Categories
অষ্ট্রেলিয়া

গোল্ড কোস্ট -অস্ট্রেলিয়ার লাসভেগাস

গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।

 

হাবিব রহমান: মেলবোর্নের এভালন এয়ারপোর্ট থেকে গোল্ড কোস্টের বিমান ছাড়লো কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০.১০ মিনিটে।টানা ২ ঘন্টার উড়ানে আমাদের যখন কোলানগাটা এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো তখন সময় বারোটা বেজে দশ। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলীয় শহর। শহরটি রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনের প্রায় ৬৬ কিলোমিটার (৪১ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্যের উত্তর সীমান্তের কাছেই অবস্থিত। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার ৬ষ্ঠ বৃহত্তম শহর ও এটি অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম অ-রাজধানী শহর এবং কুইন্সল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর

অনুসন্ধানকারী জন অক্সলি দ্বারা সমুদ্র সৈকতে আবিষ্কারের আগে ১৮২৩ সাল পর্যন্ত গোল্ড কোস্ট অঞ্চলটি ইউরোপীয়দের মধ্যে উপেক্ষিত ছিল। এই অঞ্চল থেকে লাল সিডারের সরবরাহ ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সকলকে আকর্ষণ করে। পরে ১৮৮৫ সাল থেকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে গোল্ড কোস্ট খ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমানে শহরটি ব্রিসবেনের পরে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল এলাকা। গোল্ড কোস্ট তার চমতকার জলবায়ু সাথে পর্যটন গন্তব্য ,সার্ফিং সৈকত, সুউচ্চ ভবন,থিম পার্ক, নাইটলাইফ, এর জন্য অধিক পরিচিত।শহরটি ২১ তম কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করেছিল, যা ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলেছিল।
এয়ারপোর্টের ঝামেলা মিটতে বেশী সময় লাগলোনা।তবে বাইরে আসার পরই বাঁধলেী বিপত্তি।হোটেলের গাড়ী আমাকে রিসিভ করার কথা থাকলেও কাউকে প্লাকার্ড উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলোনা।যাত্রীদের ভীড়কমে গেলে লাগেজ ঠেলে খুঁজতে বেরোলাম নীল বৃত্তের মাঝখানে স্মল লেটারের সেই ‘আই’সাইনটাকে।যেটা বিদেশে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্হল।সারা ইউরোপেই এই চিহ্নটা ইনফরমেশন সেনিটারের প্রতীক।এরা সব রকমের সহায়তা করে টুরিস্টদের ।
অল্প দূরেই পাওয়া গেলো ইনফরমেশন সেন্টারের অফিসটা।রিসেপসানের মেয়েটাকে এড্রেসটা দেখাতেই চট জলদি যোগাযোগ করলো হোটেলের সাথে।সেখান থেকে জানানো হলো একটু দেরী হয়েঁছে গাড়ী পাঠাতে।আমি যেন ইনফরমেশন সেন্টারের সামনেই অপেক্ষা করি। হোটেলের লোকজন এসে আমাকে খুঁজে নেবে।
আমি কাউন্টারের মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে একটা বেন্চেএসে বসে পড়লাম।
শেরাটন হোটেলআমার পছন্দের একটি।দেশে এবং বিদেশে কোথাও গেলেই এদের আতিথ্য গ্রহন করি।গোল কোস্টে এদের দ্বায়িত্বহীনতা আমাকে পীড়া দিচ্ছিলো। আতিথ্যের পাশাপাশি এই হোটেলটির নিজস্ব প্রাইভেট বীচ ,হাঁটা দূরত্বে সী ওয়ার্ল্ড,শপিং সেন্টার ইত্যাদি আকর্ষন দেখেই বেছে নিয়েছিলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই হোটেলের গাড়ী এসে আমাকে পিক করলো।সাথে থাকা একজন তরুন দেরী হওয়ায় বার বার দু:খ প্রকাশ করে লাগেজ গুলি দ্রুত গাড়ীতে উঠিয়ে রওয়ানা হলো হোটেলের দিকে।
সমুদ্রের পাড়ঘেষে চমৎকার রাস্তা ধরে গাড়ী চলছিলো।আগেই জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়া অমন একটি দেশ যা ঘুরে দেখতে হলে অনেক সময় প্রয়োজন।সিডনি যেমন অস্ট্রেলিয়ার বানিজ্যিক রাজধানি,তেমনি মেলবোর্নকে হলো সাংস্কৃতিক রাজধানী আর পর্যটন রাজধানী বলা হয় এই গোল কোস্ট কে।শুধু বাইরের দেশ থেকে নয় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি প্রান্তের জনগন এখানে ছুটে আসে বিনোদনের জন্য।এখানে আছে অনেকগুলো ক্যাসিনো।যেজন্যঅনেকে একে অস্ট্রেলিয়ার লাসভেগাস বলেও আখ্যা দেয় ।গোল্ড কোস্টের সবচেয়ে বড়আকর্ষন এর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত।বড়বড়হোটেলগুলির বেশীরভাগ এই বীচের পাশে। বলা যায় বীচ কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গোল্ড কোস্টের পর্যটন ব্যবস্হা।
সমুদ্রের তীর ঘেষে তৈরি শেরাটন গ্রান্ড মিরেজ রিসোর্টিতে ২৯৫ টি রুম।অনেক উপরে একটা চমৎকার রুম দিলো আমাকে।সামনে ব্যালকনিতে আরামদায়ক চেয়ার পাতা শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখার জন্য।সামনের নীল সমুদ্র মুহুরতেই মনটা ভালো করে দিলো।
রুমে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম নীচে।লবিতেই অনেক টুরিস্ট কোম্পানীর অফিস।বড়বড়সাইন লাগানো অফিসের বাইরে।কোথায় কোন আকর্ষন,ফি কত ইত্যা্দি ইত্যাদি।হঁট এয়ার বেলুনে চড়া,হেলিকপ্টার ভ্রমন,জাহাজে চড়ে তিমি মাছ দর্শন,নগর পরিভ্রমন সহ আরো কত কি!
টিকিট কাটলাম জাহাজে চড়ে তিমি দর্শনের।সারা বছর পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াই অথচ তিনি দর্শন হয়নি।আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রে।এখানেও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেপ কডে তিমি দর্শনের ব্যবস্হা আছে ।কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও আর যাওয়া হয়নি।তাই এবার সূদুর অস্ট্রেলিঁয়ার এই গোল্ড কোস্টে এসে সে শখ মিটাতে হলো।
গাইডের সাথে একটু পরেই একটা মাঝারি আকারের জাহাজে চড়ে বসলাম। তিমি দেখতে হলে আমাদের যেতে হবে গভীর সমুদ্রে।কিছুটা ভয় কাজ করলেও এডভেন্চারের কাছে ভয় নতি স্বীকার করলো।জাহাজ ছুটে চললো গভীর সমুদ্র অভিমুখে।
জাহাজ ছাডতেই গাইড শুরু করলো তার বিদ্যা বিতরণ।অবশ্য রাগ করে লাভ নেই।এটাই তার চাকুরি ।এই গলা বাজি করেই তার অন্ন সংস্হান করতে হয়।তাছাড়া সবাই যে হোম ওয়ার্ক করে আসে তা নয়।তারা গন্তব্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকে।
গাইড জানালো ,তিমি মাছ মুখ বড় করে খাদ্য গ্রহন করে ।সে সময় মুখে ঢুকে পরা পানি দুই চোয়াল দিয়ে বের করে দেয়।সে পানি উপরে উঠে একটা বিশাল ফোয়ারার মত। গাইডের বলার পর প্যাক্টিকাল দৃশ্যটা দেখাতেই যেন আমাদের জাহাজের সামনে একটা বিশাল তিমি ভেসে উঠলো। সবাই ক্যামেরা নিয়ে শুরু করলো ক্লিক ক্লিক করে ছবি তোলা ।
জাহাজ আরো এগিয়ে গেলো সামনে।বেশ কয়েকটি ছোট ছোট তিমি দলের সাক্ষাত পেলাম আমরা।গাইড জানালো প্রমাণ আকারের একটা নীল তিমি প্রায় ৯৮ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। ওজন প্রায় ১৮০ টন। এখন পৃথিবীতে ১০ হাজারের বেশি নীল তিমি নেই বলে গবেষকদের দাবী।মোটামুটি তৃপ্তি করে তিমি দর্শন সমাপ্ত করে ফিরে এলাম হোটেলে।
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।আমাদের মাত ত দিনের গোল্ড কোস্ট ভ্রমনে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে কাল সকালে আমাদের তরুন গাইড আসলে তার সাথে পরামর্শ করেই বাকী পরিকল্পনাটা সাজাবো ভেবে নিয়ে রাতের মত হোটেলে ফিরে আসলাম।
সন্ধ্যার একটু পর বীচে খোলা আকাশের নীচে ডিনার করতে নেমে এলাম।আলোকোজ্জ্বল বীচে সারি সারি সীফুডের দোকান।স্কুইড ,লবস্টার,গ্রিলড স্নাপার ফিস,রকমারী ঝিনুক ,আরো কত কী!কিন্তু আমার সীফুডে এলার্জি হয়।তাই লোভ সংবরণ করে গ্রীন স্যালাড,ফিস স্যুপ ,আর চিংড়ীর একটা আইটেম নিয়ে ডিনার সেরে ফিরে এলাম হোটেলে।

