সিডনি শহরের রাস্তাগুলো সুপ্রশস্ত।পথচারীরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে।কোন রিক্সা বা স্কুটার জাতীয় যানবাহন চোখে পড়লোনা।ট্যাক্সি এবং বাস চলছে রাস্তায়।রাস্তাগুলোর নামকরণ বৃটিশ স্টাইলে বৃটিশ ব্যক্তিদের নামে।অবশ্য বলা যায় দেশটি গোড়াপত্তন বৃটিশদের হাতেই।জেমস কুক নামে এক নাবিকআঠার শতকের শেষভাগে ভাগ্যান্বেষনে এখানে পা রাখেন। তারপর জাহাজ ভরে এখানে পাঠানো হলো কিছু অপরাধি।ক্রমশ আদিবাসীদের কাঁছ থেকে পুরো দ্বীপ দেশটি কেড়ে নিলো তারা।এরপর এখানে ক্রমশ ভীড়করতে লাগলো সারা বিশ্বের উচ্তাভিলাষী কিছু মানুষ। বলা যায় এভাবেই উদ্বাস্তুরাই দখল করে নিলো দেশটি।
অস্ট্রেলিয়ার ছয়টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজধানি সিডনি সবচেয়ে প্রাচীন ,বৃহত্তম এবং ব্যস্ত শহর।এটি পৃথিবীর সুন্দর শহরগুলোর মধ্যে একটি । শহরটি প্রশান্ত মহাসাগরের কুল ঘেঁষে গড়ে উঠায় এর যে কোন স্হান থেকে সাগরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়।শহরের বিভিন্ন অংশে প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশ খাঁড়ির মধ্য দিয়ে শহরে ঢুকে পড়েছে। শহরের প্রায় ২০ কালোমিটার জুড়ে রয়েঁছে কমপক্ষে ৩০ টি সৈকত।
গতকাল দুপুরের পর সিডনি এসে স্হানীয় একজন বাংলাদেশীকে নিয়ে লক্ষ্যহীনভাবে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি।অফিসিয়ালি সিডনি ট্যুর আজ থেকে।এজন্য অনেকগুলো গাইডেড ট্যুর বুকিং করে এসেছি নিউইয়র্ক থেকে।এরই ধারাবাহিকতায় আজকে আমার সিডনির বিখ্যাত অপেরা হাউজ ট্যুর।
কাঁটায় কাঁটায় সকাল ৮ টায় গাইড এসে তুলে নিল আমার আবাসস্হল সিডনি হিলটন হোটেলের লবি থেকে।১৪ সিটের একটি লাক্সারি মার্সিডিজ হাইটপ ভ্যান।যে কয়েকটা সিট খালি ছিলো আমাদের হোটেল থেকে উঠা টুরিস্ট দিয়ে তা ভরে গেলো। গাড়ী ছুটে চল্লো সিডনি অপেরা হাউজের দিকে।
সিডনি শহরের রাস্তাগুলো সুপ্রশস্ত।পথচারীরা অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে জেব্রাক্রসিং দিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে।কোন রিক্সা বা স্কুটার জাতীয় যানবাহন চোখে পড়লোনা।ট্যাক্সি এবং বাস চলছে রাস্তায়।রাস্তাগুলোর নামকরণ বৃটিশ স্টাইলে বৃটিশ ব্যক্তিদের নামে।অবশ্য বলা যায় দেশটি গোড়াপত্তন বৃটিশদের হাতেই।জেমস কুক নামে এক নাবিকআঠার শতকের শেষভাগে ভাগ্যান্বেষনে এখানে পা রাখেন। তারপর জাহাজ ভরে এখানে পাঠানো হলো কিছু অপরাধি।ক্রমশ আদিবাসীদের কাঁছ থেকে পুরো দ্বীপ দেশটি কেড়ে নিলো তারা।এরপর এখানে ক্রমশ ভীড়করতে লাগলো সারা বিশ্বের উচ্তাভিলাষী কিছু মানুষ। বলা যায় এভাবেই উদ্বাস্তুরাই দখল করে নিলো দেশটি।
