Categories
অষ্ট্রেলিয়া

ঘুরে দেখা অস্ট্রেলিয়া

হাবিবুর রহমান: অসাধারণ সৌন্দর্য আর বৈচিত্রময় দেশ অস্ট্রেলিয়া।এখানে এমন সব কিছু বিস্ময়কর স্থান আছে যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই।বলা হয় ,এখানে যত রকমের এ্যাডভেন্চার করা সম্ভব যে এক জীবনে শুধু অস্ট্রেলিয়ায় বেড়িয়েই কাটানো যাবে।একঘেয়েমি লাগার কোন সূযোগ নেই।

বহুদিন ধরে প্লান করছিলাম অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের ।কিন্তু ব্যাটে বলে এক হচ্ছিলোনা।তার কারণ ছিলো বহুবিধ।প্রথমত :অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন ব্যয় বহুল।দ্বিতীয়ত:অনেক লম্বা ফ্লাইট।নিউইয়র্ক থেকে সিডনি যেতেই সরাসরি ফ্লাইটেই সময় লাগে ২২ ঘন্টা। ব্যয় বহুল বলে অনেক পর্যটকই ইচ্ছে থাকলেও অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে নিরুৎসাহিত হন।বিশেষকরে বাংলাদেশী পর্যটকতো নয়ই।তা ছাড়া অনেক কম খরচে ইউরোপ ভ্রমন সহজ হয়।তাই গড়পড়তা পর্যটকের আকর্ষন অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউরোপ মুখী।

আমি ইতোমধ্যে বিশ্বের ৪টি মহাদেশের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমন করেছি।ট্যুরও অপারেট করছি বিভিন্ন দেশে।অস্ট্রেলিয়ার কোন শহরে ভ্রমন আমার জন্য চ্যালেন্জ হিসাবে বিবেচিত ছিলো।তাই হঠাৎ করে যখনকয়েকজন অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের প্রস্তাব করে বসলে তখন সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইলামনা।টিকিট কাটা হলো ইউনাইটেড এয়ারে।নিউজার্সির নিউয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু।লস এন্জেলেসে বিমান পরিবর্তন করে সোঝা সিডনি।সর্বমোট ২২ ঘন্টার ফ্লাইট।

দূর যাত্রার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই বিমানে গিয়ে বসলাম।কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি।টেক অফ করার আগ মুহুর্তে ঘোষনা এলো বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ।তাই বিমান উড়বেনা।নামতে হবে।সবার সাথে লাইন দিয়ে আবার গিয়ে লাউন্জে গিয়ে বসলাম।পাক্কা তিনঘন্টা পর ঘোষনা এলো বিমানে গিয়ে উঠার।এবার কোন সমস্যা ছাড়াই বিমান উড়লো আকাশে।আয়াস করে সিটে বসে গা এলিয়ে দিলাম।তখন কে জানতো আরো বিপত্তি অপেক্ষা তরে আছে সামনে!

লসএনজেলেসে বিমান থেকে নেমে লাউন্জে গিয়ে বসলাম কানেকটিং ফ্লাইটের অপেক্ষায়।এসময় ইউনাইটেড এয়ারের একজন সুদর্শন তরুণী এসে হাসি মুখেই দু:সংবাদটি জানালেন যে,আমাদের কানেকটিং ফ্লাইটটি সিডনীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকঘন্টা আগে।আমাদের রাত যাপন করতে হবে লস এন্জেলেসে।বিমান কর্তৃপক্ষ থাকার জন্য পাঁচতারকা হোটেল দেবে।খাওয়ার জন্য ভাউচার দেবে।হোটেলে যাওয়া আসার গাড়ী দেবে ইত্যাদি এন্তার সব সূযোগ।তবে সোজা কথা আজ আর সিডনি যাওয়া হচ্ছেনা।

মনটা শুরুতেই দমে গেলো।তবে করার কিছুই নেই।ইউনাইটেড এয়ারের দেয়া গাড়ীতে গিয়ে বসলাম।কর্তারা জানালেন,লাগেজের জন্য ভাবতে হবেনা।এটা যথাসময়ে হোটেলে পৌছে যাবে।

