্যাসিনো।যেজন্যঅনেকে একে অস্ট্রেলিয়ার লাসভেগাস বলেও আখ্যা দেয় ।গোল্ড কোস্টের সবচেয়ে বড়আকর্ষন এর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত।বড়বড়হোটেলগুলির বেশীরভাগ এই বীচের পাশে। বলা যায় বীচ কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গোল্ড কোস্টের পর্যটন ব্যবস্হা।
সমুদ্রের তীর ঘেষে তৈরি শেরাটন গ্রান্ড মিরেজ রিসোর্টিতে ২৯৫ টি রুম।অনেক উপরে একটা চমৎকার রুম দিলো আমাকে।সামনে ব্যালকনিতে আরামদায়ক চেয়ার পাতা শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখার জন্য।সামনের নীল সমুদ্র মুহুরতেই মনটা ভালো করে দিলো।
রুমে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম নীচে।লবিতেই অনেক টুরিস্ট কোম্পানীর অফিস।বড়বড়সাইন লাগানো অফিসের বাইরে।কোথায় কোন আকর্ষন,ফি কত ইত্যা্দি ইত্যাদি।হঁট এয়ার বেলুনে চড়া,হেলিকপ্টার ভ্রমন,জাহাজে চড়ে তিমি মাছ দর্শন,নগর পরিভ্রমন সহ আরো কত কি!
টিকিট কাটলাম জাহাজে চড়ে তিমি দর্শনের।সারা বছর পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াই অথচ তিনি দর্শন হয়নি।আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রে।এখানেও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেপ কডে তিমি দর্শনের ব্যবস্হা আছে ।কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও আর যাওয়া হয়নি।তাই এবার সূদুর অস্ট্রেলিঁয়ার এই গোল্ড কোস্টে এসে সে শখ মিটাতে হলো।
গাইডের সাথে একটু পরেই একটা মাঝারি আকারের জাহাজে চড়ে বসলাম। তিমি দেখতে হলে আমাদের যেতে হবে গভীর সমুদ্রে।কিছুটা ভয় কাজ করলেও এডভেন্চারের কাছে ভয় নতি স্বীকার করলো।জাহাজ ছুটে চললো গভীর সমুদ্র অভিমুখে।
জাহাজ ছাডতেই গাইড শুরু করলো তার বিদ্যা বিতরণ।অবশ্য রাগ করে লাভ নেই।এটাই তার চাকুরি ।এই গলা বাজি করেই তার অন্ন সংস্হান করতে হয়।তাছাড়া সবাই যে হোম ওয়ার্ক করে আসে তা নয়।তারা গন্তব্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকে।
গাইড জানালো ,তিমি মাছ মুখ বড় করে খাদ্য গ্রহন করে ।সে সময় মুখে ঢুকে পরা পানি দুই চোয়াল দিয়ে বের করে দেয়।সে পানি উপরে উঠে একটা বিশাল ফোয়ারার মত। গাইডের বলার পর প্যাক্টিকাল দৃশ্যটা দেখাতেই যেন আমাদের জাহাজের সামনে একটা বিশাল তিমি ভেসে উঠলো। সবাই ক্যামেরা নিয়ে শুরু করলো ক্লিক ক্লিক করে ছবি তোলা ।
জাহাজ আরো এগিয়ে গেলো সামনে।বেশ কয়েকটি ছোট ছোট তিমি দলের সাক্ষাত পেলাম আমরা।গাইড জানালো প্রমাণ আকারের একটা নীল তিমি প্রায় ৯৮ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। ওজন প্রায় ১৮০ টন। এখন পৃথিবীতে ১০ হাজারের বেশি নীল তিমি নেই বলে গবেষকদের দাবী।মোটামুটি তৃপ্তি করে তিমি দর্শন সমাপ্ত করে ফিরে এলাম হোটেলে।
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।আমাদের মাত ত দিনের গোল্ড কোস্ট ভ্রমনে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে কাল সকালে আমাদের তরুন গাইড আসলে তার সাথে পরামর্শ করেই বাকী পরিকল্পনাটা সাজাবো ভেবে নিয়ে রাতের মত হোটেলে ফিরে আসলাম।
সন্ধ্যার একটু পর বীচে খোলা আকাশের নীচে ডিনার করতে নেমে এলাম।আলোকোজ্জ্বল বীচে সারি সারি সীফুডের দোকান।স্কুইড ,লবস্টার,গ্রিলড স্নাপার ফিস,রকমারী ঝিনুক ,আরো কত কী!কিন্তু আমার সীফুডে এলার্জি হয়।তাই লোভ সংবরণ করে গ্রীন স্যালাড,ফিস স্যুপ ,আর চিংড়ীর একটা আইটেম নিয়ে ডিনার সেরে ফিরে এলাম হোটেলে।
ADVERTISEMENT