নিশিথ সূর্যের দেশে

হাবিব রহমানঃ নিউইয়র্ক থেকে স্পেনের বার্সিলোনায় উড়ে এসেছি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তরভুক্ত একটি ছোট্ট দেশ এ্যান্ডোরাঘুরে দেখবো বলে। দেশটি উত্তর থেকে দক্ষিনে ম্বায় মাত্র ২৫ কিলোমিটার ।আর পশ্চিম থেকে পূর্বে ৩০ কিলোমিটার। এটিফ্রান্স এবং স্পেনের সীমান্তে অবস্হিত।পুরো দেশটির সব স্ হাপনাতে মিশে আছে ফরাসী এবং স্পেনীয় স্হাপত্যের নিদর্শন।এটিএকচি ক্যাথলিক ধর্মাবলম্বীদের দেশ।যেখানে জনসংখ্যা কঠোর নিয়মের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠে।এন্ডোরা খুব শান্ত একটি দেশ।অপরাধ নেই । হৈহল্লা নেই । বিক্ষোভ মিছিল নেই। দেশটি স্কি রিসোর্টের জন্য বিখ্যাত।সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ,মৃদু জলবায়ু সারা বছরবিশ্বের পর্যটকদের আকর্ষন করে।
পিরোনিজ পর্বতমালার উপত্যকায় গ
বার্সিলোনায় ট্যুর কোম্পানীর অফি
পুলিশের পরামর্শমত ক্যাফেতে গি
কাউন্টারে আমার টিকিটটি দেখালে
যদিও আমি এ্যান্ডোরা ভ্রমনের উদ্দে
মুখে অপ্রসন্ন ভাব দেখালেও রুপি
শহরের ভিড় ছেড়ে গাড়ি মোটরওয়েতে
গাড়ি ক্রমেই একে বেকে চলছে পা
গাইড জানালো রুপিট নামের ছোট্ট
একসময় আমাদের বাস এসে থামলো গ্
প্রকৃতি কন্যা রুপিট যেন আমাদের
নিচের দিকে তাকালে ভালো করে কি
একটু হেটে আমরা আসলাম একটা পাহা
গোটা গ্রামটাই পর্যটক আকর্ষণের
রুপিট থেকে অনেকগুলি হাইকিং স্প
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছি
আমরা বাসে গিয়ে বসলাম।বাস ছুটে
হাবিব রহমান: গাড়ী ছুটে চলছে ক্যানবেরার রাজপথ ধরে।সূর্য তখন ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমের ব্লাক মাউন্টেনের আড়ালে।গাইড জানালো আমাদের আরো অনেক কিছুই দেখার বাকী।জাতীয় গ্রন্থাগার,বিজ্ঞান প্রযুক্তি যাদুঘর হাইকোর্ট সহ আরো নানা আকর্ষনীয় স্হাপনা।আজ যতগুলি দেখা যায় তা দেখে বাকীগুলো আগামীকাল।আসলে বিদেশে গেলে সময় সংক্ষেপের জন্য সব কিছু ঠিক মত দেখা যায়না বলে আক্ষেপ থেকেই যায়।
পথ চলতে চলতে গাড়ীর জানালা দিয়ে দেখছিলাম ঝকঝকে দোকানপাঠ,টলটলে পানির লেক,সবুজে ছাওয়া পার্ক ,কর্মব্যস্ত মানুষ ইত্যাদি।
গাড়ী এসে থামলো ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে।এটি নির্মিত হয়েছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন নিহত সৈন্যদের স্মরণে।এটি স্মৃতিসৌধ,যাদুঘর ,চিত্র প্রদর্শনী এবং গবেষণা কেন্দ্র নিয়ে গঠিত।১৯৪১ সালে যাদুঘরটি উদ্ধোধন করা হয়।স্মৃতিসৌধে আছে যুদ্ধে ব্যবহ্রত বিভিন্ন অস্র্র শস্রের প্রদর্শনী,নানা করুন এবং ভয়াবহ ইতিহাসের নমুনা।এটিতে ঢুকার জন্য কোন প্রবেশমূল্য নেই।
গাইড জানায়,প্রতিবছর এখানে পালিত হয় “ আনজাক ডে”।আনজাক অর্থ”The Australian & New zeland Army Corps এর সংক্ষিপ্তরুপ((ANZAC)প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯১৫ সালের ২৫এপ্রিল তুরস্কের গালিপোলিতে অবতরন করে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সেনাবাহিনী।এই দিনটিতে স্মরণ করা হয় অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের যোদ্ধাদের যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।তাদের জন্য এখানে স্মরন সভা,প্যারেড ,ইত্যাদি আয়োজন করা হয়।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের(১৯১৪-১৯১৮) শুরু এবং সমাপ্তির ১০০ বছর পুর্তি উপলক্ষ্যে গত চার বছর ধরে সমগ্র অস্ট্রেলিয়ায় আনজাক দিবস পালন করা হয় আড়ম্বরতার সাথে।সূর্যোদয়ের আগে খুব ভোরে অস্ট্রেলিয়ানরা এই ওয়ার মেমোরিয়ালের সামনে এসে সমবেত হয়।শোক সংগীত গায় এবং প্রার্থনা করে।এ সময়ে তারা পুস্প স্তবক অর্পণ করে ও জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে।সূর্যোদয়ের পর মার্চ ও প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়।