লস এন্জেলেস এয়ারপোর্ট সংলগ্ন হায়াত রিজেন্সী হোটেলে থাকার ব্যবস্হা হলো।এটি আমার প্রিয় হোটেলের একটি।হোটেলেই খাবার ব্যবস্হা।যত্ন আত্তিরের কোন ত্রুটি রাখেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।তবু মনটা খচ খচ করতে লাগলো আগামীকাল ফ্লাইটের স্কাজুয়েল কখন হয় এই ভেবে। সকালে ব্রেক ফাস্টের সময় দেখা মিললো ইউনাইটেড এয়ারের আরএক কর্মকর্তার।এবারও এক সুহাসিনি নারী তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জানালেন আমাদের আরো দু’রাত কাটাতে হবে এখানে ।কারণ আগামী দুদিন সিডনির উদ্দেশে ইউনাইডেড এয়ারের কোন ফ্লাইট নেই।তার কথা শুনে মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কারন অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে পুরো সময়টাই আমার টাইট স্কাজুয়েল।হোটেল এবং ট্যুর বুক করা প্রতিদিন।রিটার্ন টিকিটও কাটা ।দুদিন সময় যদি বাদ দিতে হয় তাহলে আমার নিউজিল্যান্ড ট্যুর বাদ দিতে হবে।আমার গ্রুপের কাছেই বা কি জবাব দেবো ভেবে পাগল হবার অবস্হা।

একজন পেশাদার টুরিস্ট এবং ট্যুর অপারেটর হিসাবে আমার প্রশিক্ষণ বলে দিলো আমাকে মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করতে হবে।গরম করলে চলবেনা।তাই শান্তভাবে উঠে দাঁড়িয়ে মহিলার গিয়ে আমার সমস্যার কথা জানালাম।বল্লাম ,আমি যদি আজকে সিডনির কোন ফ্লাইট না পাই তাহলে আমাকে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।আর আমার ট্যুর গ্রুপটাও খুব ছোট নয়।শেষে আরো শান্তভাবে জানালাম আমার ক্ষতির ঝাপটাটা শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারের উপরও এসে পড়বে -যেন সে কথাটাও তারা মনে রাখেন ।

আমার শেষ কথাটা যেন মহিলা গুরুত্ব দিলেন।তিনি বলে গেলেন তাঁর সুপার ভাইজারের সাথে কথা বলে খুব দ্রুতই আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

কাঙ্খিত ফোনটা এলো পাক্কা দেড়ঘন্টা পর।মহিলা জানালেন,সবার নয় শুধু আমার গ্রুপের সিডনি যাবার ব্যবস্হা করেছেন অন্য একটি এয়ার লাইনে।তবে আমাকে একটু ঘুরে যেতে হবে সিডনি ।কোয়ান্টাস এয়ারের বিমানটি আমাদের প্রথমে নিয়ে যাবে মেলবোর্ন ।পরে বিমান পাল্টিয়ে আমাদের যেতে হবে সিডনি।আগের ফ্লাইটে যেতে পারলে আমরা বিকালে সিডনি পৌঁছাতেই পারতাম।এখন পৌঁছাতেই হবে পরদিন সকালে।সিডনি হিলটনে আমাদের হোটেল বুকিং ছিলো।তা মিস হবে ।বাদ যাবে হিলটনের মুখরোচক ব্রেক ফাস্ট।সে যাক কিছু ক্ষতি হলেওতা ছিলো মন্দের ভালো।তাই আল্লাহর কাছে শোকরানা জানালাম।ফ্লাইটের বেশী বাকী নেই ।তাই দ্রুত লাগেজ গোছাতে রুমে ফিরে গেলাম।

সঠিক সময়েই লস এন্জেলেস বিমান বন্দর ত্যাগ করলো কোয়ান্টাসের বিমানটি।নিরাপদ এয়ারলাইন্সের প্রথম বিশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাস।বিশ্বব্যাপি মোট ৪০৫টি এয়ারলাইন্সকে জরিপ করে তৈরি করা হয় এই তালিকা।মোট ১২ টি বৈশিস্টকে হিসেব করে এই মূল্যায়ন করা হয়।বিধ্বস্ত ও দূর্ঘটনার রেকর্ড,বিমানের বয়স ,কেমন লাভ করছে ,সেবা এসব বিবেচনায় আনা হয়।এ জরিপটি পরিচালনা করে এয়ারলাইন্স রেটিংস ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট ।

ফ্লাইট মিস করায় কোয়ান্টাস এয়ারের সুযোগ পাওয়ায় ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলাম।ফ্লাইট সিডিউল ওলট পালট হওয়ায় মেন্টালি খুব আপসেট ছিলাম।আমার কোন্পানির সুনামের ব্যাপারটিও এর সাথে জড়িত ছিলো।তারকা হোটেলে রাত যাপন করলেও ভালো ঘুম হয়নি।তাই বিমানে উঠার পর যেন একটা ক্লান্তি এসে ভর করলো ।সহজেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *