হাবিব রহমান: গাড়ী ছুটে চলছে ক্যানবেরার রাজপথ ধরে।সূর্য তখন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের ব্লাক মাউন্টেনের আড়ালে।গাইড জানালো আমাদের আরো অনেক কিছুই দেখার বাকী।জাতীয় গ্রন্থাগার,বিজ্ঞান প্রযুক্তি যাদুঘর হাইকোর্ট সহ আরো নানা আকর্ষনীয় স্হাপনা।আজ যতগুলি দেখা যায় তা দেখে বাকীগুলো আগামীকাল।আসলে বিদেশে গেলে সময় সংক্ষেপের জন্য সব কিছু ঠিক মত দেখা যায়না বলে আক্ষেপ থেকেই যায়।
পথ চলতে চলতে গাড়ীর জানালা দিয়ে দেখছিলাম ঝকঝকে দোকানপাঠ,টলটলে পানির লেক,সবুজে ছাওয়া পার্ক ,কর্মব্যস্ত মানুষ ইত্যাদি।
গাড়ী এসে থামলো ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে।এটি নির্মিত হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নিহত সৈন্যদের স্মরণে।এটি স্মৃতিসৌধ,যাদুঘর ,চিত্র প্রদর্শনী এবং গবেষণা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত।১৯৪১ সালে যাদুঘরটি উদ্ধোধন করা হয়।স্মৃতিসৌধে আছে যুদ্ধে ব্যবহ্রত বিভিন্ন অস্র্র শস্রের প্রদর্শনী,নানা করুন এবং ভয়াবহ ইতিহাসের নমুনা।এটিতে ঢুকার জন্য কোন প্রবেশমূল্য নেই।
গাইড জানায়,প্রতিবছর এখানে পালিত হয় “ আনজাক ডে”।আনজাক অর্থ”The Australian & New zeland Army Corps এর সংক্ষিপ্তরুপ((ANZAC)প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৫ সালের ২৫এপ্রিল তুরস্কের গালিপোলিতে অবতরন করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেনাবাহিনী।এই দিনটিতে স্মরণ করা হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের যোদ্ধাদের যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।তাদের জন্য এখানে স্মরন সভা,প্যারেড ,ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের(১৯১৪-১৯১৮) শুরু এবং সমাপ্তির ১০০ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে গত চার বছর ধরে সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায় আনজাক দিবস পালন করা হয় আড়ম্বরতার সাথে।সূর্যোদয়ের আগে খুব ভোরে অস্ট্রেলিয়ানরা এই ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে এসে সমবেত হয়।শোক সংগীত গায় এবং প্রার্থনা করে।এ সময়ে তারা পুস্প স্তবক অর্পণ করে ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।সূর্যোদয়ের পর মার্চ ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
গাইড খুব আবেগের সাথে বলে-প্রত্যেক জাতির নিজেদের একটি গল্প থাকে।আর আনজাক ডে হলো আমাদের গল্প।
এরপর আমরা এলাম মাউন্ট এ্যান্সলি।উপরে উঠে পশ্চিমে তাকাতেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।দূরে ব্লাক মাউন্টেনের দিকে কিং এডোয়ার্ড ট্যারেস, শেষ মাথায় পুরনো সংসদ ভবন, দু পাশে টলটলে পানির লেক-যা শুধু চোখই জুড়ায় না মনও ভরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো।এবার ফেরার পালা।কাল ফিরে যাবো নিউইয়র্কে।সাথে নিয়ে যাবো অজস্র স্মৃতি ।আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের চেয়ে ৫২ গুন বড় দেশ এই অস্ট্রেলিয়া।কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটি।চমৎকার সুন্দর এই দেশটিতে হয়তো আবার কোনদিন আসা হবে। হয়তো বা না।ততদিন ভালো থেকো অস্ট্রেলিয়া।আপাতত বিদায়।