অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকুলের কাছে এই গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ পৃথিবীর সপ্তার্শ্চর্যের অন্যতম ।এখানে ২৯০০ পৃথক পৃথক প্রবাল প্রাচীর প্রায় ১৬০০ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে।প্রবাল,পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি অর্গানিজম দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। প্রাণী হলেও এরা চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে কোনো এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে এরা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।
এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।
যাচ্ছি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম , অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ দেখতে। রাস্তায় যাত্রা বিরতি ছিলো কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনে। স্হানীয় বাংলাদেশী আলমগীরকে সাথে নিয়ে বলা যায় সারা রাত চষে বেড়িয়েছি ব্রিসবেন শহরটি। ভোররাতে হোটেলে ফিরে একটু ঘুম।তারপর সকালে হোটেলেই নাস্তা সেরে আবার এয়ারপোর্টে।আলমগীরই আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়েছে।তাকে ধন্যবাদ জানালাম।আলমগী না থাকলে হয়তো এত অল্প সময়ে আমার ব্রিসবেন শহরটি ঘুরে দেখা সম্ভব হতোনা।রাতে মিটার অনুযায়ী তাকে ভাড়া দিতে পারলেও সকালে এই ট্রিপের জন্য কোন অর্থ নিতে রাজী হলোনা।প্রবাসে স্বদেশীরা যে কতো আপন হয় আলমগীর তা আবার প্রমান করলেন।
ব্রিসবেন থেকে হ্যামিল্টন আইল্যান্ড এয়ারপোর্টের দুরত্ব আকাশ পথে সময় লাগলো ১ঘন্টা ৫৫ মিনিট।সিটে বসে লান্চ খাওয়া শেষ না করতেই ঘোষনা এলো সিট বেল্ট বাঁধার।অর্থাৎ নামার সময় হয়ে গেছে।
এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি সারতে খুব বেশী বিলম্ব হয়নি।লাগেজ ঠেলে বাইরে বেরোতেই দেখলাম আমার নাম লেখা প্লাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছে রিফ ভিউ হোটেলের একজন কর্মী।হোটেল বুক করার সময়ই জেনেছিলাম তাদের এয়ার পোর্ট সাটল সার্ভিস আছে।তাদের আমার বিমানের সময়সূচি জানিয়েদিয়েছিলাম সে সময়েই।সঠিক সময়েই তারা এসে আমাকে তুলে নিলো। লাগেজেও আমার হাত লাগাতে হলোনা।হোটেলের ড্রাইভার এবং স্টাফ দুজনকেই এক নজরেই ভালো লাগলো।
৩৬৮ টি গেস্ট রুম নিয়ে আমার রিফ ভিউ হোটেলটি এক নজর দেখেই ভ্রমনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেলো।টপ ফ্লোরে রুম দিতে বল্লাম।খুব দ্রুত রিসিপসনের কাজ শেষ করে উঠে এলাম আমার রুমে।রুমের সামনে ব্যালকনি।সামনে সুনীল কোরাল সাগর মন ভালো করার জন্য যথেস্ট।রুমে হাত মুখ ধুয়ে জামা কাপড়ছেড়ে নীচে নামলাম ডিনারের জন্য।সারা শরীর ক্লান্তিতে ছেয়ে আছে।ডিনার সেরে রুমে এসে ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বিছানায়।সকাল ৮টায় গাইড এসে তুলে নেবে।এর আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে তৈরি হয়ে নিতে হবে আমাকে।
কাঁটায় কাঁটায় সকাল ৮ টায় গাইড এসে হোটেল লবি থেকে আমাকে তুলে নিলো।রিফে সাড়ে আট ঘন্টা কাটবে তার সাথে। স্মরকেলিং ছাড়াও অন বোর্ড বারবিকিউ লান্চ অন্তর্ভুক্ত এই ট্যুরে ।পৃথিবীর অনেক জায়গায় আমি স্মরকেলিং এ অংশ নিয়েছি।তাই এ নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই ।জাহাজ থেকে রিফের দৃশ্য অবলোকন করাই আমার বেশী আগ্রহ।
১০০ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে বোটটি ছাড়লো।বেশ বড়সড়বোট।একটু পরেই শুরু হলো গাইডের লেকচার।বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে গাইডের লেকচার শোনার খুব একটা প্রয়োজন হয়না।একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই সব তথ্য হাতের নাগালে এসে যায়।কিন্তু গাইডের ডিউটি তাকে পালন করতেই হয়। তাই অনিচ্ছা থাকলেও কান পাতলাম তার বক্তৃতায়।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকুলের কাছে এই গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ পৃথিবীর সপ্তার্শ্চর্যের অন্যতম ।এখানে ২৯০০ পৃথক পৃথক প্রবাল প্রাচীর প্রায় ১৬০০ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে।প্রবাল,পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি অর্গানিজম দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। প্রাণী হলেও এরা চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে কোনো এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে এরা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।
এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।
প্রবাল প্রাচীরগুলো দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এগুলো বাদামি, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, ইত্যাদি নানান রঙে রঙানো থাকে। একই প্রাচীরের আলাদা আলাদা অংশ আলাদা আলাদা আকারের হতে পারে, যেমন, হরিণের শিং, মৌমাছির চাক, মানুষের মস্তিষ্ক, ইত্যাদি। প্রবাল প্রাচীরের মূল উপাদান প্রবাল-ক্ষরিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। এছাড়াও প্রাচীরে বসবাসকারী অ্যালজি, স্পঞ্জ ও অন্যান্য জীবরা এতে নানান উপাদান যোগ করে এর বর্ণবৈচিত্রকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
কুইন্সল্যান্ড ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই রিফকে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের প্রতীক হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি শুধু একটি বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন স্হানই নয় পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক নিদর্শনও বটে।এখানে ৪০০ প্রজাতির কোরাল এবং ১৫০০ প্রজাতির মাছের আবাসস্হল রয়েছে। এছাড়াও ১৩৩ প্রজাতির হাঙর সহ অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক মৎস, অসংখ্য প্রজাতির জেলিফিশ, ঝিনুক, শামুক এবং ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতির তিমি মাছ ও ডলফিন রয়েছে৷
এছাড়াও গ্রেট ব্যারিয়ার জীববৈচিত্রের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত। বৈচিত্রপূর্ণ জীবের উপস্থিত ছাড়াও এখানে ডুগং বা সমুদ্রধেনু এবং সবুজ কচ্ছপের মত বিলুপ্তপ্রায় প্রানীর উপস্থিত রয়েছে। সমুদ্রধেনু হচ্ছে গাভীর মত দেখতে বিশাল এক ধরণের উদ্ভিদভোজী প্রাণী। যাদের অস্তিত্ব এবং উপস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার ছাড়া অন্য কোথাও নেই।
কিন্তু দূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে গত কয়েক দশক ধরে এই রিফের অবস্হান হুমকির মুখে।
গাইড আরো জানায় ১৯৮৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের অ্যাবট বন্দরটি কয়লা রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সম্প্রতি সরকার এটার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু এতে রিফের পরিবেশ আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।
আরো একটা আশংকার কথা জানালো গাইড। তা হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কচ্ছপরা বিভিন্ন দ্বীপের সৈকতের বালুতে যৌনক্রিয়া করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বালুর তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার৷ বড় বন্দরের কারণে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে কচ্ছপরা বিপদে পড়তে পারে।
গাইড জানায় ধারণা করা হয় ২০ হাজার বছর পূর্বে যখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের গঠন শুরু হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়া প্রায় ৬০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তবে এর গঠনপ্রণালী থেকে ধারনা করা হয়, প্রাচীরের একটা বৃহৎ অংশ কোন একসময় মহাদেশীয় দ্বীপ ছিল যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থান করলেও সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকলে মহাদেশীয় দ্বীপটি একসময় পানিতে ডুবে গিয়ে প্রবাল প্রাচীরের উপরে অবস্থান করে।
ইতিমধ্যে আমরা বোটে
করে প্রায় ঘন্টা খানিক সময় পার করেছি।যারা স্মারকলিংয়ে অংশ নেবে তারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দিচ্ছে গাইড।যেমন পানির নীচে কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া যাবেনা।নীচে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে কি সাইন দেখাতে হবে।অথবা অসুস্হ বোধ করলে উপরে উঠিয়ে নেবার জন্য কি সাইন দেখাতে হবে ইত্যাদি।
ডাইভিং ,স্মরকেলিং একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিনোদন।ইতোপূর্বে আমি বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমন করে এই বিনোদন গুলির স্বাদ নিয়েছি।তাই এবার তা থেকে বিরত থেকে কোরাল সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখাতেই মগ্ন থাকলাম।
একসময় অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ,পৃথিবীর একমাত্র প্রবাল প্রচারী ভ্রমন শেষ হলো।সারা বিশ্ব থেকে বছরে প্রায় ২০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।নিজকে ধন্য মনে হলো।পৃথিবীটা এত বড় যে এই ছোট জীবনে হয়তো আর এখানে আসা হবেনা।মহান সৃস্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম। কাল ফিরে যাবো সিডনিতে।
—-লেখক সিইও ,বাংলা ট্যুর ।