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

মনোরম ও শান্ত শহর মেলবোর্ন

এর নাম স্রাইন অব রিমেম্বারেস। একটি ছোট্ট পাহাড়ের উপর নির্মিত পিরামিড আকৃতির এই শহীদ মিনারটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই মিনারটি ১৯২৭ সালের ১৯ নভেম্ভর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং কাজ শেষ হয় ১৯৩৪ সালে। প্রতি বছর ১১নভেম্বর শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে এখানে এসে সবাই সমবেত হন।ঐ দিন একটা অন্য রকম অনুষ্ঠান হয় এখানে ।শহীদ মিনারটির ভেতরে একটি বেদীর উপর লিখা আছে “লাভ” শব্দটি।ছাদের একটি ছিদ্র দিয়ে এই লাভ শব্দটির উপর সূর্যালোক প্রক্ষেপণ করা হয়। এই আলোতে ঝলমল করে উঠে লাভ বা ভালোবাসা শব্দটি। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের এই বিশেষ দিনটিতে এই ভাবেই স্মরণ করা হয়।

 

হাবিব রহমান: গাইড জানালো অস্ট্রেলিয়া একটা বিরাট দেশ। অসাধারণ সব আউটডোর নিয়ে ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝে জেগে থেকে তার আদিম রুপ ও সুন্দরের মিলিত ছন্দে। সারা বছর পর্যটকদের আনন্দ দিয়ে আসছে। এখানে দেখারও রয়েছে অনেককিছু। কেউ যদি ১৫ থেকে ২০ দিনের একটা ট্যুর প্রোগ্রাম নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ঘুরতে আসে তাহলেই মোটামুটিভাবে দেশটি ঘুরে দেখা সম্ভব।আমাদের হাতে এত সময় নেই।তাই পাখীর চোখে যতটা সম্ভব দেখে নেয়ার চেস্টা।

আজ আমরা দেখতে এসেছি কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেট।অনেকে হয়তো জানতে চাইবেন মার্কেট তো মার্কেটই তা আবার দেখার কি আছে!আছে-আর আছে বলেই গাইড আমাদের মার্কেটই দেখাতে নিয়ে এসেছে। এক কথায় বলতে গেলে পৃথিবীর সব মার্কেটই কমবেশী একই রকম শুধুমাত্র পণ্যের রকম ফের ছাড়া।কিন্তু কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেটের রয়েছে একটা আলাদা বিশেষত্ব।এটা দক্ষিণ গোলার্ধের অন্যতম বড়একটা ওপেন এয়ার মার্কেট।আর রাতের মার্কেট।মেলবোর্নের এই বাজারটি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত”ভিক্টোরিয়া নাইট মার্কেট”নামে চলে।বুধবারে এর নামকরন হয়-সুজুকি নাইট মার্কেট।৬০০ এর বেশী দোকান সমৃদ্ধ এই ওপেন এয়ার মার্কেটে তাজা এবং সুস্বাদু ফল,সব্জি,খাবার দাবার ছাড়াও বার বিনোদন সহ নানা ব্যবস্হা রয়েছে।

দিন শেষে গোধূলির হাত ধরে যখন অন্ধকার নেমে আসে তখনই শুরু হয় এই বাজারের কেনাবেচা ।তবে এই নৈশ বাজার যে শুধু মেলবোর্নেই আছে তা নয় বিশ্বের অন্যান্য দেশেও আছে।মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আমি এ ধরনের বাজার দেখেছি।কুয়ালালামপুরের পেটালিং স্ট্রীট এবং লোরং টুংকু আবদুর রহমান নামক স্হানে এধরনের নৈশ বাজার রয়েছে।এরমধ্যে লোরং য়ে স্হানীয় মুসলমানদের ব্যবহার্য জামা কাপড় এবং পেটালিংয়ে সব ধরনের পণ্য বিক্রি হতে দেখেছি।

সিংগাপুরের নৈশ বাজারটির নাম টেক্কা মার্কেট ।ওখানেও যাবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।ওখানে প্রসাধনী,অলংকার, তাজা শাক শব্জী, মাছ মাংস ,ফুল ফল সবই বিক্রি হয়।এই বাজারটির আরেকটা বিশেষত্ব হলো তাজা জুঁই ফুল বিক্রয় হয় ওখানে ।সন্ধ্যার পর জুঁই ফুলের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠে এই মার্কেটের আশ পাশ।

