মেলবোর্নে আজ আমার তৃতীয় দিন। সকাল ৮টায় গাইড আমাদের তুলে নিয়েছে হোটেল থেকে।গাড়ী ছুটে চলেছে গ্রেট ওশান রোড ধরে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে গ্রেট ওসান ভ্রমনের একটা স্বপ্ন থাকে।আমিও সে স্বপ্ন পুরন করতে চলেছি ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।।১ম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে ফেরা সৈন্যরা ১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্য এটা তৈরি করে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের উদ্দেশ্য এটা উৎস্বর্গ করেন।এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড়স্মৃতি সৌধ। সবচেয়ে বড় ওয়ার মেমোরিয়াল।রাস্তাও যে স্মৃতিসৌধ হতে পারে এটা দেখার আগে আমার জানা ছিলোনা।
হাবিব রহমান: পৃথিবীটা যত বড় জীবন তত বড় নয়।তাই এই বিপুলা এই বিশ্বটাকে যত দ্রুত দেখার একটা প্রচেস্টা।জীবন সংগ্রাম টিকে থেকে একটু সময় বের করে ছুটে চলা দেশ থেকে দেশান্তরে।তৃতীয় বিশ্বের একটা সুবিধা বন্চিত দেশে জন্ম নেয়ার কারণে ইচ্ছে থাকলেও ভ্রমনের সুখটাকেপুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয়নি।একে তো ভিসা পাওয়ার জটিলতা ,দ্বিতীয়ত আর্থিক সক্ষমতা।জীবনের সূর্যটা যখন মধ্যগগনে আর ঠিক তখনই ভাগ্য দেবী সুযোগটা হাতের কাছে এনে দিলেন।আমেরিকার মত একটা দেশের শক্তিশালী পাসপোর্ট ভ্রমনের ইচ্ছেটাকে নতুন করে জাগিয়ে দিলো।তার পর থেকেই নিরন্তর ছুটে চলা।এ চলার শেষ কবে কে জানে!
মেলবোর্নে আজ আমার তৃতীয় দিন। সকাল ৮টায় গাইড আমাদের তুলে নিয়েছে হোটেল থেকে।গাড়ী ছুটে চলেছে গ্রেট ওশান রোড ধরে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে গ্রেট ওসান ভ্রমনের একটা স্বপ্ন থাকে।আমিও সে স্বপ্ন পুরন করতে চলেছি ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।।১ম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে ফেরা সৈন্যরা ১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্য এটা তৈরি করে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের উদ্দেশ্য এটা উৎস্বর্গ করেন।এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড়স্মৃতি সৌধ। সবচেয়ে বড় ওয়ার মেমোরিয়াল।রাস্তাও যে স্মৃতিসৌধ হতে পারে এটা দেখার আগে আমার জানা ছিলোনা।
পৃথিবী দুটো বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে।এতে নিহত হয়েছে বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ।কিন্তু কয়টা দেশ তাদের সৈন্যদের মনে রেখেছে।অনেক দেশেই বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে।কিন্তু অস্ট্রেলিঁয়া তাদের সৈনিকদের স্মরনে বিভিন্ন শহরে যে ভাবে ওয়ার মেমোরিয়াল করেছে তা চোখে পড়ার মত।সিডনি ওয়ার মেমোরিয়ালে আমি গিয়েছি।মনে হয়েছে কত দরদ দিয়ে যে এসব এয়ার মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছে যা সম্ভবত অন্য কোন দেশ করেনি।পাশাপাশি আমার নিজের দেশের কথা মনে আসে।৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা কয়েকলাখ মানুষকে হারিয়েছি।কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তাদের মনে রাখবে সে জন্য আমরা কতটুকু উদ্যোগ নিয়েছি।আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তথা বলেন কিন্তু বাস্তবে এই চেতনা তারা নিজেরা ধারন করেন কি!
বলছিলাম গ্রেট ওসেন রোড়ের কথা।এটি বিশ্বের সেরা দশটি সিনিক ভিউ রোড়ের একটি।৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির প্রতি বাঁকে বাঁকে যেন অবাক করা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।রাস্তায় প্রথমেই যে শহরটি চোখে পড়লো তার নাম টরকি।এটি মেলবোর্ন সিটি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে।ছিমছাম আর কোলাহলহীন এই শহরটি সেই ১৯০০ সাল থেকে একটি অন্যতম জনপ্রিয় অবকাশ কেন্দ্র।মেলবোর্ন থেকে বেরিয়ে পথে আমরা কোথাও থামিনি।ভোর সকালে বেরিয়েছি বলে গাড়ীতে ঘুমানোর সুযোগটা করে দিয়েছিলো গাইড।এখানে একটু ক্ষনের জন্য বিরতি।ব্রেকফাস্ট করে পাখীর চোখে গাড়ীতে বসেই শহরটি ‘চেখে দেখা,।