গাইড খুব আবেগের সাথে বলে-প্রত্যেক জাতির নিজেদের একটি গল্প থাকে।আর আনজাক ডে হলো আমাদের গল্প।
এরপর আমরা এলাম মাউন্ট এ্যান্সলি।উপরে উঠে পশ্চিমে তাকাতেই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে গেলাম।দূরে ব্লাক মাউন্টেনের দিকে কিং এডোয়ার্ড ট্যারেস, শেষ মাথায় পুরনো সংসদ ভবন, দু পাশে টলটলে পানির লেক-যা শুধু চোখই জুড়ায় না মনও ভরিয়ে দেয়।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছিলো।এবার ফেরার পালা।কাল ফিরে যাবো নিউইয়র্কে।সাথে নিয়ে যাবো অজস্র স্মৃতি ।আমার জন্মভূমি বাংলাদেশের চেয়ে ৫২ গুন বড় দেশ এই অস্ট্রেলিয়া।কিন্তু জনসংখ্যা মাত্র আড়াই কোটি।চমৎকার সুন্দর এই দেশটিতে হয়তো আবার কোনদিন আসা হবে। হয়তো বা না।ততদিন ভালো থেকো অস্ট্রেলিয়া।আপাতত বিদায়।
সারা বিশ্বের লোকরা সিডনিকে নানা রকম নামে আখ্যায়িত করে। সুইট সিডনি,হানি সিডনি, ফানি সিডনি বা আরো কতো রকম নামে। আমি এর নামকরণ করেছি ‘সিটি অব সী গাল’।কারণ সিডনিকে ঘিরে রেখেছে সাগর। আর শহরটির এখানে সেখানে উড়াউড়ি করে সী গাল। অন্য পাখীতো আছেই।সিডনি বন্দর ও পোতাশ্রয় হচ্ছে প্রাকৃতিক।শহরের বিভিন্ন অংশে প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন অংশ ডালপালা মেলেছে।ফলে শহরের সর্বত্র প্রশান্ত মহাসাগরের দেখা মেলে।সাগরের অস্তিত্ব অনুভব করা যায়।শহরের প্রায় ২০ কিলোমিটার জুড়ে কমপক্ষে ৩০ টির মতো সৈকত রয়েছে।প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্য কে সাজিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অধিবাসীরা যে অপূর্ব সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলেছে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতেই পুরো পৃথিবীর মানুষ ছুটে আসে সিডনিতে ।যেমন এসেছি আমি।
পৃথিবীর বহু দেশে বহু সাগর মহাসাগরের সাথে আমার দেখাহয়েছে।ছুটে গিয়েছি সে সব বীচে।কিন্তু এই প্রশান্ত মহাসাগরকে আমি একটা অন্যরকম সমীহ করি।এর নীল জল বা অন্য রকম ঢেউ ই শুধু এর কারণ নয়।এই সমুদ্রতীর পৃথিবীর মোট স্হলভূমিকে ঢেকে দিতে পারে।যার অতল গহ্বরে ডুবে যেতে পারে মাউন্ট এভারেস্ট।তাছাড়া প্রায় ১০ থেকে ১১ হাজার বছর আগে প্রাচীন পৃথিবীতে আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে এক মহাদেশের অবস্থান ছিল। যার নাম ছিলো আটলান্টিস। আয়তনে এশিয়া মাইনর ও লিবিয়ার মিলিত আয়তনের চেয়েও বড় ছিল মহাদেশটি। সবচেয়ে বড় কথা, জ্ঞানবিজ্ঞানে উন্নত, সভ্য আর ক্ষমতাশালী এক জাতির বসবাস ছিল আটলান্টিসে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যের কারণে সে সময় ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্র ছিল মহাদেশটি। শোনা যায়, প্রশিক্ষিত একটি সেনাবাহিনী থাকার কারণে আটলান্টিসের শাসকেরা বর্তমানের ইউরোপ আর আফ্রিকা পর্যন্ত তাঁদের শাসনক্ষমতা বিস্তৃত করেছিলেন।হঠাৎ এক ভুমিকম্পে দ্বীপটি তলিয়ে যায় আটলান্টিকের গর্ভে।আটলান্টিস সমুদ্রগর্ভে ডুবে যাওয়ার কিছু ভূ-প্রাকৃতিক প্রমাণও পাওয়া যায়। কারণ, গড়পড়তা প্রায় ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্ব আগে একটি বড় ধরনের অগ্ন্যুৎপাতের ফলে একটি দ্বীপের অর্ধেক সমুদ্রে ডুবে যাওয়ার প্রমাণ আছে। এ প্রমাণ হাতে নিয়ে গবেষকেরা হারানো আটলান্টিসের খোঁজে চষে ফেলেছেন আটলান্টিক মহাসাগর। তবে সবই বৃথা। এখন পর্যন্ত এর টিকিটিরও খোঁজ পাওয়া যায়নি।তবু বিজ্ঞানীরা হাল না ছেড়ে এখনো সাগরতলে আটলান্টিস খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের দৃঢ় আশা, হারানো আটলান্টিস একদিন না একদিন খুঁজে পাওয়া যাবেই যাবে।
তাই একে সমীহ না করলে কি চলে।!
আজ একটু আগেই নাস্তা শেষ করে লবিতে বসে অপেক্ষা করছিলাম গাইডের জন্য ।বেশ সময় হাতে আছে।রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে পারতাম। কিন্তু ভয় পাচ্ছিলাম যদি ঘুমিয়ে পড়ি।কারণ ক্রমাগত জার্নিতে শরীরটা বেশ টায়ার্ড।তাই রুমে গিয়ে বিশ্রাম্র নিয়ে রিস্কটা নিতে মন চাইছিলনা।
আজ কয়েকদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন শহরে ঘুরে দেখে বার বার মনে হচ্ছিলো সব গুলো শহরই যেন বেশী বেশী সাজানো।সব কিছু যেন ঝকঝকে ছকছকে।শহরগুলো প্লান করে তৈরি।বৃস্টি হচ্ছে ,রাস্তায় কাদা নেই।বৃস্টির পর যেন আরো উজ্জল মনে হয় শহর।উইন্টারে প্রচুর শীত পড়ে অথচ স্নো পরে কম।বড়বড় সিটি ছাড়া হাই রাইজ ভবন খুব কম।পাহাড়ি এলাকা বলে এই শহরের পথ ঘাটবেশ উঁচু নীচু। শহরের মানুষের মাঝে রয়েছে এক অদ্ভুত শৃঙ্খলাবোধ।রয়েছে মার্জিত আচরণ আর একে অপরকে সহযোগীতা করার প্রবনতা।মেলবোর্নে আমার এক বন্ধু বলেছিলো অস্ট্রেলিয়ায় মাথা পিছু আয় বেশী।তবে দেশটি খুবই এক্সপেন্সিভ।তিনি মজা করে বলেছিলেন -সিডনি গেলে কিডনি বন্ধক রাখতে হয়।অর্থাৎ সারা বিশ্বের মধ্যেখরুচে শহর সিডনি। টোকিও বা সিঙ্গাপুরের পরেই এর স্হান।এই কয়েকদিন সিডনি ঘুরতে গিয়ে নিজেই তার প্রমান পেয়েছি।
কাঁটায় কাঁটায় ৮ টায় এসে গাইড আমাদের তুলে নিঁলো।আজ আমাদের প্রথম গন্তব্য মাদাম তুসোর যাদুঘর। মাদাম তুশোর মূল জাদুঘরটি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। তবে অন্যান্য দেশের মত সিডনিতেও এর একটি শাখা রয়েছে। আর এই জাদুঘরটিও কম আকর্ষণীয় নয়।মিউজিয়ামে ঢুকতেই চোখে পড়ে অস্ট্রেলিয়া নামের সুন্দর দেশটির আবিস্কারক ক্যাপ্টেন কুকের মোমের মুর্তি।পুরো কক্ষ জুড়ে জাহাজের মোটা দড়ি পাল ইত্যাদি।গাইড জানালো মাদাম তুশোর জাদুঘরের পৃথিবী বিখ্যাত অনেক কিছু সিডনির জাদুঘরেও দেখা যায়। খেলাধূলা, চলচ্চিত্র, সঙ্গীতের অনেক বিখ্যাত বিষয়ের সঙ্গে এসব বিষয়ের পৃথিবীবিখ্যাত তারকাদেরও এখানে দেখা যায়। এখানে যেমন রয়েছে গান্ধীর বিখ্যাত মোমের মূর্তির সঙ্গে অ্যালবার্ট আইনস্টাইন, অসামান্য চলচ্চিত্রকার আলফ্রেড হিচকক তেমনি চোখ ফেরানো যায়না এমন সুন্দরী ও চলচ্চিত্র তারকা মেরিলিন মনেরো। কিন্তু মোমের এ জাদুঘরটি অষ্ট্রেলীয় বৈশিষ্টেও উজ্জ্বল। প্রথমেই রাজনীতির কথা বলা যায়। দুজন ব্যাক্তিত্বের কথা বিশেষভাবে প্রথমেই উল্লেখ করা দরকার। এঁদের মধ্যে প্রথম আবার স্যার হেনরি পার্কস। অষ্ট্রেলীয় রাজনীতিতে তাঁকে প্রায়ই এই ফেডারেশনের স্থপতি বলা হয়।
তুশোর জাদুঘরে অন্তর্ভুক্ত আরেকজন রাজনীতিবিদ হচ্ছেন বব হ্বক ।তিনি ছিলেন লেবার দলের অন্যতম দীর্ঘমেয়াদী প্রধানমন্ত্রী। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালরে আইন ও শ্রম বিষয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করেন।
তুসোর যাদুঘর দেখে বের হলে গাইড ঘোষণা দিলো আমাদের এখনকার গন্তব্য হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর ক্যানবেরা।অন্য কয়েকটা হোটেল থেকেও কয়েকজন যাত্রী তুললো গাইড।তারপর রওয়ানা দিলো সিডনির উদ্দেশ্যে।
সিডনি থেকে ক্যানবেরা র রাস্তাটা চোখে পড়ার মত।একেবারে সোঝা ।আঁকাবাঁকা নয়।রাস্তায় একবার চা খাওয়ার বিরতি।তারপর সোঝা ক্যানবেরা।
ক্যানবেরা অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী শহর। প্রশাসনিকভাবে এটি অস্ট্রেলীয় রাজধানী অঞ্চলের উত্তর অংশটি গঠন করেছে। ক্যানবেরা একটি আধুনিক ও দ্রুত প্রসারমান শহর। আর্থ-ভৌগোলিকভাবে শহরটি অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বভাগে, অস্ট্রেলীয় আল্পস পর্বতমালার পাদদেশে, একটি সমতল কৃষিপ্রধান অঞ্চলে) তীরে অবস্থিত। সিডনি শহর থেকে ২৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ও মেলবোর্ন থেকে ৬৬০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত শহরটি অস্ট্রেলিয়ার এই দুই প্রধানতম নগরীর মধ্যবর্তী একটি জায়গায় অবস্থিত। জনসংখ্যার বিচারে এটি অস্ট্রেলিয়ার ৮ম বৃহত্তম শহর ও অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরভাগের বৃহত্তম শহর; এখানে প্রায় ৪ লক্ষ লোক বাস করে।
রাস্তায় একটু পর পর স্পিড নির্দেশিকা।এতে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে রাস্তায় স্পিড ক্যামেরা আছে।গাইড জানালো এই ক্যামেরাগুলো হাইওয়েতে ঢোকা এবং বাহির হওয়ার সময় রেকর্ড রাখে।তারপর অতিক্রান্ত দূরত্বকে ভাগ গিয়ে গড়স্পিড বের করে।নির্ধারিত স্পীডের বেশী হলে ডাকে ফাইনের টিকিট পাঠিয়ে দেয়া হয়।
রাস্তার দু পাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে যাচ্ছিলাম। হাইওয়ের দুপাশে বিশাল বিশাল মাঠ।বিশাল দেশটির তুলনায় জনসংখ্যা কম তাই অনেক জমিই অনাবাদী পড়ে আছে।কোথাও কোথাও মাঠে ভেড়া ও গরুর পাল চরছে। দু–একটি ঘোড়া দেখা যাচ্ছে দাঁড়িয়ে আছে। বাসের ভেতর থেকে মনে হচ্ছিল প্রকৃতি যেন দুই হাত মেলে তার সবটুকু দিয়ে সাজিয়েছে এই অপরূপ দেশটাকে।
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বলা হয় বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের একটি।ইউনেস্কো ১৯৮১ সালে এটাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বলে ঘোষনা দিয়েছে।এছাড়া মহাশূন্য থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটা বস্তু দৃশ্যমান তার মধ্যে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অন্যতম।অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করবো আর এই রিফটি দেখবোনা তাতো হবার নয়!তাই দর্শনীয় তালিকায় এই নামটি আগেই লিস্ট করেছিলাম।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী পার্থ ভ্রমন শেষে আজ বিকালের ফ্লাইটে এসে যাত্রা বিরতি করেছি ব্রিসবেন এয়ারপোর্টে।নিউইয়র্ক থেকে কোন অবস্হাতেই সরাসরি কোন ফ্লাইট ম্যানেজ করতে পারিনি।যেজন্য রাস্তায় ব্রিসবেন এয়ারপোর্টে বিরতি দিতে হবে প্রায় ১৩ ঘন্টা ।কোয়ানটাস এয়ারের বিমানটি পার্থ ছেড়েছে বিকাল ৩টা ২০ মিনিটে।রাত নয়টায় এসে ল্যান্ড করেছে এখানে।হ্যামিল্টন আইল্যান্ডের উদ্দেশ্যে আমার পরবর্তী ফ্লাইট পরদিন সকাল সাড়ে দশটায়।এই দীর্ঘ সময় এয়ারপোর্টে বসে থাকা বিশেষ করে রাত জাগা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তাই আগে থেকেই এয়ারপোর্টের বেস্ট ওয়েস্টার্ন হোটেলে একটি রুম বুক করে রেখেছিলাম।এতে আমার এক ঢিলে দু পাখী মারা হবে।প্রথমত:রাত জাগতে হবেনা।আর দ্বীতিয়ত রাতে কিছুটা সময় শহরটি ঘুরে দেখতে পারবো।
ভ্রমনে বিমান বিরতির এই সুযোগটা সব সময় আমি কাজে লাগাই।২০১৮ সালে স্কানডেনেভিয়ান দেশগুলি ভ্রমনের সময় নরওয়ে থেকে সুইডেন যাবার পথে দীর্ঘ বিরতিতে ট্রমসো শহরটি ঘুরে দেখেছিলাম।আইসল্যান্ড থেকে কায়রো যাবার সময় এথেন্সে লম্বা বিরতিতে শহরটি ঘুরে দেখার সূযোগ হয়েছিলো।
আগেই জেনেছিলাম ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলের একটি শহর। এটি কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী এবং ব্রিসবেন নদীর তীরে মোরটন উপসাগরের কাছে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। ব্রিসবেন নদীতে ড্রেজ করে শহরটিতে সমুদ্রগামী জাহাজের আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশম এ শহরের প্রধান রপ্তানিকৃত দ্রব্য। অন্যান্য রপ্তানির মধ্যে আছে বরফজমা মাংস, চামড়া, চিনি, দুগ্ধজাত দ্রব্য, ভুট্টা, মুক্তার খোল এবং কয়লা। শহরটি রেলপথের মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়ার সমস্ত প্রধান স্থানগুলির সাথে যুক্ত। গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন কেন্দ্র ব্রিসবেনে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, চামড়া পাকাকরণ, মোটরযান জোড়া লাগানো, মদ চোলাইকরণ, এবং কাঠ, কাপড়, তামাকজাত দ্রব্য, বুট ও জুতার উৎপাদন করা হয়। ব্রিসবেন একটি সুপরিকল্পিত নগরী। এর রাস্তাগুলি চওড়া, এখানে বহু নগর উদ্যান ও অনেক আধুনিক দালান আছে। উল্লেখযোগ্য স্থাপনার মধ্যে আছে সংসদ ভবন, টাউন হল বা নগর ভবন, ব্রিসবেন জাদুঘর এবং কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
১৮২৪ সালে ব্রিটেনের অপরাধীদের রাখার জন্য ব্রিসবেন প্রতিষ্ঠা করা হয়। ব্রিটিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও প্রশাসক, তৎকালীন নিউ সাউথ ওয়েল্স রাজ্যের গভর্নর টমাস ব্রিসবেনের নামে শহরটির নামকরণ করা হয়। শহরটিকে ১৮৪২ সালে বসতি স্থাপনের জন্য খুলে দেয়া হয় এবং ১৮৫৯ সালে এটি নতুন রাজ্য কুইন্সল্যান্ডের রাজধানীতে পরিণত হয়।
ব্রিসবেন শহরটি ‘সান শাইন স্টেট’ নামেও পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি বলা চলে এই ব্রিসবেনকে।এখানে পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি যেমন ‘দ্য ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ড’ আছে। সারা বিশ্ব থেকে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা করতে আসে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাই শহর জুড়ে বহুমুখী সংস্কৃতির চর্চা সারাবছর লেগেই থাকে। এই রাজ্যের আয়ের একটা বড় অংশ আসে বিদেশি ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে।
ব্রিসবেনের আবহাওয়া অনেক ভালো। বরফ পরে না। সারাবছরই তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। যারা বিভিন্ন ঋতু পছন্দ করেন, তাদের জন্য তো ব্রিসবেন অসাধারণ। বছরের শেষের দিকে শুধু মাস দুয়েকের মত গরম পড়ে। বাংলাদেশে যখন ঠাণ্ডা পরে এইখানে তখন গরম পড়ে।
আগেই জেনেছিলাম ব্রিসবেনে প্রচুর বাংলাদেশীর বসবাস।আর এর পরিচয়ও পেলাম হাতে নাতে।এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়াতেই সিরিয়াল অনুয়ায়ী যে ট্যাক্সিটি এসে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো তার চালক একজন বাংলাদেশী।বিদেশে অনেক বাংলাদেশীকে দেখেছি তারা হীনমন্যতায় ভুগেন।পরিচয় দিতে কুন্ঠা বোধ করেন।দেশে হয়তো ভালো অবস্হানে ছিলেন।বিদেশে গিয়ে গাড়ী চালাচ্ছেন এটাই হয়তো তার কুন্ঠার বড় কারন।
আমার চালক আলমগীর খুবই সপ্রতিভ একজন মানুষ।দেশের বাড়ী কুমিল্লায়।দীর্ঘদিন এ দেশে আছেন।তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বল্লাম যাচ্ছি গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ দেখতে।যাত্রা বিরতিতে থেমেছি এখানে।তিনি যদি অনুগ্রহ করে শহরটি ঘুরে দেখান তাহলে খুশী হবো।তিনি মিটার চালু করে নেমে পড়লেন রাস্তায়।
ব্রিসবেনের বড়রাস্তা ধরে গাড়ী চলছে শহরের দিকে।আলমগীর জানান,বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ব্রিসবেন এখানে আম্ব্রেলা সংগঠন।তাদের উদ্যোগে এখানে আড়ম্বরের সাথে পালিত হয় বাংলাদেশের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলো।এখানকার কিয়ংপার্কে অনুষ্ঠিত হয় বাংলা বর্ষবরণ শোভাযাত্রা।
তিনি আরো জানান ,৯০ দশকের দিকে ব্রিসবেনে বাংলাদেশীদের পরিমান ছিলো হাতে গোনা।আর এখন তা বেড়ে হয়েছে কয়েকহাজার।আছে বাংলা স্কুল এবং বাংলাদেশী পরিচালিত একটি কমিউনিটি রেডিও স্টেশন -যা শুনে খুব ভালো লাগলো।
আলমগীর গাড়ী থামালেন ব্রিসবেন নদীর পাড়ে।নদীর দুই পাশে সুরম্য হাই রাইজ দৃস্টি নন্দন ভবন।ভবনের আলোগুলি নদীর পানিতে প্রতিফলিত হয়ে ঝলমল করছিলো।তিনি জানান পুরো শহরটাই পরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে।প্রতি সন্ধ্যায় এই নদীতে অনুষ্ঠিত হয় লাইট এন্ড লেসার শো।শত শত দর্শনার্থী তা উপভোগ করেন।এই নদীতে বিনে পয়সায় নৌ ভ্রমনেরও ব্যবস্হা রয়েছে।
এরপর একে বেকে গাড়ী চালিয়ে আলমগীর আমাকে নিয়ে একটি একটি পাহাড়চুড়ায়।জায়গাটার নাম মাউন্ট কোট-থা।বাংলায় অর্থ করলে দাড়ায়,এখানে মধু পাওয়া যায়।আলমগীর জানান ,আদি বাসীরা এই পাহাড় থেকে মধু সংগ্রহ করতো।জায়গাটা সমুদ্র পৃস্ট থেকে ২৮৭ মিটার উঁচুতে।এখান থেকে পুরো ব্রিসবেন শহরটা দেখা যায়।পূর্নিমা রাতে এখানে এসে অনেকে সারা রাত থেকে চাঁদের আলোতে প্রকৃতির শোভা উপভোগ করে থাকেন।
এরপর আমরা এলাম সমুদ্রের পাড়ে।জায়গাটা নাকি সার্ফারদের জন্য স্বর্গ।রাতের বেলা বলে সৈকতের শোভা উপভোগ থেকে বন্চিত হলাম।তবে এজন্য আমার আফসোসও ছিলোনা।কারন এমনিতেই আমি বিশ্বের দেশে দেশে ঘুরে ফিরে নানা দেশের সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করি।তা ছাড়াবিশ্বের সবচেয়ে বড়সাগর সৈকত আমার দেশের কক্সবাজারে।
আলমগীর আফসোস করে বলছিলো আমাকে ‘সাউথ ব্যাঙ্ক’ এ নিয়ে যেতে পারেনি বলে।একদিন থাকলে সখানে তিনি আমাকে নিয়ে যেতেন।তিনি জানান সাউথ ব্যাঙ্ক হচ্ছে একটা জনপ্রিয় জায়গা। অনেককিছুর পাশাপাশি এখানে মানুষের বানানো সমুদ্র সৈকতের মতো জায়গা আছে যেখানে বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্করা পর্যন্ত পানিতে নেমে সাঁতার কাটতে পারে। দেখলে বোঝাই যাবে না যে এটা একটা বানানো বিচ। একদম ফ্রি। আছে সহজ পার্কিং ব্যবস্হা।আপনি যেখানেই যান না কেন পাশেই কোথাও না কোথাও পার্ক খুঁজে পাবেন। ইচ্ছামতো বিশ্রাম নিতে পারবেন।
ব্রিসবেন শহরটি ঘুরে দেখতে গিয়ে রাত হয়েগিয়েঁছিলো।তাই আলমগীরকে বল্লাম গাড়ী ঘুরাতে।হোটেলে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিতে হবে।কাল সকালেই উড়াল দিতে হবে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের উদ্দেশ্যে।
—-লেখক,সিইও-বাংলা ট্যুর।
যাচ্ছি বিশ্বের প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের অন্যতম , অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ দেখতে। রাস্তায় যাত্রা বিরতি ছিলো কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনে। স্হানীয় বাংলাদেশী আলমগীরকে সাথে নিয়ে বলা যায় সারা রাত চষে বেড়িয়েছি ব্রিসবেন শহরটি। ভোররাতে হোটেলে ফিরে একটু ঘুম।তারপর সকালে হোটেলেই নাস্তা সেরে আবার এয়ারপোর্টে।আলমগীরই আমাকে এয়ারপোর্টে পৌছে দিয়েছে।তাকে ধন্যবাদ জানালাম।আলমগী না থাকলে হয়তো এত অল্প সময়ে আমার ব্রিসবেন শহরটি ঘুরে দেখা সম্ভব হতোনা।রাতে মিটার অনুযায়ী তাকে ভাড়া দিতে পারলেও সকালে এই ট্রিপের জন্য কোন অর্থ নিতে রাজী হলোনা।প্রবাসে স্বদেশীরা যে কতো আপন হয় আলমগীর তা আবার প্রমান করলেন।
ব্রিসবেন থেকে হ্যামিল্টন আইল্যান্ড এয়ারপোর্টের দুরত্ব আকাশ পথে সময় লাগলো ১ঘন্টা ৫৫ মিনিট।সিটে বসে লান্চ খাওয়া শেষ না করতেই ঘোষনা এলো সিট বেল্ট বাঁধার।অর্থাৎ নামার সময় হয়ে গেছে।
এয়ারপোর্টের ফর্মালিটি সারতে খুব বেশী বিলম্ব হয়নি।লাগেজ ঠেলে বাইরে বেরোতেই দেখলাম আমার নাম লেখা প্লাকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে আছে রিফ ভিউ হোটেলের একজন কর্মী।হোটেল বুক করার সময়ই জেনেছিলাম তাদের এয়ার পোর্ট সাটল সার্ভিস আছে।তাদের আমার বিমানের সময়সূচি জানিয়েদিয়েছিলাম সে সময়েই।সঠিক সময়েই তারা এসে আমাকে তুলে নিলো। লাগেজেও আমার হাত লাগাতে হলোনা।হোটেলের ড্রাইভার এবং স্টাফ দুজনকেই এক নজরেই ভালো লাগলো।
৩৬৮ টি গেস্ট রুম নিয়ে আমার রিফ ভিউ হোটেলটি এক নজর দেখেই ভ্রমনের ক্লান্তি সব দূর হয়ে গেলো।টপ ফ্লোরে রুম দিতে বল্লাম।খুব দ্রুত রিসিপসনের কাজ শেষ করে উঠে এলাম আমার রুমে।রুমের সামনে ব্যালকনি।সামনে সুনীল কোরাল সাগর মন ভালো করার জন্য যথেস্ট।রুমে হাত মুখ ধুয়ে জামা কাপড়ছেড়ে নীচে নামলাম ডিনারের জন্য।সারা শরীর ক্লান্তিতে ছেয়ে আছে।ডিনার সেরে রুমে এসে ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম বিছানায়।সকাল ৮টায় গাইড এসে তুলে নেবে।এর আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে তৈরি হয়ে নিতে হবে আমাকে।
কাঁটায় কাঁটায় সকাল ৮ টায় গাইড এসে হোটেল লবি থেকে আমাকে তুলে নিলো।রিফে সাড়ে আট ঘন্টা কাটবে তার সাথে। স্মরকেলিং ছাড়াও অন বোর্ড বারবিকিউ লান্চ অন্তর্ভুক্ত এই ট্যুরে ।পৃথিবীর অনেক জায়গায় আমি স্মরকেলিং এ অংশ নিয়েছি।তাই এ নিয়ে আমার তেমন আগ্রহ নেই ।জাহাজ থেকে রিফের দৃশ্য অবলোকন করাই আমার বেশী আগ্রহ।
১০০ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে বোটটি ছাড়লো।বেশ বড়সড়বোট।একটু পরেই শুরু হলো গাইডের লেকচার।বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে গাইডের লেকচার শোনার খুব একটা প্রয়োজন হয়না।একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই সব তথ্য হাতের নাগালে এসে যায়।কিন্তু গাইডের ডিউটি তাকে পালন করতেই হয়। তাই অনিচ্ছা থাকলেও কান পাতলাম তার বক্তৃতায়।
অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকুলের কাছে এই গ্রেট ব্যরিয়ার রিফ পৃথিবীর সপ্তার্শ্চর্যের অন্যতম ।এখানে ২৯০০ পৃথক পৃথক প্রবাল প্রাচীর প্রায় ১৬০০ মাইল জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে আছে।প্রবাল,পলিপস ইত্যাদি কোটি কোটি অর্গানিজম দ্বারা এই রিফ কাঠামো গঠিত।
বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। প্রাণী হলেও এরা চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে কোনো এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে এরা সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।
এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।
প্রবাল প্রাচীরগুলো দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এগুলো বাদামি, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, ইত্যাদি নানান রঙে রঙানো থাকে। একই প্রাচীরের আলাদা আলাদা অংশ আলাদা আলাদা আকারের হতে পারে, যেমন, হরিণের শিং, মৌমাছির চাক, মানুষের মস্তিষ্ক, ইত্যাদি। প্রবাল প্রাচীরের মূল উপাদান প্রবাল-ক্ষরিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। এছাড়াও প্রাচীরে বসবাসকারী অ্যালজি, স্পঞ্জ ও অন্যান্য জীবরা এতে নানান উপাদান যোগ করে এর বর্ণবৈচিত্রকে আরো বাড়িয়ে তোলে।
কুইন্সল্যান্ড ন্যাশনাল ট্রাস্ট এই রিফকে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের প্রতীক হিসাবে ঘোষণা করেছে। এটি শুধু একটি বিশ্বের বিখ্যাত পর্যটন স্হানই নয় পাশাপাশি একটি সমৃদ্ধ বৈজ্ঞানিক নিদর্শনও বটে।এখানে ৪০০ প্রজাতির কোরাল এবং ১৫০০ প্রজাতির মাছের আবাসস্হল রয়েছে। এছাড়াও ১৩৩ প্রজাতির হাঙর সহ অন্যান্য বৃহদাকার সামুদ্রিক মৎস, অসংখ্য প্রজাতির জেলিফিশ, ঝিনুক, শামুক এবং ত্রিশটিরও বেশি প্রজাতির তিমি মাছ ও ডলফিন রয়েছে৷
এছাড়াও গ্রেট ব্যারিয়ার জীববৈচিত্রের জন্য অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত। বৈচিত্রপূর্ণ জীবের উপস্থিত ছাড়াও এখানে ডুগং বা সমুদ্রধেনু এবং সবুজ কচ্ছপের মত বিলুপ্তপ্রায় প্রানীর উপস্থিত রয়েছে। সমুদ্রধেনু হচ্ছে গাভীর মত দেখতে বিশাল এক ধরণের উদ্ভিদভোজী প্রাণী। যাদের অস্তিত্ব এবং উপস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার ছাড়া অন্য কোথাও নেই।
কিন্তু দূষণ ও মানবসৃষ্ট কারণে গত কয়েক দশক ধরে এই রিফের অবস্হান হুমকির মুখে।
গাইড আরো জানায় ১৯৮৪ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের অ্যাবট বন্দরটি কয়লা রপ্তানিকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে৷ সম্প্রতি সরকার এটার সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে৷ কিন্তু এতে রিফের পরিবেশ আরও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন পরিবেশবাদীরা।
আরো একটা আশংকার কথা জানালো গাইড। তা হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কচ্ছপরা বিভিন্ন দ্বীপের সৈকতের বালুতে যৌনক্রিয়া করে থাকে৷ এক্ষেত্রে বালুর তাপমাত্রা একটা বড় ব্যাপার৷ বড় বন্দরের কারণে আশেপাশের এলাকার তাপমাত্রা বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে কচ্ছপরা বিপদে পড়তে পারে।
গাইড জানায় ধারণা করা হয় ২০ হাজার বছর পূর্বে যখন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের গঠন শুরু হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়া প্রায় ৬০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তবে এর গঠনপ্রণালী থেকে ধারনা করা হয়, প্রাচীরের একটা বৃহৎ অংশ কোন একসময় মহাদেশীয় দ্বীপ ছিল যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থান করলেও সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকলে মহাদেশীয় দ্বীপটি একসময় পানিতে ডুবে গিয়ে প্রবাল প্রাচীরের উপরে অবস্থান করে।
ইতিমধ্যে আমরা বোটে
করে প্রায় ঘন্টা খানিক সময় পার করেছি।যারা স্মারকলিংয়ে অংশ নেবে তারা প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছে।তাদের উদ্দেশ্যে নির্দেশনা দিচ্ছে গাইড।যেমন পানির নীচে কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া যাবেনা।নীচে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে কি সাইন দেখাতে হবে।অথবা অসুস্হ বোধ করলে উপরে উঠিয়ে নেবার জন্য কি সাইন দেখাতে হবে ইত্যাদি।
ডাইভিং ,স্মরকেলিং একটি উত্তেজনাপূর্ণ বিনোদন।ইতোপূর্বে আমি বাহামার বিভিন্ন দ্বীপে ভ্রমন করে এই বিনোদন গুলির স্বাদ নিয়েছি।তাই এবার তা থেকে বিরত থেকে কোরাল সমুদ্রের সৌন্দর্য দেখাতেই মগ্ন থাকলাম।
একসময় অপরুপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ,পৃথিবীর একমাত্র প্রবাল প্রচারী ভ্রমন শেষ হলো।সারা বিশ্ব থেকে বছরে প্রায় ২০ লাখের বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে এখানে।নিজকে ধন্য মনে হলো।পৃথিবীটা এত বড় যে এই ছোট জীবনে হয়তো আর এখানে আসা হবেনা।মহান সৃস্টি কর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানালাম। কাল ফিরে যাবো সিডনিতে।
—-লেখক সিইও ,বাংলা ট্যুর ।