Categories
অষ্ট্রেলিয়া

ব্রিসবেনে এক রাত

ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলের একটি শহর। এটি কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী এবং ব্রিসবেন নদীর তীরে মোরটন উপসাগরের কাছে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। ব্রিসবেন নদীতে ড্রেজ করে শহরটিতে সমুদ্রগামী জাহাজের আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশম এ শহরের প্রধান রপ্তানিকৃত দ্রব্য। অন্যান্য রপ্তানির মধ্যে আছে বরফজমা মাংস, চামড়া, চিনি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ভুট্টা, মুক্তার খোল এবং কয়লা। শহরটি রেলপথের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত প্রধান স্থানগুলির সাথে যুক্ত। গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র ব্রিসবেনে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পাকাকরণ, মোটরযান জোড়া লাগানো, মদ চোলাইকরণ, এবং কাঠ, কাপড়, তামাকজাত দ্রব্য, বুট ও জুতার উৎপাদন করা হয়।

 

গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বলা হয় বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি।ইউনেস্কো ১৯৮১ সালে এটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষনা দিয়েছে।এছাড়া মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটা বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম।অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করবো আর এই রিফটি দেখবোনা তাতো হবার নয়!তাই দর্শনীয় তালিকায় এই নামটি আগেই লিস্ট করেছিলাম।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থ ভ্রমন শেষে আজ বিকালের ফ্লাইটে এসে যাত্রা বিরতি করেছি ব্রিসবেন এয়ারপোর্টে।নিউইয়র্ক থেকে কোন অবস্হাতেই সরাসরি কোন ফ্লাইট ম্যানেজ করতে পারিনি।যেজন্য রাস্তায় ব্রিসবেন এয়ারপোর্টে বিরতি দিতে হবে প্রায় ১৩ ঘন্টা ।কোয়ানটাস এয়ারের বিমানটি পার্থ ছেড়েছে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে।রাত নয়টায় এসে ল্যান্ড করেছে এখানে।হ্যামিল্টন আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে আমার পরবর্তী ফ্লাইট পরদিন সকাল সাড়ে দশটায়।এই দীর্ঘ সময় এয়ারপোর্টে বসে থাকা বিশেষ করে রাত জাগা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই আগে থেকেই এয়ারপোর্টের বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেলে একটি রুম বুক করে রেখেছিলাম।এতে আমার এক ঢিলে দু পাখী মারা হবে।প্রথমত:রাত জাগতে হবেনা।আর দ্বীতিয়ত রাতে কিছুটা সময় শহরটি ঘুরে দেখতে পারবো।
ভ্রমনে বিমান বিরতির এই সুযোগটা সব সময় আমি কাজে লাগাই।২০১৮ সালে স্কানডেনেভিয়ান দেশগুলি ভ্রমনের সময় নরওয়ে থেকে সুইডেন যাবার পথে দীর্ঘ বিরতিতে ট্রমসো শহরটি ঘুরে দেখেছিলাম।আইসল্যান্ড থেকে কায়রো যাবার সময় এথেন্সে লম্বা বিরতিতে শহরটি ঘুরে দেখার সূযোগ হয়েছিলো।
আগেই জেনেছিলাম ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলের একটি শহর। এটি কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী এবং ব্রিসবেন নদীর তীরে মোরটন উপসাগরের কাছে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। ব্রিসবেন নদীতে ড্রেজ করে শহরটিতে সমুদ্রগামী জাহাজের আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশম এ শহরের প্রধান রপ্তানিকৃত দ্রব্য। অন্যান্য রপ্তানির মধ্যে আছে বরফজমা মাংস, চামড়া, চিনি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ভুট্টা, মুক্তার খোল এবং কয়লা। শহরটি রেলপথের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত প্রধান স্থানগুলির সাথে যুক্ত। গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র ব্রিসবেনে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পাকাকরণ, মোটরযান জোড়া লাগানো, মদ চোলাইকরণ, এবং কাঠ, কাপড়, তামাকজাত দ্রব্য, বুট ও জুতার উৎপাদন করা হয়। ব্রিসবেন একটি সুপরিকল্পিত নগরী। এর রাস্তাগুলি চওড়া, এখানে বহু নগর উদ্যান ও অনেক আধুনিক দালান আছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে আছে সংসদ ভবন, টাউন হল বা নগর ভবন, ব্রিসবেন জাদুঘর এবং কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
১৮২৪ সালে ব্রিটেনের অপরাধীদের রাখার জন্য ব্রিসবেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রশাসক, তৎকালীন নিউ সাউথ ওয়েল্‌স রাজ্যের গভর্নর টমাস ব্রিসবেনের নামে শহরটির নামকরণ করা হয়। শহরটিকে ১৮৪২ সালে বসতি স্থাপনের জন্য খুলে দেয়া হয় এবং ১৮৫৯ সালে এটি নতুন রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের রাজধানীতে পরিণত হয়।
ব্রিসবেন শহরটি ‘সান শাইন স্টেট’ নামেও পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বলা চলে এই ব্রিসবেনকে।এখানে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি যেমন ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড’ আছে। সারা বিশ্ব থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে আসে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই শহর জুড়ে বহুমুখী সংস্কৃতির চর্চা সারাবছর লেগেই থাকে। এই রাজ্যের আয়ের একটা বড় অংশ আসে বিদেশি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে।
ব্রিসবেনের আবহাওয়া অনেক ভালো। বরফ পরে না। সারাবছরই তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। যারা বিভিন্ন ঋতু পছন্দ করেন, তাদের জন্য তো ব্রিসবেন অসাধারণ। বছরের শেষের দিকে শুধু মাস দুয়েকের মত গরম পড়ে। বাংলাদেশে যখন ঠাণ্ডা পরে এইখানে তখন গরম পড়ে।
আগেই জেনেছিলাম ব্রিসবেনে প্রচুর বাংলাদেশীর বসবাস।আর এর পরিচয়ও পেলাম হাতে নাতে।এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়াতেই সিরিয়াল অনুয়ায়ী যে ট্যাক্সিটি এসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তার চালক একজন বাংলাদেশী।বিদেশে অনেক বাংলাদেশীকে দেখেছি তারা হীনমন্যতায় ভুগেন।পরিচয় দিতে কুন্ঠা বোধ করেন।দেশে হয়তো ভালো অবস্হানে ছিলেন।বিদেশে গিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন এটাই হয়তো তার কুন্ঠার বড় কারন।
আমার চালক আলমগীর খুবই সপ্রতিভ একজন মানুষ।দেশের বাড়ী কুমিল্লায়।দীর্ঘদিন এ দেশে আছেন।তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বল্লাম যাচ্ছি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দেখতে।যাত্রা বিরতিতে থেমেছি এখানে।তিনি যদি অনুগ্রহ করে শহরটি ঘুরে দেখান তাহলে খুশী হবো।তিনি মিটার চালু করে নেমে পড়লেন রাস্তায়।
ব্রিসবেনের বড়রাস্তা ধরে গাড়ী চলছে শহরের দিকে।আলমগীর জানান,বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্রিসবেন এখানে আম্ব্রেলা সংগঠন।তাদের উদ্যোগে এখানে আড়ম্বরের সাথে পালিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো।এখানকার কিয়ংপার্কে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা বর্ষবরণ শোভাযাত্রা।
তিনি আরো জানান ,৯০ দশকের দিকে ব্রিসবেনে বাংলাদেশীদের পরিমান ছিলো হাতে গোনা।আর এখন তা বেড়ে হয়েছে কয়েকহাজার।আছে বাংলা স্কুল এবং বাংলাদেশী পরিচালিত একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন -যা শুনে খুব ভালো লাগলো।
আলমগীর গাড়ী থামালেন ব্রিসবেন নদীর পাড়ে।নদীর দুই পাশে সুরম্য হাই রাইজ দৃস্টি নন্দন ভবন।ভবনের আলোগুলি নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছিলো।তিনি জানান পুরো শহরটাই পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে।প্রতি সন্ধ্যায় এই নদীতে অনুষ্ঠিত হয় লাইট এন্ড লেসার শো।শত শত দর্শনার্থী তা উপভোগ করেন।এই নদীতে বিনে পয়সায় নৌ ভ্রমনেরও ব্যবস্হা রয়েছে।
এরপর একে বেকে গাড়ী চালিয়ে আলমগীর আমাকে নিয়ে একটি একটি পাহাড়চুড়ায়।জায়গাটার নাম মাউন্ট কোট-থা।বাংলায় অর্থ করলে দাড়ায়,এখানে মধু পাওয়া যায়।আলমগীর জানান ,আদি বাসীরা এই পাহাড় থেকে মধু সংগ্রহ করতো।জায়গাটা সমুদ্র পৃস্ট থেকে ২৮৭ মিটার উঁচুতে।এখান থেকে পুরো ব্রিসবেন শহরটা দেখা যায়।পূর্নিমা রাতে এখানে এসে অনেকে সারা রাত থেকে চাঁদের আলোতে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করে থাকেন।
এরপর আমরা এলাম সমুদ্রের পাড়ে।জায়গাটা নাকি সার্ফারদের জন্য স্বর্গ।রাতের বেলা বলে সৈকতের শোভা উপভোগ থেকে বন্চিত হলাম।তবে এজন্য আমার আফসোসও ছিলোনা।কারন এমনিতেই আমি বিশ্বের দেশে দেশে ঘুরে ফিরে নানা দেশের সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করি।তা ছাড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড়সাগর সৈকত আমার দেশের কক্সবাজারে।
আলমগীর আফসোস করে বলছিলো আমাকে ‘সাউথ ব্যাঙ্ক’ এ নিয়ে যেতে পারেনি বলে।একদিন থাকলে সখানে তিনি আমাকে নিয়ে যেতেন।তিনি জানান সাউথ ব্যাঙ্ক হচ্ছে একটা জনপ্রিয় জায়গা। অনেককিছুর পাশাপাশি এখানে মানুষের বানানো সমুদ্র সৈকতের মতো জায়গা আছে যেখানে বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে পারে। দেখলে বোঝাই যাবে না যে এটা একটা বানানো বিচ। একদম ফ্রি। আছে সহজ পার্কিং ব্যবস্হা।আপনি যেখানেই যান না কেন পাশেই কোথাও না কোথাও পার্ক খুঁজে পাবেন। ইচ্ছামতো বিশ্রাম নিতে পারবেন।

ব্রিসবেন শহরটি ঘুরে দেখতে গিয়ে রাত হয়েগিয়েঁছিলো।তাই আলমগীরকে বল্লাম গাড়ী ঘুরাতে।হোটেলে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে হবে।কাল সকালেই উড়াল দিতে হবে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের উদ্দেশ্যে।
—-লেখক,সিইও-বাংলা ট্যুর।

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম-গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকুলের কাছে এই গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ পৃথিবীর সপ্তার্শ্চর্যের অন্যতম ।এখানে ২৯০০ পৃথক পৃথক প্রবাল প্রাচীর প্রায় ১৬০০ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে।প্রবাল,পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি অর্গানিজম দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। প্রাণী হলেও এরা চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে কোনো এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে এরা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।
এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।

যাচ্ছি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম , অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ দেখতে। রাস্তায় যাত্রা বিরতি ছিলো কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনে। স্হানীয় বাংলাদেশী আলমগীরকে সাথে নিয়ে বলা যায় সারা রাত চষে বেড়িয়েছি ব্রিসবেন শহরটি। ভোররাতে হোটেলে ফিরে একটু ঘুম।তারপর সকালে হোটেলেই নাস্তা সেরে আবার এয়ারপোর্টে।আলমগীরই আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়েছে।তাকে ধন্যবাদ জানালাম।আলমগী না থাকলে হয়তো এত অল্প সময়ে আমার ব্রিসবেন শহরটি ঘুরে দেখা সম্ভব হতোনা।রাতে মিটার অনুযায়ী তাকে ভাড়া দিতে পারলেও সকালে এই ট্রিপের জন্য কোন অর্থ নিতে রাজী হলোনা।প্রবাসে স্বদেশীরা যে কতো আপন হয় আলমগীর তা আবার প্রমান করলেন।
ব্রিসবেন থেকে হ্যামিল্টন আইল্যান্ড এয়ারপোর্টের দুরত্ব আকাশ পথে সময় লাগলো ১ঘন্টা ৫৫ মিনিট।সিটে বসে লান্চ খাওয়া শেষ না করতেই ঘোষনা এলো সিট বেল্ট বাঁধার।অর্থাৎ নামার সময় হয়ে গেছে।

এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি সারতে খুব বেশী বিলম্ব হয়নি।লাগেজ ঠেলে বাইরে বেরোতেই দেখলাম আমার নাম লেখা প্লাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছে রিফ ভিউ হোটেলের একজন কর্মী।হোটেল বুক করার সময়ই জেনেছিলাম তাদের এয়ার পোর্ট সাটল সার্ভিস আছে।তাদের আমার বিমানের সময়সূচি জানিয়েদিয়েছিলাম সে সময়েই।সঠিক সময়েই তারা এসে আমাকে তুলে নিলো। লাগেজেও আমার হাত লাগাতে হলোনা।হোটেলের ড্রাইভার এবং স্টাফ দুজনকেই এক নজরেই ভালো লাগলো।
৩৬৮ টি গেস্ট রুম নিয়ে আমার রিফ ভিউ হোটেলটি এক নজর দেখেই ভ্রমনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেলো।টপ ফ্লোরে রুম দিতে বল্লাম।খুব দ্রুত রিসিপসনের কাজ শেষ করে উঠে এলাম আমার রুমে।রুমের সামনে ব্যালকনি।সামনে সুনীল কোরাল সাগর মন ভালো করার জন্য যথেস্ট।রুমে হাত মুখ ধুয়ে জামা কাপড়ছেড়ে নীচে নামলাম ডিনারের জন্য।সারা শরীর ক্লান্তিতে ছেয়ে আছে।ডিনার সেরে রুমে এসে ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বিছানায়।সকাল ৮টায় গাইড এসে তুলে নেবে।এর আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে তৈরি হয়ে নিতে হবে আমাকে।
কাঁটায় কাঁটায় সকাল ৮ টায় গাইড এসে হোটেল লবি থেকে আমাকে তুলে নিলো।রিফে সাড়ে আট ঘন্টা কাটবে তার সাথে। স্মরকেলিং ছাড়াও অন বোর্ড বারবিকিউ লান্চ অন্তর্ভুক্ত এই ট্যুরে ।পৃথিবীর অনেক জায়গায় আমি স্মরকেলিং এ অংশ নিয়েছি।তাই এ নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই ।জাহাজ থেকে রিফের দৃশ্য অবলোকন করাই আমার বেশী আগ্রহ।
১০০ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে বোটটি ছাড়লো।বেশ বড়সড়বোট।একটু পরেই শুরু হলো গাইডের লেকচার।বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে গাইডের লেকচার শোনার খুব একটা প্রয়োজন হয়না।একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই সব তথ্য হাতের নাগালে এসে যায়।কিন্তু গাইডের ডিউটি তাকে পালন করতেই হয়। তাই অনিচ্ছা থাকলেও কান পাতলাম তার বক্তৃতায়।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকুলের কাছে এই গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ পৃথিবীর সপ্তার্শ্চর্যের অন্যতম ।এখানে ২৯০০ পৃথক পৃথক প্রবাল প্রাচীর প্রায় ১৬০০ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে।প্রবাল,পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি অর্গানিজম দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। প্রাণী হলেও এরা চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে কোনো এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে এরা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।
এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।

প্রবাল প্রাচীরগুলো দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এগুলো বাদামি, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, ইত্যাদি নানান রঙে রঙানো থাকে। একই প্রাচীরের আলাদা আলাদা অংশ আলাদা আলাদা আকারের হতে পারে, যেমন, হরিণের শিং, মৌমাছির চাক, মানুষের মস্তিষ্ক, ইত্যাদি। প্রবাল প্রাচীরের মূল উপাদান প্রবাল-ক্ষরিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। এছাড়াও প্রাচীরে বসবাসকারী অ্যালজি, স্পঞ্জ ও অন্যান্য জীবরা এতে নানান উপাদান যোগ করে এর বর্ণবৈচিত্রকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
কুইন্সল্যান্ড ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই রিফকে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের প্রতীক হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি শুধু একটি বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন স্হানই নয় পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক নিদর্শনও বটে।এখানে ৪০০ প্রজাতির কোরাল এবং ১৫০০ প্রজাতির মাছের আবাসস্হল রয়েছে। এছাড়াও ১৩৩ প্রজাতির হাঙর সহ অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক মৎস, অসংখ্য প্রজাতির জেলিফিশ, ঝিনুক, শামুক এবং ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতির তিমি মাছ ও ডলফিন রয়েছে৷
এছাড়াও গ্রেট ব্যারিয়ার জীববৈচিত্রের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত। বৈচিত্রপূর্ণ জীবের উপস্থিত ছাড়াও এখানে ডুগং বা সমুদ্রধেনু এবং সবুজ কচ্ছপের মত বিলুপ্তপ্রায় প্রানীর উপস্থিত রয়েছে। সমুদ্রধেনু হচ্ছে গাভীর মত দেখতে বিশাল এক ধরণের উদ্ভিদভোজী প্রাণী। যাদের অস্তিত্ব এবং উপস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার ছাড়া অন্য কোথাও নেই।
কিন্তু দূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে গত কয়েক দশক ধরে এই রিফের অবস্হান হুমকির মুখে।
গাইড আরো জানায় ১৯৮৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের অ্যাবট বন্দরটি কয়লা রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সম্প্রতি সরকার এটার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু এতে রিফের পরিবেশ আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।
আরো একটা আশংকার কথা জানালো গাইড। তা হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কচ্ছপরা বিভিন্ন দ্বীপের সৈকতের বালুতে যৌনক্রিয়া করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বালুর তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার৷ বড় বন্দরের কারণে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে কচ্ছপরা বিপদে পড়তে পারে।

গাইড জানায় ধারণা করা হয় ২০ হাজার বছর পূর্বে যখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের গঠন শুরু হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়া প্রায় ৬০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তবে এর গঠনপ্রণালী থেকে ধারনা করা হয়, প্রাচীরের একটা বৃহৎ অংশ কোন একসময় মহাদেশীয় দ্বীপ ছিল যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থান করলেও সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকলে মহাদেশীয় দ্বীপটি একসময় পানিতে ডুবে গিয়ে প্রবাল প্রাচীরের উপরে অবস্থান করে।
ইতিমধ্যে আমরা বোটে
করে প্রায় ঘন্টা খানিক সময় পার করেছি।যারা স্মারকলিংয়ে অংশ নেবে তারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দিচ্ছে গাইড।যেমন পানির নীচে কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া যাবেনা।নীচে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে কি সাইন দেখাতে হবে।অথবা অসুস্হ বোধ করলে উপরে উঠিয়ে নেবার জন্য কি সাইন দেখাতে হবে ইত্যাদি।
ডাইভিং ,স্মরকেলিং একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিনোদন।ইতোপূর্বে আমি বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমন করে এই বিনোদন গুলির স্বাদ নিয়েছি।তাই এবার তা থেকে বিরত থেকে কোরাল সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখাতেই মগ্ন থাকলাম।

একসময় অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ,পৃথিবীর একমাত্র প্রবাল প্রচারী ভ্রমন শেষ হলো।সারা বিশ্ব থেকে বছরে প্রায় ২০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।নিজকে ধন্য মনে হলো।পৃথিবীটা এত বড় যে এই ছোট জীবনে হয়তো আর এখানে আসা হবেনা।মহান সৃস্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম। কাল ফিরে যাবো সিডনিতে।
—-লেখক সিইও ,বাংলা ট্যুর ।

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

পার্থ -পার্ল অব অস্ট্রেলিয়া

পার্থ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী।তাকে আদর করে অনেকে ডাকে পার্ল অব অস্চ্রেলিয়া। সোয়ান নদীর তীরে অবস্হিত এই শহরটি তার দুর্দান্ত আবহাওয়া, এবং পরিষ্কার, এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য সবার কাছে পরিচিত। ভারত মহাসাগরের পাশাপাশি চলমান উপকূলরেখার এক প্রান্তে অবস্থিত শহর পার্থ।এই শহরটি দীর্ঘদিন ধরে তার প্রাণবন্ত বার, দুর্দান্ত খাবার এবং খুব সম্প্রতি এর বুটিক হোটেলগুলির নতুন স্ট্রিংগুলিতে দর্শকদের আকর্ষণ করে।শহরটির জনসংখ্যা ১.৯৭ মিলিয়ন।সিডনি,মেলবোর্ন আর ব্রিসবেনের পর এটি অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর.।

আজ সকালে গোল্ড কোস্ট থেকে পার্থ এসেছি।সরাসরি ফ্লাইটে সময় লেগেছে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ।জেটস্টার এয়ার লাইনে চমৎকার সময় কেটেছে।মনে হয় এই এয়ারলাইনটি অস্ট্রেলিয়ার এই বেল্টে চলাচল করে এবং ভালো সার্ভিস দেয়।আসার সময়ে হাওয়াই থেকে মেলবোর্ন এসেছিলাম এই এয়ারলাইনেই।
আমার এরাইভাল ছিলো ৪ নং টারমিনালে।ইমিগ্রেশন পেরিয়ে ইনফরমেশন সেন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানালো এয়ারপোর্ট থেকে সিটির দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার ।ট্যাক্সিতে গেলে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আর বাসে দেড়ঘন্টার মত।আর আমার হোটেলের সামনেই বাস স্টপ।চাইলেই কম খরচে বাসে হোটেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি।ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার বাস গুলো খুবই আরামদায়ক।আর সুযোগ পেলেই আমি তাতে ভ্রমন করি।
বাসে যাব জানাতেই কাউন্টারের মেয়েটি বল্লো পাশেই ৩ নাম্বার টার্মিনালের সামনে থেকে ৪০ এবং ৮২ নাম্বার বাস যাবে।ভাড়া মাত্র ১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
ইনফরমেশন সেন্টারের মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটু হেঁটে ৩ নাম্বার টার্মিনালে গিয়ে ৪০ নাম্বার বাসটি পেয়ে গেলাম যেটি সিটিতে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।বাস টি অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে নামিয়ে দিলো সিটিতে আমার হোটেল হায়াত রিজেন্সী সামনে।
এটি আমার প্রিয় হোটেলের একটি।আমি এই হোটেলটির একজন মেম্বারও।সেরা সেবাটাই পাই আমি এখানে।এখানেও তার ব্যত্যয় হয়নি।১২ তলায় রিভারভিউ একটি রুম দেয়া হলো আমাকে।
দুটো থেকে একটা ট্যুর বুক করা ছিলো আগে থেকেই।কথা ছিলো গাইড আমাকে পিক আপ করবে লবি থেকে।সময় মতই এসে গাইড আমাকে তুলে নিলো।আমাদের প্রথম গন্তব্য সোয়ান টাওয়ার পরিদর্শন।
বাসে বসতেই শুরু হলো গাইডের লেকচার পর্ব।পার্থ শহরটির ইতিহাস -ঐতিহ্য নিয়ে। পার্থ শহরটি সোয়ান নদীর উপর যাত্রা করেছিলো ।আদিবাসীরা এর নামকরন কর ডার্বারি-ইয়েরিগান ।যা ভারত মহাসাগরের সাথে তার সংগম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রীষ্ম এবং শরতের মাসে শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে শহরটি পশ্চিম দিকে পার্থে সমুদ্র উপকূলে পৌঁছে পূর্ব দিকে ডার্লিং রিজে অবস্থিত সোয়ান উপকূলীয় সমভূমির উপর দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৮২৯ সালের মে মাসে ক্যাপ্টেন চার্লস ফ্রেমেন্টল অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ঘোষণা করেছিলেন ।একই বছরের জুনে, ব্রিটিশ অধিনায়ক এবং গভর্নর, স্কটসম্যান জেমস স্টার্লিং উপকূলীয় পাহাড় ডার্লিংয়ের অঞ্চলে পারমেলিয়া জাহাজ থেকে নামিয়ে পূর্ব দিকে গিয়ে সোয়ান উপকূলীয় সমভূমি পেরিয়ে গ্রেট লেকে পৌঁছেছিলেন। তিনি এই জায়গাগুলিকে এত পছন্দ করেছিলেন – সুরম্য, জল, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংমিশ্রণে, তিনি তত্ক্ষণাত পার্থ নামে একচি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সোয়ান নদীর উপনিবেশের প্রথম গ্রাম ছিলো।তৎকালীন যুদ্ধ ও উপনিবেশ মন্ত্রী স্যার ম্যুরের পরামর্শক্রমে স্কটল্যান্ডের পার্থ এলাকার নাম অনুসারে এই শহরটির পার্থ নাম করন করা হয়।১৯৫৬ সালে পার্থ নগরের মর্যাদা লাভ করে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে পার্থেনন স্বর্ন প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৮৫৬ সালে এটি রানী ভিক্টোরিয়ার ডিক্রি দ্বারা একটি শহরের মর্যাদা লাভ করে। আদিবাসীদের সাথে সম্পর্ক সহজ ছিল না, তবে পার্থের পুরো ইতিহাসে তাদের সাথে কোনও উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ হয়নি।
ইউরোপ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর কারণে পার্থ শহরটির জনসংখ্যা এবং তার জাতিগত বৈচিত্র্য বেড়েছে। শহরে বিশেষত প্রচুর ইতালি, গ্রীক, ডাচ, জার্মান, ক্রোয়েট, বসনিয়ান, সার্বস, পোলস, চেক, স্লোভাক, রাশিয়ান, ইউক্রেনীয়, ম্যাসেডোনিয়ান, তুর্কী রয়েছে।
বাস এসে থামলো সোয়ান টাওয়ারের সামনে।স্থাপত্য প্রেমীদের অবশ্যই সোয়ান বাল টাওয়ারটি দেখা উচিত জানালো গাইড।কাঁচের তৈরি বিশ্বের দীর্ঘতম এই বেল টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিলো ২০০৯ সালে।এতে ১৮ টি ঘণ্টা রয়েছে ।এটি লন্ডনের বেল টাওয়ারের আদলে তৈরি।টাওয়ার দেখা শেষ করার পর সবাইকে আধা ঘন্টা সময় দেয়া হলো চা নাস্তা করার জন্য।একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম অন্নপুর্না নামের হোটেলটি।একজন ভারতীয় দম্পতি হোটেলটি পরিচালনা করেন।গরম গরম লুচিয় ভেদে আনলেন।সাথে হালুয়া।বিদেশে দেশীয় খাবারের সত্যিই তুলনা নেই।নাস্তার পরএককাপ চা খেয়ে আবার বাসে এসে বসলাম।
এবার বাস এসে থামলো পার্থ চিড়িয়াখানার সামনে।সব দেশের চিড়িয়াখানার চরিত্রই এক রকম।তবে স্হানীয় কিছু দীব জন্তু দেখা যায় বলে আমি যে দেশে যাই সে দেশের চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করি।তবে পার্থ চিড়িয়াখানার ব্যাপারে আমার অন্য একটু দুর্বলতা ছিলো ।কারণ এখানেই ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ওরাংওটাং পুয়ান।২০১৬ সালে এটি মারা যায়।
গাইড জানালো,সুমাত্রালএই ওরামং ওটাং টার নাম গিনেজ বুক অব রেকর্ডে উঠে যাঁয।এটির ১১ টি বাচ্চা এবং ৫৪ টি বংশধর বিশ্বের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার ছড়িয়ে আছে।গাইড আরো জানালো এই চিড়িয়াখানায় ১৬৪টি প্রজাতির ১২৫৮ রকমের প্রাণী রয়েছে।আছে ক্যাঙ্গারুকে খাওয়ানোর সূযোগ ।
ক্যাঙ্গারু সেকসনেগিয়ে অনেকেই নিজ হাতে তাদের খাওয়ালো।ক্যাঙারুর নামকরণ নিয়ে একটা মজার গল্প শোনালো গাইড।
ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নেমে ক্যাঙ্গারুর দেখা পেয়ে বেশ মুগ্ধ হন, পেটে বাচ্চা নিয়ে লাফিয়ে চলা এই প্রাণীটিকে তার অনভ্যস্ত ইউরোপীয়ান চোখে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য্য মনে হয়। সেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান আর ইউরোপীয়ানদের সাক্ষাত, কাজেই কেউ কারো ভাষা বুঝতে পারার প্রশ্নই আসে না, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া। ক্যাপ্টেন কুক স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে ইশারা-ইঙ্গিতে প্রানীটির নাম জানতে চান। জবাবে স্থানীয় অধিবাসীদের একজনতাদের ভাষায় বল্লো-ক্যাঙ্গারু ।যার অর্থ -আমি জানি না। স্থানীয় ভাষার সেই বাক্যটিকেই ক্যাপ্টেন কুক প্রাণীটির নাম মনে করেছিলেন, আর সেই থেকেই বাকী দুনিয়া প্রাণীটিকে ক্যাঙ্গারু নামে ডেকে আসছে, আদি অস্ট্রেলিয়ান ভাষায় যার অর্থ হল ‘আমি জানি না’।
বেলা পরে এসেছিলো।গাইড জানালো সেদিনের মত ট্যুর এখানেই সমাপ্তি।আগামী দিন সে আবার সকলকে হোটেল থেকে উঠিয়ে নেবে অন্য গন্তব্যে।
-লেখক,সাংবাদিক।সিইও বাংলা ট্যুর।