আমার ঘুরে দেখা অন্য নৈশ মার্কেটের মাঝে আছে ফ্রান্সের অদ্রিক্স নাইট মার্কেট।এই বাজারটির অন্যতম আকর্ষন হলো আন্চলিক খাবার, মদ,ভেড়ার মাংস, তাজা আখরোট ইত্যাদি।তাই আমার দেখা বিশ্বের অন্যান্য নৈশ মার্কেটের সাথে তুলনা করে দেখার জন্যই কুইন ভিক্টোরিয়া মার্কেটে আমার আগমন।

গাইড জানায়,১৯ শতকে ভিক্টোরিয়ান শৈলিতে ৭ হেক্টর জায়গার উপর এই মার্কেট টি নির্মিত হয়। প্রচলিত আছে বাজারটি একটি। পুরাতন কবরস্থানের উপর নির্মিত। বাজারের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ সরবরাহ আসে সৌর প্যানেল থেকে। ১২০ বছর যাবত এভাবেই বাজারটি বিদ্যুতায়িত হয়ে আসছে।

যারা শুধু বাজারটি দেখতে আসেন,তাদের জন্য রয়েছে ২ঘন্টার একটি ট্যুর প্যাকেজ। স্হানীয় গাইড বাজারটি ঘুরে ঘুরে দেখায়।বাজারে পন্য সামগ্রীর মূল্য খুবই কম।বাজারটি বন্ধ হবার ২ ঘন্টা আগে সব পণ্য সামগ্রীতে ছাড়দেয়া হয়।স্হানীয় বাসিন্দাদের তৈরি নানারকম হস্ত শিল্প সামগ্রী এখানে কিনতে পাওয়া যায়।

এবারে আমাদের দর্শনীয় তালিকায় মেলবোর্নের শহীদ মিনার। না,এটা বাংলাদেশীদের নির্মিত কোন শহীদ মিনার নয়। এর নাম স্রাইন অব রিমেম্বারেস। একটি ছোট্ট পাহাড়ের উপর নির্মিত পিরামিড আকৃতির এই শহীদ মিনারটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে এই মিনারটি ১৯২৭ সালের ১৯ নভেম্ভর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় এবং কাজ শেষ হয় ১৯৩৪ সালে। প্রতি বছর ১১নভেম্বর শহীদদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে এখানে এসে সবাই সমবেত হন।ঐ দিন একটা অন্য রকম অনুষ্ঠান হয় এখানে ।শহীদ মিনারটির ভেতরে একটি বেদীর উপর লিখা আছে “লাভ” শব্দটি।ছাদের একটি ছিদ্র দিয়ে এই লাভ শব্দটির উপর সূর্যালোক প্রক্ষেপণ করা হয়। এই আলোতে ঝলমল করে উঠে লাভ বা ভালোবাসা শব্দটি। দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের এই বিশেষ দিনটিতে এই ভাবেই স্মরণ করা হয়।

স্মৃতি সৌধের পাশেই স্হাপন করা আছে একটি স্তম্ভ।যেখানে জ্বলছে শিখা অনির্বাণ।গাইড জানায় এখানে সারা বছর পর্যটকের সমাগম ঘটলেও মেলবোর্নবাসীরা এখানে আসেন শুধু এই একটি দিনেই।গাইড আরো জানায় এই শহীদ মিনারটি তৈরি করতে সরকারকে অনেক ঝক্কির মুখে পড়তে হয়।খৃস্টান পাদ্রীরা এর নির্মান বিরোধিতা করে।তাদের বিরোধিতার কারণ ছিলো স্নৃতি সৌধের ডিজাইনটির কোথাও ক্রুশ বা কোন ধর্মীয় চিহ্ন রাখা হয়নি। পরে অবশ্য আলাপ আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা হয়।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য রয়েল বোটানিক্যাল গার্ডেন।৯৪ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই বাগানটিতে প্রতিবছর গড়ে ২ মিলিয়ন পর্যটক বেড়াতে আসেন।গাইড জানায় প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির গাছ গাছড়া আছে এই বাগানে।প্রায় তিনশো বছরের পুরনো একটি ইউক্যালিপটাস গাছ আছে এই এখানে নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে পৃথক হবার সময়ে এই গাছের নীচে দাঁড়িয়েই স্বতন্ত্র ভিক্টোরিয়া রাজ্যের ঘোষনা দেয়া হয়েছিলো।

পরবর্তী গন্তব্যে যাবার জন্য গাড়ীতে গিয়ে বসলাম।তরুণ গাইডের বক্তৃতা শুনছিলাম বসে বসে।১৮৩৭ সালে তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইলিয়াম ল্যাম্ব মেলবোর্নের নামানুসারে এই শহরটির নাম রাখা হয় মেলবোর্ন ।ছয় বাই

চার ব্লকের ছোট্ট শহরটির জনসংখ্যা ছিলো সেদিন মাত্র ১৭৭জন।১৯৫১ সালে হঠাৎ করেই সোনার খনি আবিস্কার হয় এখানে।তারপর এই ছোট্ট শহরটি ধনী শহরের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলে।সোনার টাকায় চেহারা পাল্টে যায় শহরের।শুরুতেই তারা শহরটির যে অবকাঠামো নির্মান করেন তার উপরেই গড়ে উঠে আজকের এই মেলবোর্ন শহর।

গাড়ী এসে থামলো মেলবোর্ন পার্লামেন্ট হাউজের সামনে। গাইডের অনুসরণ করে আমরা এসে থামলাম ছোট্ট বাগানঘেরা লাল টালির ছাদের একটা কুটিরের সামনে। গাইড জানালোএটা ক্যাপ্টেন জেমস কুকের স্মৃতি বিজরিত কুটির -কুকস কটেজ। ক্যাপ্টেন জেমস কুকের কথা ইতিহাসে অনেক পড়েছি। ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ারে জন্ম নেয়া কুক ছিলেন বৃটিশ রাজকীয় নৌ বাহিনীর একজন নাবিক। ১৭৭২ সাল থেকে ১৭৭৩ সাল পর্যন্ত এক অভিযানে তিনি সমগ্র অস্ট্রেলিয়া আবিস্কার করে ইতিহাসে অমর হয়ে রয়েছেন।

গাইড জানালো এই কুটিরটাকে ইংল্যান্ড থেকে তুলে এনে এখানে বসিয়ে দেয়া হয়েঁছে । ১৯৩৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া রাজ্যের শতবর্ষ পালিত হয়। মেলবোর্নের বিশিস্ট ব্যবসায়ী রাসেল গ্রিম এয়েড চাইছিলেন ভিক্টোরিয়ান সরকারকে কিছু একটা উপহার দিতে । ইংল্যান্ডে ক্যাপ্টেন কুকের বাড়ীটি নিলামে বিক্রি হচ্ছে জানতে পেরে তিনি তা কিনে নেন। মেলবোর্নের একদল স্থপতি কে সাথে নিয়ে ইট কাঠ টালি খুলে ২৫৩ টি বড়বাক্স আর ৪০ টি ব্যারেল ভর্তি করে মেলবোর্নে নিয়ে আসেন এই কুকস কটেজ।১৯৩৪ সালের ১৫ অক্টোবর রাসেল গ্রিম ওয়েড কটেজটি আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেন মেলবোর্নের মেয়রের হাতে।

দিনের আলো ক্রমেই ফুরিয়ে আসছিলো।আর সারাদিন ঘুরে ঘুরে সবাই ছিলাম ক্লান্ত।আমাদের মুখের ভাষাটা যেন পড়তে পারছিলেন তরুন অথচ অভিজ্ঞ গাইড।তাই গাড়ী ঘুরিয়ে নিয়ে রওয়ানা হলো আমাদের হোটেলের দিকে।

—লেখক,সাংবাদিক, সিইও বাংলা ট্যুর।

 

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

প্রকৃতির বিস্ময় গ্রেট ওসান রোড

মেলবোর্নে আজ আমার তৃতীয় দিন। সকাল ৮টায় গাইড আমাদের তুলে নিয়েছে হোটেল থেকে।গাড়ী ছুটে চলেছে গ্রেট ওশান রোড ধরে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে গ্রেট ওসান ভ্রমনের একটা স্বপ্ন থাকে।আমিও সে স্বপ্ন পুরন করতে চলেছি ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।।১ম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে ফেরা সৈন্যরা ১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্য এটা তৈরি করে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের উদ্দেশ্য এটা উৎস্বর্গ করেন।এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড়স্মৃতি সৌধ। সবচেয়ে বড় ওয়ার মেমোরিয়াল।রাস্তাও যে স্মৃতিসৌধ হতে পারে এটা দেখার আগে আমার জানা ছিলোনা।

 

হাবিব রহমান: পৃথিবীটা যত বড় জীবন তত বড় নয়।তাই এই বিপুলা এই বিশ্বটাকে যত দ্রুত দেখার একটা প্রচেস্টা।জীবন সংগ্রাম টিকে থেকে একটু সময় বের করে ছুটে চলা দেশ থেকে দেশান্তরে।তৃতীয় বিশ্বের একটা সুবিধা বন্চিত দেশে জন্ম নেয়ার কারণে ইচ্ছে থাকলেও ভ্রমনের সুখটাকেপুরোপুরি উপভোগ করা সম্ভব হয়নি।একে তো ভিসা পাওয়ার জটিলতা ,দ্বিতীয়ত আর্থিক সক্ষমতা।জীবনের সূর্যটা যখন মধ্যগগনে আর ঠিক তখনই ভাগ্য দেবী সুযোগটা হাতের কাছে এনে দিলেন।আমেরিকার মত একটা দেশের শক্তিশালী পাসপোর্ট ভ্রমনের ইচ্ছেটাকে নতুন করে জাগিয়ে দিলো।তার পর থেকেই নিরন্তর ছুটে চলা।এ চলার শেষ কবে কে জানে!

মেলবোর্নে আজ আমার তৃতীয় দিন। সকাল ৮টায় গাইড আমাদের তুলে নিয়েছে হোটেল থেকে।গাড়ী ছুটে চলেছে গ্রেট ওশান রোড ধরে। সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে গ্রেট ওসান ভ্রমনের একটা স্বপ্ন থাকে।আমিও সে স্বপ্ন পুরন করতে চলেছি ভাবতেই শিহরিত হচ্ছি।।১ম বিশ্ব যুদ্ধ থেকে ফেরা সৈন্যরা ১৯১৯ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্য এটা তৈরি করে যুদ্ধে নিহত সৈনিকদের উদ্দেশ্য এটা উৎস্বর্গ করেন।এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড়স্মৃতি সৌধ। সবচেয়ে বড় ওয়ার মেমোরিয়াল।রাস্তাও যে স্মৃতিসৌধ হতে পারে এটা দেখার আগে আমার জানা ছিলোনা।

পৃথিবী দুটো বিশ্ব যুদ্ধ দেখেছে।এতে নিহত হয়েছে বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ।কিন্তু কয়টা দেশ তাদের সৈন্যদের মনে রেখেছে।অনেক দেশেই বিশ্বযুদ্ধে নিহতদের স্মরনে স্মৃতিসৌধ তৈরি করা হয়েছে।কিন্তু অস্ট্রেলিঁয়া তাদের সৈনিকদের স্মরনে বিভিন্ন শহরে যে ভাবে ওয়ার মেমোরিয়াল করেছে তা চোখে পড়ার মত।সিডনি ওয়ার মেমোরিয়ালে আমি গিয়েছি।মনে হয়েছে কত দরদ দিয়ে যে এসব এয়ার মেমোরিয়াল তৈরি হয়েছে যা সম্ভবত অন্য কোন দেশ করেনি।পাশাপাশি আমার নিজের দেশের কথা মনে আসে।৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে আমরা কয়েকলাখ মানুষকে হারিয়েছি।কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম তাদের মনে রাখবে সে জন্য আমরা কতটুকু উদ্যোগ নিয়েছি।আমাদের রাজনৈতিক নেতারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার তথা বলেন কিন্তু বাস্তবে এই চেতনা তারা নিজেরা ধারন করেন কি!

বলছিলাম গ্রেট ওসেন রোড়ের কথা।এটি বিশ্বের সেরা দশটি সিনিক ভিউ রোড়ের একটি।৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটির প্রতি বাঁকে বাঁকে যেন অবাক করা সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।রাস্তায় প্রথমেই যে শহরটি চোখে পড়লো তার নাম টরকি।এটি মেলবোর্ন সিটি থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরত্বে।ছিমছাম আর কোলাহলহীন এই শহরটি সেই ১৯০০ সাল থেকে একটি অন্যতম জনপ্রিয় অবকাশ কেন্দ্র।মেলবোর্ন থেকে বেরিয়ে পথে আমরা কোথাও থামিনি।ভোর সকালে বেরিয়েছি বলে গাড়ীতে ঘুমানোর সুযোগটা করে দিয়েছিলো গাইড।এখানে একটু ক্ষনের জন্য বিরতি।ব্রেকফাস্ট করে পাখীর চোখে গাড়ীতে বসেই শহরটি ‘চেখে দেখা,।