গাইড জানালোউপকুলীয় এই টরকি শহরটিতে ২০ টির বেশী সৈকত রয়েছে ।আর এ গুলি সার্ফিং এর জন্য আদর্শ।বিশ্ব বিখ্যাত জান্জাক আর বেলস সার্ফিং বীচের অবস্হান এই টর্কিতেই।আর এখানেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় সার্ফিং যাদুঘর।এই যাদুঘরটি শুধু অস্ট্রেলিয়ায় নয় সারা পৃথিবীতেউ বিখ্যাত।গত ১০০ বছরে অস্ট্রেলিয়াতে গড়ে উঠা বীচ আর সার্ফিং সংস্কৃতির নানা উপাদানে যাদুঘরটি সমৃদ্ধ।অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি সার্ফারদের অর্জন আর তাদের বোর্ডগুলি এই যাদুঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।গাইড জানালো এই যাদুঘরে প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ১২ অস্ট্রেলিয়ান ডলার আর ছোটদের ৮ ডলার।সময় স্বল্পতার জন্য সার্ফিং যাদুঘরটি ঘুরে দেখা সম্ভব হলোনা।জানা গেলো শীত গীস্ম সব ঋতুর রৌদ্রোজ্জল দিনেই সার্ফার আর প্যারাগ্লাইডারদের মেলা জমে এই বীচ গুলোতে।
গাইড আরো জানালো এই টরকীতেই রয়েছে সাগরের কোল ঘেঁষে ৪৪কিলোমিটার পায়ে হাঁটা পথ।পুরো পথটাই সমুদ্র পাশে থাকবে।আছে স্কাই ডাইভিংএর সূযোগ,সেরা রিসোর্ট ,আংগুর বাগানে বসে তাজা ওয়াইন পানের ব্যবস্হা।
একটা রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট সেরে আবার আমরা পথে নামলাম।সমুদ্রের গা ঘেঁসে রাস্তা।জল কোথাও নীল আর কোথাও সবুজ।রাস্তার পাশে সমুদ্র ঘেসা উঁচু নীচু পাহাড়।সেই পাহাড়ে হাইকিং করে উঠে শত শত পর্যটক সমুদ্র দেখছে।অনেকে আবার গাড়ী নিয়েও পাহাড়ে উঠছে।পাহাড়ের উপরে সমুদ্র ঘেসে পর্যটকদের সুবিধার জন্য কাঠ দিয়ে পাটাতন করে দেয়া হয়েঁছে ।নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রেলিংয়ের ব্যবস্হা।গাইড জানালো গ্রেট ওশান রোডে রাস্তায় অনেক লুক আউট পয়েন্ট রয়েছে যেখানে গাড়ী নিয়ে উঠে উপর থেকে সমুদ্র দর্শন করা যায়।আমাদের সময় কম তাই উপরে উঠা গেলোনা বলে মনে দু:খ বোধ রয়ে গেলো।তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আগামীতে আবার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের সূযোগ এলে বাড়তি কটা দিন বরাদ্দ রাখবো এই গ্রেট ওসান রোড বেশী সময় নিয়ে দেখারজন্য।
গ্রেট ওসান রোডে দেখার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো আইকনিক পিলার নামে খ্যাত টুয়েলভ অ্যাপস্টল।সমুদ্রের পাড়ে চুনা পাথরের বেশ কিছু অংশ সমুদ্রের ঢেউ,লবনাক্ততা আর প্রতিকুল আবহাওয়াঁয ক্ষয়ে গিয়ে অদ্ভুত আঁকার ধারন করেছে।হঠাৎ দেখলে মনে হবে কিছু লোকজন বা কয়েকটা উঁচু বাড়ি জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।
সাগরের ঢেউ আর লবণাক্ততার কারণে এই রকগুলোর ফরমেশন প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে
প্রতি বছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার করে। শুরুতে ১২টি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে ৮টি। ভবিষ্যতে এগুলোর অস্তিত্বও একসময় হুমকির মাঝে পড়বে। গাইড জানালো এই টুরিস্ট স্পটটিকে বহির্বিশ্বে আরও বেশি বেশি করে তুলে ধরার জন্য গত কয়েক বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে ক্যাডেল ইভান গ্রেট ওশান রোড রেস (সাইক্লিং)।
ভালো লাগা নাকি ভাষা দিয়ে স্পর্শ করা যায়না।তাই এই গ্রেট ওসান রোড়ের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়-বিশেষ করে আমার জন্য।একপাশে পাহাড়, একপাশে সমুদ্র,কখনো রেইন ফরেস্ট,কখনো বা ছবির মত শহর-বলা যায় এককথায় অপূর্ব।আঁকা বাঁকা বিপদ সঙ্কুল রাস্তা হলেওঙ্রাইভার তার নিপুন দক্ষতা নিয়ে গাড়ী ড্রাইভ করঁছিলো।রাস্তার পাশের সমুদ্রের সৌন্দর্যে মনোনিবেশ না করলে হয়তো ভয়ংকর রাস্তার ড্রাইভিং উদ্বিগ্ন করে তুলতো।
ওসেন রোড়ের এক জায়গায় ড্রাইভারকে গাড়ী থামাতে বল্লো গাইড।এখানে একটা জায়গা দেখালো সে-নাম দ্য গ্রেটো।পাহাড়ের ধাপ বেয়ে ১০০ গজের মত নীচে নেমে গেছে রাস্তা।দূর থেকে মনে হলো পাহাড়ের মাঝে একটা গর্ত।চারপাশে পাথর।সামনে ফ্রেম করা সমুদ্র ।দৃশ্যটা এত সুন্দর যে চোখ ফেরানো যায়না।
একটু পরে গাড়ী এসে থামলো আর একটা লুক আউটের সামনে।গাইড জানালো এর নাম-বার্ড রক লুক আউট।এখানেও পাটাতন নির্মান করে টুরিস্টদের বসার ব্যবস্হা করা হয়েছে।পাশে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রেলিং।দূর থেকে মনে হবে পাটাতনটা যেন সাগরের উপর ঝুলে রয়েছে।সাগরের জল এখানে খুবই স্বচ্ছ।পানির নীচের পাথর আর উদ্ভিদগুলো স্পস্ট দেখা যায়।গাইড জানালো অক্টোবর নভেম্ভর এর দিকে এই বার্ড রক থেকে তিমি মাছ দেখা যায়।সুর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্যও সারা বছর এখানে পর্যটকরা ভীড়জমায়।