গাইড তার দিকে সকলের দৃস্টি আকর্ষন করলো।কিছু তথ্য জানালো সিডনি শহর সম্পর্কে।বল্লো ক্ষেত্রফলের হিসেবে সিডনি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শহরগুলোর একটি। সিডনি শহরের ক্ষেত্রফল ১৫৮০ বর্গকিলোমিটার। লন্ডন শহরের প্রায় সমান। আর নিউইয়র্ক শহরের দ্বিগুণ। নিউইয়র্ক শহরের ক্ষেত্রফল ৭৮০ বর্গকিলোমিটার। আমস্টার্ডাম শহরের ক্ষেত্রফল মাত্র ১৬৭ বর্গকিলোমিটার আর বিখ্যাত প্যারিসের মাত্র ১০৫ বর্গকিলোমিটার। সে তুলনায় সিডনি জায়ান্ট সিটি।এই শহরে মাত্র সাড়ে পঁয়ত্রিশ লাখ মানুষ বাস করে। সরকারি হিসাব মতে এখানে সাড়ে চৌদ্দ লাখ বাসা আছে। অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ঘনবসতি হলো সিডনিতে। তারপরও দেখা যাচ্ছে টোকিওর একজন বাসিন্দার চেয়ে ছয়গুণ বেশি জায়গা নিয়ে থাকে একজন সিডনিবাসী। সিডনি শহরে যারা থাকে তাদের প্রায় অর্ধেকেরই বয়স ২০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে। সিডনি যুবকদের শহর। সিডনি শহরে নাকি ১৮০টি দেশের নাগরিক বাস করে। ১৪০টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায় কথা বলে তারা। আর এজন্যই কালচারাল মেলটিং পট বলা হয় সিডনিকে ।
গাইড তার বক্তৃতা শেষ করলো ।বল্লো নামতে হবে গাড়ী থেকে।সামনে চেয়ে দেখলাম বিশ্বের অন্যতম নির্মান শৈলি সিডনি অপেরা হাউজ আমার সামনে।অসাধারন স্হাপত্যে নির্মিত অপেরা হাউজটি দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছিলো পানির উপর কয়েকটি সাদা নৌকার পাল ভাসছে।গাইড আমাদের অপেরা হাউজের বাইরে দাড়করিয়ে চলে গেলো টিকিট আনতে।
একটু পরই টিকিট নিয়ে ফিরে আসলোসে ।বল্লো অপেরা হাউজের ভেতরে ট্যুরটা শুরু হবে আরো আধা ঘন্টা পর।এটা তাদের নিজস্ব গাইডেড ট্যুর।আমাদের গাইড সাথে থাকবে বটে।তবে ট্যুর নিয়ন্ত্রন করবে এদের নিজস্ব গাইড।তাঁরাই সাথে নিয়ে ঘুরে দেখাবে।ভেতরের ট্যুর শেষ হলে আমাদের গাউড হারবার ব্রীজ সহ অন্যান্য দর্শনীয়স্হানগুলি ঘুরে দেখাবে।
হাতে থাকা স্বল্প সময়টা কাজে লাগানো গাইড।শুরু হলো এর বর্ননা।পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর স্হাপত্য সিডনি অপেরার অবস্হান বন্দরের বেনেলং পয়েন্টে।এটি মহাসাগরের একপ্রান্তে তৈরি করা হয়েছে যা দেখতে অনেকটা উপত্যকার মতো।১৯৫৬ সালে অপেরা হাউজটি নির্মাণের জন্য নকশা আহ্বান করা হয় ।সারা বিশ্ব থেকে ২৩৩ টি নকশা জমা পড়ে। এ নকশাগুলোর মধ্য থেকে সুইডেনের স্হপতি জন অ্যাডজেনের জিজাইনটি চুড়ান্ত হিসাবে ঘোষনা করা হয়।১৯৫৯ সালে এর নির্মান কাজ শুরু হয়ে শেষ হয়১৯৭৩ সালে।প্রায় ১০ হাজার কর্মী এর নির্মানে অংশ নেন।১.৬২ হেক্টর জায়গার উপর নির্মিত অপেরা হাউজটি লম্বায় ১৮৩ মিটার এবং প্রসঙ্গে ১২০ মিটার।উচ্চতা ৬৫ মিটার যা প্রায় ২৩ তলার সমান।অপেরা হাউজের ভেতরের অংশে রয়েছে ১০০০টি কক্ষ ২৬৯০ টি আসন সহ একটি কনসার্ট হল,পাঁচটি ড্রামা থিয়েটার এবং৩৯৮ সিটের প্লে হাউজ এবং ৪০০ লোক কাজ করার মত স্টুডিও ।কনফিগারেশন পরিবর্তন করে এইসব হলের আয়তন ও সিট ক্যাপাসিটি বাড়ানো বা কমানো যায়।প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই অপেরা হাউজটি পরিদর্শনে আসেন।অপেরা হাউজের ছাদ তৈরিতে ১০ লাখ টাইলস ব্যবহার করা হয়।এএর নির্মান বাবদ খরচ হয় ১০ কোটি ২০ লাখ ডলার। ১৯৭৫ সালের ২০ অক্টোবর রানী এলিজাবেথ অপেরা হাউজটি উদ্ধোধন করেন।২০০৭ সালে ইউনেস্কো এই স্হাপনাটিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ লিস্ট এর তালিকাভুক্ত করে।
একটু পর অপেরা হাউজের নিজস্ব গাইড এসে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলো।আমরা ছাড়াও এই গ্রুপে অন্য দেশ থেকে আসা কঁযেকজন পুরুষ মহিলা ছিলো।একটা রুম পেরিয়ে যাবার সময়ে রুমের কার্যক্রমের বর্ননা দিচ্ছিলো গাইড।তিনি জানান সিডনি অপেরা হাউজটি এখন সিডনির সংস্কৃতির অপরিহার্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিনের মঞ্চ নাটক বা দুনিয়াখ্যাত শিল্পীদের স্টেজ শো’র পাশাপাশি নববর্ষের প্রথম প্রহর উদযাপনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে সিডনির বেনেলং পয়েন্ট। এখানেই রয়েছে হারবার ব্রিজ। পুরো এলাকায় আলোকসজ্জার পাশাপাশি লেজার শো’র আয়োজন করা হয়। চীনা চন্দ্রবর্ষ উদযাপনেও এখানে লেজার শো’র আয়োজন করা হয়।
এসবের পাশাপাশি সিডনির সবচেয়ে উপাদেয় খাবারও পাওয়া যায় এখানকার রেস্টুরেন্টে। সিডনির সবচেয়ে নামী শেফরাই এখানে খাবার তৈরী করেন। এখানকার অপেরা কিচেনে রয়েছে মোট ৬০টি ডিশ।
বেনেলং পয়েন্টে নৌবন্দরের পাশে বসে খাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। নদীর পারে অপেরা হাউজের চারদিকেই আছে এই রেস্টুরেন্ট। হালকা খাবার, কফি, মিস্টান্ন সবকিছুরই ব্যবস্থা আছে সেখানে।
অপেরা হাউজের ভেতরটা ঘুরে দেখে আমরা বাইরে এলাম।আজকের মত ট্যুর এখানেই শেষ।কাল সকাল থেকে আবার অন্যান্য দর্শনীয় স্হানে নিয়ে যাবে গাইড।আমাদের গন্তব্য স্হল সিডনি হোটেল খুব দূরে নয়। তাই গাইডের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম হোটেলের দিকে।
ADVERTISEMENT