গাইড জানালোউপকুলীয় এই টরকি শহরটিতে ২০ টির বেশী সৈকত রয়েছে ।আর এ গুলি সার্ফিং এর জন্য আদর্শ।বিশ্ব বিখ্যাত জান্জাক আর বেলস সার্ফিং বীচের অবস্হান এই টর্কিতেই।আর এখানেই রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান জাতীয় সার্ফিং যাদুঘর।এই যাদুঘরটি শুধু অস্ট্রেলিয়ায় নয় সারা পৃথিবীতেউ বিখ্যাত।গত ১০০ বছরে অস্ট্রেলিয়াতে গড়ে উঠা বীচ আর সার্ফিং সংস্কৃতির নানা উপাদানে যাদুঘরটি সমৃদ্ধ।অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি সার্ফারদের অর্জন আর তাদের বোর্ডগুলি এই যাদুঘরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।গাইড জানালো এই যাদুঘরে প্রবেশ মূল্য বড়দের জন্য ১২ অস্ট্রেলিয়ান ডলার আর ছোটদের ৮ ডলার।সময় স্বল্পতার জন্য সার্ফিং যাদুঘরটি ঘুরে দেখা সম্ভব হলোনা।জানা গেলো শীত গীস্ম সব ঋতুর রৌদ্রোজ্জল দিনেই সার্ফার আর প্যারাগ্লাইডারদের মেলা জমে এই বীচ গুলোতে।

গাইড আরো জানালো এই টরকীতেই রয়েছে সাগরের কোল ঘেঁষে ৪৪কিলোমিটার পায়ে হাঁটা পথ।পুরো পথটাই সমুদ্র পাশে থাকবে।আছে স্কাই ডাইভিংএর সূযোগ,সেরা রিসোর্ট ,আংগুর বাগানে বসে তাজা ওয়াইন পানের ব্যবস্হা।

একটা রেস্টুরেন্টে ব্রেকফাস্ট সেরে আবার আমরা পথে নামলাম।সমুদ্রের গা ঘেঁসে রাস্তা।জল কোথাও নীল আর কোথাও সবুজ।রাস্তার পাশে সমুদ্র ঘেসা উঁচু নীচু পাহাড়।সেই পাহাড়ে হাইকিং করে উঠে শত শত পর্যটক সমুদ্র দেখছে।অনেকে আবার গাড়ী নিয়েও পাহাড়ে উঠছে।পাহাড়ের উপরে সমুদ্র ঘেসে পর্যটকদের সুবিধার জন্য কাঠ দিয়ে পাটাতন করে দেয়া হয়েঁছে ।নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রেলিংয়ের ব্যবস্হা।গাইড জানালো গ্রেট ওশান রোডে রাস্তায় অনেক লুক আউট পয়েন্ট রয়েছে যেখানে গাড়ী নিয়ে উঠে উপর থেকে সমুদ্র দর্শন করা যায়।আমাদের সময় কম তাই উপরে উঠা গেলোনা বলে মনে দু:খ বোধ রয়ে গেলো।তবে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আগামীতে আবার অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের সূযোগ এলে বাড়তি কটা দিন বরাদ্দ রাখবো এই গ্রেট ওসান রোড বেশী সময় নিয়ে দেখারজন্য।

গ্রেট ওসান রোডে দেখার জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো আইকনিক পিলার নামে খ্যাত টুয়েলভ অ্যাপস্টল।সমুদ্রের পাড়ে চুনা পাথরের বেশ কিছু অংশ সমুদ্রের ঢেউ,লবনাক্ততা আর প্রতিকুল আবহাওয়াঁয ক্ষয়ে গিয়ে অদ্ভুত আঁকার ধারন করেছে।হঠাৎ দেখলে মনে হবে কিছু লোকজন বা কয়েকটা উঁচু বাড়ি জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে।

সাগরের ঢেউ আর লবণাক্ততার কারণে এই রকগুলোর ফরমেশন প্রতিনিয়ত ক্ষয় হচ্ছে

প্রতি বছর প্রায় ২ সেন্টিমিটার করে। শুরুতে ১২টি থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষয় হয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে ৮টি। ভবিষ্যতে এগুলোর অস্তিত্বও একসময় হুমকির মাঝে পড়বে। গাইড জানালো এই টুরিস্ট স্পটটিকে বহির্বিশ্বে আরও বেশি বেশি করে তুলে ধরার জন্য গত কয়েক বছর ধরে আয়োজন করা হচ্ছে ক্যাডেল ইভান গ্রেট ওশান রোড রেস (সাইক্লিং)।

ভালো লাগা নাকি ভাষা দিয়ে স্পর্শ করা যায়না।তাই এই গ্রেট ওসান রোড়ের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়-বিশেষ করে আমার জন্য।একপাশে পাহাড়, একপাশে সমুদ্র,কখনো রেইন ফরেস্ট,কখনো বা ছবির মত শহর-বলা যায় এককথায় অপূর্ব।আঁকা বাঁকা বিপদ সঙ্কুল রাস্তা হলেওঙ্রাইভার তার নিপুন দক্ষতা নিয়ে গাড়ী ড্রাইভ করঁছিলো।রাস্তার পাশের সমুদ্রের সৌন্দর্যে মনোনিবেশ না করলে হয়তো ভয়ংকর রাস্তার ড্রাইভিং উদ্বিগ্ন করে তুলতো।

ওসেন রোড়ের এক জায়গায় ড্রাইভারকে গাড়ী থামাতে বল্লো গাইড।এখানে একটা জায়গা দেখালো সে-নাম দ্য গ্রেটো।পাহাড়ের ধাপ বেয়ে ১০০ গজের মত নীচে নেমে গেছে রাস্তা।দূর থেকে মনে হলো পাহাড়ের মাঝে একটা গর্ত।চারপাশে পাথর।সামনে ফ্রেম করা সমুদ্র ।দৃশ্যটা এত সুন্দর যে চোখ ফেরানো যায়না।

একটু পরে গাড়ী এসে থামলো আর একটা লুক আউটের সামনে।গাইড জানালো এর নাম-বার্ড রক লুক আউট।এখানেও পাটাতন নির্মান করে টুরিস্টদের বসার ব্যবস্হা করা হয়েছে।পাশে নিরাপত্তার জন্য রয়েছে রেলিং।দূর থেকে মনে হবে পাটাতনটা যেন সাগরের উপর ঝুলে রয়েছে।সাগরের জল এখানে খুবই স্বচ্ছ।পানির নীচের পাথর আর উদ্ভিদগুলো স্পস্ট দেখা যায়।গাইড জানালো অক্টোবর নভেম্ভর এর দিকে এই বার্ড রক থেকে তিমি মাছ দেখা যায়।সুর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখার জন্যও সারা বছর এখানে পর্যটকরা ভীড়জমায়।

 

 

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

ক্রিকেটের শহর মেলবোর্ন

হাবিব রহমান: মেলবোর্ন এয়ারপোর্টে বিমান ল্যান্ড করার আগেই আকাশে বসে আমার গ্রুপ সদস্যদের সাথে পরামর্শ করে ট্যুর প্লানটা খানিকটা পরিবর্তন করে নিলাম।সিডনী থেকে নিউজিল্যান্ড ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরা ভ্রমন শেষে মেলবোর্ন আসার কথা ছিল।কিন্তু ভাগ্যচক্রে যখন মেলবোর্নটাই তালিকার শুরুতে এসে গেল তাই অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন এখান থেকে শুরুর ই সিদ্ধান্ত নিলাম।লাগেজ নিয়ে বেরিয়ে সোজা হোটেলে এসে উঠলাম।

ভিক্টোরিয়া প্রদেশের রাজধানী মেলবোর্ন একটি অন্যতম জনবহুল সিটি।সিটি সেন্টার ,ফেডারেশন স্কয়ার,ইউরোর টাওয়ার ,রানী ভিক্টোরিয়া বাজার,রয়েস এক্সিবিশন ভবন শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্হান।ক্রিকেটের শহর মেলবোর্ন ,টেনিসের শহর মেলবোর্ন।বিশ্ব সংস্কৃতির মিলনমেলা অপরুপ সৌন্দর্যর শহর মেলবোর্ন শহর ভ্রমনের সুযোগ পেয়েছি বলে মনটি একটি অন্যরকম ভালোলাগায় ভরে গেলো।

তবে মেলবোর্ন ভ্রমনের অন্যতম কারণ ছিলো বিখ্যাত গ্রেট ওশান রোড দেখা এবং পেঙ্গুইন প্যারেড পরিদর্শন।গ্রেট ওশান রোডের একটা কাহিনী আছে।তাহলো,১৯১৪ সালে শুরু হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৮ সাল পর্যন্ত স্হায়ী হয় এবং প্রায় ৬০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান সৈনিক এই যুদ্ধে মারা যান।যুদ্ধফেরত সৈনিকরা শহীদদের স্মৃতি অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে অটোয়া উপকুলের সব শহরকে সংযুক্ত করতে প্রায় ২০৩ কিলোমিটার লম্বা একটি সড়ক বানানোর কাজ শুরু করেন।এটা নির্মান করতে লাগে ১৪ বছর।১৯৩২ সালে সড়কটি সাধারনের জন্য খুলে দেয়া হয়।এই সড়কটির নামকরণ করা হয় গ্রেট ওশান রোড।এই সড়কটি শহীদদের স্মৃতিতে নির্মিত সবচেয়ে বড় স্মৃতি স্মারক আর সৈনিকদের ভ্রাতৃত্ববোধের এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।

আর অস্ট্রেলিয়ার ওয়াইল্ড লাইফের এক অনন্য নিদর্শন হলো পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট প্রজাতির পেঙ্গুইন।প্রতিদিন সূর্য ডুবার সময় সাগর থেকে হাজার হাজার এই ছোট পেঙ্গুইনের মিছিল উঠে আসে বালিতে নিজের ঢিবিতে ফিরবার জন্য।আর তাই দেখতে সারা বিশ্বের পর্যটক এসে ভীড় করেন মেলবোর্নের সাগর পাড়ের ফিলিপ আইল্যান্ডে।যা দেখা ছিল আমাদের সবার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু।

যাই হোক হোটেলে একটু বিশ্রাম নিয়ে লবির একটা ট্রাভেল এজেন্সী থেকে টিককিট ক্রয় করে গাইডের সাথে বেরিয়ে পড়লাম মেলবোর্ন সিটি পরিদর্শনে।

গাড়ী ছুটে চলছিলো মেলবোর্নের রাজপথ ধরে।এক একটা ভবন পার হচ্ছিলাম আর তার নাম ধাম ইত্যাদি বর্ণনা করছিলো গাইড।এক সময় পার হয়ে গেলাম পাবলিক লাইব্রেরি, রয়েস মেলবোর্ন ইন্সটিউট অব টেকনোলজি,মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি।গাইডের বর্ণনায় জানলাম মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।শহরের পাশে রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন,।পাশে হেলিপ্যাড।দেখলাম বিশ্ববিখ্যাত মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড।দূর থেকে মনে হচ্ছিলো যেন বিরাট একটা লোহার খাঁচা।বেশ কিছু নদী আছে মেলবোর্ন শহরের পাশে।বন্যার হাত থেকে শহরকে রক্ষা করে এই নদী।বেশ বড় একটি নদী দেখালো গাইড নাম-ইয়ারা।নদীটিএকে বেকে অনেক দূর চলে গেছে।একেবারেই শান্ত নদী।ঢেউ নেই।ইয়ারার দুই পাড়ই সুন্দর করে বাঁধানো।পাশাপাশি আছে সাইকেল ট্রাক আর ফুটপাত।ফুটপাত দিয়ে মানুষ হাঁটছে।সাইকেল আরোহি চলছে সাইকেল ট্রাকে।ইউরোপের দেশ ডেনমার্ক আর আমস্টারডাম এর পর এই মেলবোর্ন শহরে সাইকেলের আলাদা লেন দেখে ভালো লাগলো।শুনেছি ডেনমার্কে নাকি গাড়ীর চাইতে সাইকেলের পরিমান বেশী।ট্রেন স্টেশনের পাশে সে সব দেশে বহুতল বিশিস্ট সাইকেল পার্কিং ও দেখেছি।ইয়ারা নদীর এক পাড়ে মেলবোর্নের বানিজ্যিক এলাকা আর অপর পাড়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।আর্ট সেন্টার । পাশেই মেলবোর্ন সিম্ফনি অপেরা হল।রাস্তার মোড়ে মোড়ে বার।সেয়ান্সটন স্ট্রিটের উপর মেলবোর্ন সিটি হল।দেখলেই মনে করিয়ে দেয় অনেক প্রাচীন এই ভবনটি।গাইড জানালো মেলবোর্ন শহরের বয়সদুশো বছরেরও বেশী ।আর ভবনটিও সে সময়কার।তবে ভালোভাবে রক্ষনাবেক্ষন করায় শরীরে তেমন বার্ধ্যকের ছাপ পড়েনি।রাস্তায় একটু পর পর ম্যাকডোনাল্ডের দোকান চোখে পড়লো।ইউরোপের প্রতিটি শহরে ম্যাকডোনাল্ডের ছড়াছড়ি।অস্ট্রেলিয়াও এর ব্যতিক্রম নয়

দেখে খুব ভালো লাগলো।

মেলবোর্নের সবচেয়ে বড় রেল স্টেশন-ফিল্ডার স্ট্রিট স্টেশনের পাশে গাইড গাড়ী থামিয়ে একটু সুযোগ দিলো ছবি তোলার জন্য ।দেয়ালজুড়ে অনেকগুলো ঘড়ি লাগানো হয়েছে এতে বিভিন্ন লাইনের সময়সূচি প্রদর্শিত হচ্ছে।স্টেশনের পাশেই বিশাল গীর্জা।ইউরোপের বড়বড়গীর্জার মতোই কারুকার্য খচিত।

চলার পথে রাস্তার পাশে কোথাও কোথাও চোখে পড়লো ওপেন এয়ার মার্কেট।অনেকটা নিউইয়র্কের ফ্লিয়া মার্কেটের মতো।ছোট ছোট টেবিল পেতে যে যার পসরা সাজিয়েছে।খাবারের দোকান থেকে শুরু করে হস্তশিল্প ,গয়না ,তৈরি পোষাক,বই সহ আরো কতো কি ! মানুষ ভীড়করে তাদের প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনছে।মনে হলো কতো দেশের মানুষ!এর মাঝে কাঁধে রেকস্যাক বাঁধা পর্যটকের সংখ্যাই বেশী।

এর পর গাড়ী এসে থামলো অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড়ক্যাসিনো ক্রাউন কম্লপ্লেক্স এর সামনে।গাইড জানালো এই কমপ্লেক্সে ক্যাসিনো ছাড়াও রয়েছে ফাইভস্টার হোটেল ,শপিং মল,বার,সিনেমা হল,রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি।গাইড একটা অবাক করা তথ্য জানালো।তাহলো পৃথিবীতে অস্ট্রেলিয়ানরাই নাকি সবচেয়ে বেশী জুয়া খেলে।সারা পৃথিবীতে জুয়া খেলার যত ইলেকট্রনিক মেশিন আছে তার পাঁচ ভাগের একভাগ আছে এই অস্ট্রেলিয়ায়।অথচ অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার তিনশোভাগের একভাগ।অস্ট্রেলিয়ারগড়ে শতকরা বিরাশিভাগ মানুষ কোন না কোন রকমের জুয়া খেলে। একজন সাধারন মানের জুয়ারীও বছরে গড়ে ৬২৫ ডলার জুয়া খেলে।আর প্রতি ১০ জন জুয়ারির মধ্যে কমপক্ষে একজন আত্মহত্যা করে।

কমপ্লেক্সের আঁশে পাশে অনেকগুলি ফোয়ারাও চোখে পড়লোএখানেও গাইড আমাদের একটু সময় দিলো ফটো সেসানের জন্য ।তারপর গাড়ী ছুটলো রাজপথ ধরে।

কতক্ষন পর গাড়ী এসে থামলো একটা বড় সড়ক্যাফের সামনে।গাইড জানালো এখানে কফি বিরতি।কফি খেয়ে ফ্রি টাইম পাওয়া যাবে আরো আধ ঘন্টা ।একটু এদিক সেদিক ঘোরা যেতে পারে।সবাই এই সূযোগে এদিক সেদিক ঘুরতে গেলেও আমি আলাপ জমালাম গাইডের সাথে জানতে চাইলাম মেলবোর্নে বাংলা দেশী কমিউনিটি সম্পর্কে তার কোন ধারনা আছে কিনা।আমাকে অবাক করে গাইড জানালো এখানকার বাংলাদেশী কমিউনিটি খুব জনপ্রিয়।তারা সারা বছর অনেক অনুষ্ঠান করে।তার কিছু বাংলাদেশী বন্ধুও আছে যাদের সাথে সে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান ও সে উপভোগ করেছে।এর মাঝে আমাদের ২১ ফেব্রুয়ারী এবং বাংলা নব বর্ষের জমজমাট অনুষ্ঠান তার কাছে খুব ভালো লেগেছে।সে আরো জানালো মেলবোর্ন বাংলা স্কুল এবং মেলবোর্ন বাংলাদেশী কমিউনিটি ফাউন্ডেশন তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য মেলবোর্নে বসবাস রত অন্যান্য কমিউনিটির কাছেও খুব সুপরিচিত।ভিনদেশী একজন মানুষের কাছে নিজের দেশ এবং প্রবাসে বসবাসরত দেশী ভাইদের প্রশংসা শুনতে পেয়ে মনটা গর্বে ভরে উঠলো।

বিরতির সময় শেষ হওয়ায় গাইড উঠে দাড়িয়ে গাড়ীর দিকে রওয়ানা হলো।এবার আবার যাত্রা শুরু হবে মেলবোর্নের অন্যস্থান দর্শনীয় গন্তব্যে।

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

ঘুরে দেখা অস্ট্রেলিয়া

হাবিবুর রহমান: অসাধারণ সৌন্দর্য আর বৈচিত্রময় দেশ অস্ট্রেলিয়া।এখানে এমন সব কিছু বিস্ময়কর স্থান আছে যা বিশ্বের অন্য কোথাও নেই।বলা হয় ,এখানে যত রকমের এ্যাডভেন্চার করা সম্ভব যে এক জীবনে শুধু অস্ট্রেলিয়ায় বেড়িয়েই কাটানো যাবে।একঘেয়েমি লাগার কোন সূযোগ নেই।

বহুদিন ধরে প্লান করছিলাম অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের ।কিন্তু ব্যাটে বলে এক হচ্ছিলোনা।তার কারণ ছিলো বহুবিধ।প্রথমত :অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন ব্যয় বহুল।দ্বিতীয়ত:অনেক লম্বা ফ্লাইট।নিউইয়র্ক থেকে সিডনি যেতেই সরাসরি ফ্লাইটেই সময় লাগে ২২ ঘন্টা। ব্যয় বহুল বলে অনেক পর্যটকই ইচ্ছে থাকলেও অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে নিরুৎসাহিত হন।বিশেষকরে বাংলাদেশী পর্যটকতো নয়ই।তা ছাড়া অনেক কম খরচে ইউরোপ ভ্রমন সহজ হয়।তাই গড়পড়তা পর্যটকের আকর্ষন অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউরোপ মুখী।

আমি ইতোমধ্যে বিশ্বের ৪টি মহাদেশের বিভিন্ন শহর পরিভ্রমন করেছি।ট্যুরও অপারেট করছি বিভিন্ন দেশে।অস্ট্রেলিয়ার কোন শহরে ভ্রমন আমার জন্য চ্যালেন্জ হিসাবে বিবেচিত ছিলো।তাই হঠাৎ করে যখনকয়েকজন অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনের প্রস্তাব করে বসলে তখন সুযোগটা হাত ছাড়া করতে চাইলামনা।টিকিট কাটা হলো ইউনাইটেড এয়ারে।নিউজার্সির নিউয়ার্ক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু।লস এন্জেলেসে বিমান পরিবর্তন করে সোঝা সিডনি।সর্বমোট ২২ ঘন্টার ফ্লাইট।

দূর যাত্রার মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই বিমানে গিয়ে বসলাম।কিন্তু শুরুতেই বিপত্তি।টেক অফ করার আগ মুহুর্তে ঘোষনা এলো বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি ।তাই বিমান উড়বেনা।নামতে হবে।সবার সাথে লাইন দিয়ে আবার গিয়ে লাউন্জে গিয়ে বসলাম।পাক্কা তিনঘন্টা পর ঘোষনা এলো বিমানে গিয়ে উঠার।এবার কোন সমস্যা ছাড়াই বিমান উড়লো আকাশে।আয়াস করে সিটে বসে গা এলিয়ে দিলাম।তখন কে জানতো আরো বিপত্তি অপেক্ষা তরে আছে সামনে!

লসএনজেলেসে বিমান থেকে নেমে লাউন্জে গিয়ে বসলাম কানেকটিং ফ্লাইটের অপেক্ষায়।এসময় ইউনাইটেড এয়ারের একজন সুদর্শন তরুণী এসে হাসি মুখেই দু:সংবাদটি জানালেন যে,আমাদের কানেকটিং ফ্লাইটটি সিডনীর উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বেশ কয়েকঘন্টা আগে।আমাদের রাত যাপন করতে হবে লস এন্জেলেসে।বিমান কর্তৃপক্ষ থাকার জন্য পাঁচতারকা হোটেল দেবে।খাওয়ার জন্য ভাউচার দেবে।হোটেলে যাওয়া আসার গাড়ী দেবে ইত্যাদি এন্তার সব সূযোগ।তবে সোজা কথা আজ আর সিডনি যাওয়া হচ্ছেনা।

মনটা শুরুতেই দমে গেলো।তবে করার কিছুই নেই।ইউনাইটেড এয়ারের দেয়া গাড়ীতে গিয়ে বসলাম।কর্তারা জানালেন,লাগেজের জন্য ভাবতে হবেনা।এটা যথাসময়ে হোটেলে পৌছে যাবে।

লস এন্জেলেস এয়ারপোর্ট সংলগ্ন হায়াত রিজেন্সী হোটেলে থাকার ব্যবস্হা হলো।এটি আমার প্রিয় হোটেলের একটি।হোটেলেই খাবার ব্যবস্হা।যত্ন আত্তিরের কোন ত্রুটি রাখেনি বিমান কর্তৃপক্ষ।তবু মনটা খচ খচ করতে লাগলো আগামীকাল ফ্লাইটের স্কাজুয়েল কখন হয় এই ভেবে। সকালে ব্রেক ফাস্টের সময় দেখা মিললো ইউনাইটেড এয়ারের আরএক কর্মকর্তার।এবারও এক সুহাসিনি নারী তার স্বভাবসুলভ হাসি দিয়ে জানালেন আমাদের আরো দু’রাত কাটাতে হবে এখানে ।কারণ আগামী দুদিন সিডনির উদ্দেশে ইউনাইডেড এয়ারের কোন ফ্লাইট নেই।তার কথা শুনে মাথায় যেন আমার আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।কারন অস্ট্রেলিয়া ভ্রমনে পুরো সময়টাই আমার টাইট স্কাজুয়েল।হোটেল এবং ট্যুর বুক করা প্রতিদিন।রিটার্ন টিকিটও কাটা ।দুদিন সময় যদি বাদ দিতে হয় তাহলে আমার নিউজিল্যান্ড ট্যুর বাদ দিতে হবে।আমার গ্রুপের কাছেই বা কি জবাব দেবো ভেবে পাগল হবার অবস্হা।

একজন পেশাদার টুরিস্ট এবং ট্যুর অপারেটর হিসাবে আমার প্রশিক্ষণ বলে দিলো আমাকে মাথা ঠান্ডা রেখেই কাজ করতে হবে।গরম করলে চলবেনা।তাই শান্তভাবে উঠে দাঁড়িয়ে মহিলার গিয়ে আমার সমস্যার কথা জানালাম।বল্লাম ,আমি যদি আজকে সিডনির কোন ফ্লাইট না পাই তাহলে আমাকে চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।আর আমার ট্যুর গ্রুপটাও খুব ছোট নয়।শেষে আরো শান্তভাবে জানালাম আমার ক্ষতির ঝাপটাটা শেষ পর্যন্ত ইউনাইটেড এয়ারের উপরও এসে পড়বে -যেন সে কথাটাও তারা মনে রাখেন ।

আমার শেষ কথাটা যেন মহিলা গুরুত্ব দিলেন।তিনি বলে গেলেন তাঁর সুপার ভাইজারের সাথে কথা বলে খুব দ্রুতই আমার সাথে যোগাযোগ করবেন।

কাঙ্খিত ফোনটা এলো পাক্কা দেড়ঘন্টা পর।মহিলা জানালেন,সবার নয় শুধু আমার গ্রুপের সিডনি যাবার ব্যবস্হা করেছেন অন্য একটি এয়ার লাইনে।তবে আমাকে একটু ঘুরে যেতে হবে সিডনি ।কোয়ান্টাস এয়ারের বিমানটি আমাদের প্রথমে নিয়ে যাবে মেলবোর্ন ।পরে বিমান পাল্টিয়ে আমাদের যেতে হবে সিডনি।আগের ফ্লাইটে যেতে পারলে আমরা বিকালে সিডনি পৌঁছাতেই পারতাম।এখন পৌঁছাতেই হবে পরদিন সকালে।সিডনি হিলটনে আমাদের হোটেল বুকিং ছিলো।তা মিস হবে ।বাদ যাবে হিলটনের মুখরোচক ব্রেক ফাস্ট।সে যাক কিছু ক্ষতি হলেওতা ছিলো মন্দের ভালো।তাই আল্লাহর কাছে শোকরানা জানালাম।ফ্লাইটের বেশী বাকী নেই ।তাই দ্রুত লাগেজ গোছাতে রুমে ফিরে গেলাম।

সঠিক সময়েই লস এন্জেলেস বিমান বন্দর ত্যাগ করলো কোয়ান্টাসের বিমানটি।নিরাপদ এয়ারলাইন্সের প্রথম বিশের তালিকার শীর্ষে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাস।বিশ্বব্যাপি মোট ৪০৫টি এয়ারলাইন্সকে জরিপ করে তৈরি করা হয় এই তালিকা।মোট ১২ টি বৈশিস্টকে হিসেব করে এই মূল্যায়ন করা হয়।বিধ্বস্ত ও দূর্ঘটনার রেকর্ড,বিমানের বয়স ,কেমন লাভ করছে ,সেবা এসব বিবেচনায় আনা হয়।এ জরিপটি পরিচালনা করে এয়ারলাইন্স রেটিংস ডট কম নামের একটি ওয়েবসাইট ।

ফ্লাইট মিস করায় কোয়ান্টাস এয়ারের সুযোগ পাওয়ায় ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিলাম।ফ্লাইট সিডিউল ওলট পালট হওয়ায় মেন্টালি খুব আপসেট ছিলাম।আমার কোন্পানির সুনামের ব্যাপারটিও এর সাথে জড়িত ছিলো।তারকা হোটেলে রাত যাপন করলেও ভালো ঘুম হয়নি।তাই বিমানে উঠার পর যেন একটা ক্লান্তি এসে ভর করলো ।সহজেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম।