Categories
মধ্যপ্রাচ্য

মক্কার স্মৃতিময় স্থান

মক্কায় মসজিদে নামিরা
মক্কায় মসজিদে নামিরা

বিশ্ব মুসলিমের মহা সম্মিলন এবং অসখ্য নবী ও রাসুল (সা:)-দের স্মৃতি বিজরিত আরাফাতের ময়দান ছেড়ে যেতে মন চাচ্ছিলো না। তারপরও যেতে হয়। তালিকার দর্শণীয় অনেক স্থান তখনো দেখার বাকী। তাই আস্তে আস্তে গিয়ে তারিফের গাড়ীতে গিয়ে বসলাম। এক পর্যায়ে গাড়ী এসে থামলো আরাফাত ময়দানের শেষ সীমানায় মসজিদে নামিরার সামনে।
হজ্ব করতে আসা প্রত্যেকের কাছে মসজিদে নামিরা একটি পরিচিত নাম। আরাফা ময়দানের পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত এই মসজিদ থেকেই হজ্বের খুৎবা দেয়া হয়। মসজিদের পশ্চিম পাশে ছোট একটি পাহাড় রয়েছে। যার নাম নামিরা। এই পাহাড়ের নামানুসারেই মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে। মসজিদে নামিরার আয়তন ১ লাখ ১০ হাজার বর্গমিটার। এখানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। হজ্বের সময় ছাড়া বছরের অন্য সময় এই এলাকায় শুধু দর্শনার্থী ছাড়া স্থানীয় কেউ থাকে না। তাই মসজিদটি বেশীর ভাগ সময় বন্ধ থাকে।
বিদায় হজ্বের সময় এখানেই রসুল (সা:) এর তাবু স্থাপন করা হয়েছিলো। এখান থেকেই তিনি হজ্বের খুৎবা প্রদান এবং নামাজে ইমামতি করেন। যেখানে তিনি দাঁড়িয়ে হজ্বের খুৎবা প্রদান এবং ইমামতি করেন ঠিক সেই জায়গাতেই হিজরীর দ্বিতীয় শতকে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। বর্তমানেও এই মসজিদ থেকে হজ্বের খুৎবা দেয়া হয়। স্থানীয় সময় অনুসারে সাধারণত: খুৎবা শুরু হয় দুপুর ১২টা ১৬ মিনিটে এবং শেষ হয় ১টা ১৬ মিনিটে। সৌদী আরবের রাজকীয় মুফতি এই খুৎবা প্রদান করে থাকেন। হজ্বের খুৎবা শেষে এখান থেকেই জোহরের আজান হয় এবং একই আজানে দুই একামতে জোহর ও আসরের কসর দুই রাকাত নামাজ আদায় করা হয়। এই স্থানেই ফেরেস্তা হযরত ইব্রাহীম (আ:)-কে হজ্বের নিয়ম-কানুন শিক্ষা দিয়েছিলেন। মসজিদে নামিরা খুবই দৃষ্টি নন্দন। এটাতে রয়েছে ৬০ মিটার উচু ছয়টি মিনার, তিনটি গুম্ভুজ, ১০টি প্রধান প্রবেশদ্বার এবং ৬৪টি দরজা। এই মসজিদটির কাছেই রয়েছে জাবালে রহমত হাসপাতাল। যেখানে আরাফাতের দিনে অসুস্থ হাজীদের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা দেয়া হয়।
আমরা যখন মসজিদে নামিরার কাছে গিয়ে নামলাম তখন এটি বন্ধ ছিলো। মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে মুনাজাত করে আবার গাড়ীতে গিয়ে বসলাম। একটু পড়ে গাড়ী এসে থামলো মসজিদে খায়েফের সামনে। এই জায়গাটি মিনায় অবস্থিত এবং মক্কা থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। সওর পাহাড়ের বিপরীত দিকে পাহাড়ের অদূরে অবস্থিত এই মসজিদের উচু মিনারগুলো দূর থেকেই চোখে পড়ে। পাহাড়ের চেয়ে নীচে এবং সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উঁচু স্থান-কে আরবী পরিভাষায় খায়েফ বলা হয়। আবার দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যাকাসম ভূমিকেও খায়েফ বলে আরবরা। জানা যায় নবী করীম (সা:) এখানে ৭০জন নবী নামাজ আদায় করেছেন এবং তাঁরা এখানেই সমাহিত। এই মসজিদে ৩০ হাজার মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদটির চারকোনায় ৪টি সুউচ্চ মিনার এর সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। মসজিদের সামনে স্থাপিত সাইনবোর্ডে অনেকগুলো ভাষায় মসজিদের নাম লেখা রয়েছে। এরমধ্যে বাংলা ভাষাও একটি।
এরপর আমরা এলাম আরো একটি ঐতিহাসিক স্থান মুজদালিফায়। এর অর্থ মিলিত হওয়া, কাছে আসা, নৈকট্য হাসিল করা ইত্যাদি। স্থানটি আরাফাত ও মিনার মাঝামাঝিতে অবস্থিত একটি উপত্যকা। আদি পিতা হযরত আদম (আ:) এবং আদি মাতা বিবি হাওয়া (আ:) এর আরাফাত প্রান্তরে প্রথম সাক্ষাতের পর তারা মুজদালিফাতে রাত্রি যাপন করেন। ৯ জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর হাজী সাহেবানরা আরাফাতের মাঠ থেকে এই মুজদালিফায় আগমন করেন এবং এখানে এসে এশার ওয়াক্তে মাগরিব ও এশার নামাজ পর পর একত্রে আদায় করেন। ইসলামী সাম্যের সবচেয়ে সেরা দৃষ্টান্ত এই মুজদালিফা। নীচে খালি মাঠ, উপরে খোলা আকাশ, খালি মাথা, খোলা পা, কাফনের কাপড় পরিহিত সাম্যের এরচেয়ে বড় নজির আর হতে পারে না। এখান থেকে বুটের দানার আকার পাথর সংগ্রহ করে পরদিন মিনায় গিয়ে শয়তানকে মারতে হয়।
হজ্বের সময় যেসব স্থানে যেতে হয় আমরা তারিফের সাথে সেই জায়গাগুলোই ভ্রমণ করছিলাম। আরাফাত, মুজদালিফার পর আমরা এলাম মিনায়। মক্কা থেকে মিনার দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। এর আয়তন ২০ বর্গ কিলোমিটার। হজ্বের সময় ১১ ও ১২ জিলহজ্ব হাজী সাহেবানরা এখানে অবস্থান করেন এবং প্রতিদিন তিনটি শয়তানের প্রতীক স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করেন। হজ্বের প্রধান করনীয় বিষয়গুলো পালন করতে হয় আরাফাত মুজদালিফায় এবং মিনায়। অন্য দুটি স্থানের মতো এই মিনারও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। হযরত ইব্রাহীম (আ:) স্বপ্নে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি কোরবানী করার জন্য আদিষ্ট হয়ে প্রিয়তম পুত্র নবী হযরত ইসমাইল (আ:)-কে কোরবানী করার সিদ্ধান্ত নেন। পুত্রকে নিয়ে তিনি এই মিনায় পৌছে শয়তান তিন স্থানে তাদের আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে নিবৃত হওয়ার জন্য প্ররোচিত করে। এমন অবস্থায় তারা পাথর মেরে শয়তানকে তাড়িয়ে দেন। তারপর এই মিনার-ই এক স্থানে পুত্র ইসমাইল (আ:)-এর গলায় ছুড়ি চালিয়ে দিলে আল্লাহর তরফ থেকে তা করতে নিষেধ করা হয়। এবং এটা যে পরীক্ষা ছিলো তা ঘোষিত হয়। এরপর পুত্রের পরিবর্তে একটি বেহেস্তী দুম্বা কোরবানী দেন হযরত ইব্রাহীম (আ:)। পিতা-পুত্রের সেই ত্যাগের ঘটনা স্মরণে প্রতি বছর হাজীরা মিনায় পাথর নিক্ষেপ ও কোরবানী করে থাকেন। হযরত ইব্রাহীম (আ:) নবী হযরত ইসমাইল (আ:)-কে যে স্থানে কোরবানী করতে চেয়েছিলেন, সে জায়গাটি চিহ্নিত থাকলেও চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া থাকায় কাছে যাওয়া হয়নি। মিনায় বেশ কয়েকজন বাংলাদেশীর সাক্ষাৎ পেলাম, যারা এখানে কাজ করেন। প্রচন্ড রৌদ্রে পুড়ে তাদের চেহারা ছাই বর্ণ ধারণ করে আসে দেখে খুবই কষ্ট লাগলো।
মিনা থেকে আমরা এলাম মসজিদে জ্বীন দেখতে। এটিও একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। ইসলামের প্রাথমিক যুগে জ্বীনরা এখানে রাসুল (সা:)-এর কাছে ইমান এনেছিলো। এই মসজিদটি মসজিদে জীন নামে পরিচিত। ইতিহাসে আছে একদিন এখানে মহানবী (সা:) নামাজ আদায়কালে আকাশ পথে যাওয়ার সময় একদল জ্বীন কোরআনের অভিনবত্ত্ব ও সুমধুর সুরে আকৃষ্ট হয়ে থমকে যায় এবং এই ঘটনা তারা তাদের জাতির কাছে তুলে ধরে। অতপর তারা এই মসজিদের স্থানে এসে ঈমান এনে ইসলাম গ্রহণ করে।
মসজিদে জীন জিয়ারত শেষে আমরা এলাম জান্নাতুল মোয়াল্লা কবর স্থানে। এটি মসজিদুল হারাম থেকে অল্প দূরত্বে অবস্থিত। এখানে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর দাদা আবু মুত্তালিব, চাচা আবু তালিব, তাঁর প্রথম স্ত্রী বিবি খাদিজা, বড় ছেলে কাসিম, ইসলামের প্রথম শহীদ সোমাইয়া সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির কবর রয়েছে। জান্নতুল মোয়াল্লা মক্কার সবচেয়ে বড় কবরস্থান। মোয়াল্লা শব্দের অর্থ হচ্ছে উঁচু। এই কবর স্থানটি একটি উঁচু স্থানে অবস্থিত বলে এটাকে মোয়াল্লা বলা হয়।
সকাল থেকে ঘুরে ঘুরে সবাই ছিলাম ক্লান্ত। তাই গাইড তারিফ-কে বললাম সেদিনের মতো জিয়ারতে বিরতি দিয়ে হোটেলে পৌছে দিতে।

Categories
মধ্যপ্রাচ্য

অনিন্দ সৌন্দর্যের মক্কা

ক’দিনের ইউরোপ সফরে শরীর ও মন ক্লান্তিতে অবসন্ন ছিলো। তাই মক্কায় হোটেলের বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই হারিয়ে গেলাম ঘুমের গভীরে। এক সময় ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি বেলা ১০টা বাজতে চলেছে। তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে রওনা দিলাম রেষ্টুরেন্টের দিকে। বিদেশ যাত্রার সময় যখনই হোটেল বুকিং দেই সাথে ব্রেকফাস্ট অন্তর্ভূক্ত রাখি। এতে খরচ একটু বেশী হলেও সময় বাঁচে। তবে হোটেলের ব্রেকফাস্ট খেতে হলে সময়মতো হাজিরা দিতে হয়।
৫টি ভবন নিয়ে আমার বিশাল হোটেলটিতে ৪৭৬টি ডিপ্লোমেটিক রুম, ১২০টি এক্সিকিউটিভ স্যুট, ৬০টি রয়েল স্যুট, একেকটা ভবনে একেক ধরনের রেষ্টুরেন্ট। কোনটা এশিয়ান, কোনটা মরোক্কান, কোনটায় বা মধ্যপ্রাচীয় দেশের খাবার। রুম থেকে বেরিয়েই সাইন চোখে পড়লো এশিয়ান রেষ্টুরেন্টের। সময় থাকলে হয়তো খুঁজে পেতে অন্য দেশীয় খাবারের স্বাদ নিতাম। কিন্তু সময় স্বল্পতার জন্য খোঁজাখুঁজিতে না গিয়ে এশিয়ান রেষ্টুরেন্টেই রওনা হলাম। রেষ্টুরেন্ট এখনো খোলা আছে কিনা জানতে চাইলে একজন ওয়েটার খাটি বাংলায় জবাব দিলো সমস্যা নেই। তারা আমাকে বুফে খাবার দেখিয়ে দিলো। বিশাল আয়োজন। রেষ্টুরেন্টে বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, ভারতীয় এবং বার্মার সব স্টাফ। এই শিফটের ম্যানেজার একজন পাকিস্তানী। কিচেনেও কয়েকজন বাংলাদেশী কাজ করেন। বুফের বাইরে কিচেন থেকে বিশেষ কোন খাবার বানিয়ে আনবে কিনা জানতে চাইলে আমি তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে রওনা দিলাম হেরেম শরীফের দিকে।
হোটেলের শ্যাটল প্রতি ১৫ মিনিট পরপর হেরেম শরীফের দিকে ছেড়ে যায়। আমি উঠতে না উঠতেই বাস ছেড়ে দিলো। যাত্রীদের প্রায় সবাই এহরাম পড়া, মুখে তালবিয়া (লাব্বায়েল আল্লাহুমা লাব্বায়েক…….)। অল্পক্ষণেই পৌছে গেলাম হেরেম শরীফের গেটে। এক্সেলেটর দিয়ে একটু উপরে উঠলেই হেরেম শরীফ চত্ত্বর। তারপর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই পবিত্র কাবা শরীফ। সারা দুনিয়ার মুসলামানদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান এই বায়তুল্লাহ। চোখের সামনে কাবাঘর দেখে অজান্তেই দুগন্ড বেয়ে অশ্রু নেমে এলো। আমি কি সৌভাগ্যবান! দ্বিতীয়বারের মতো এই পবিত্র ঘর জিয়ারত করার সৌভাগ্য হলো।
মক্কায় জাবালে নূরতারপর তাওয়াফ শুরু হলো। কাবা শরীফের যে কোনায় হাযরে আসওয়াদ ঠিক সেই কোনা বরাবর নীল দাগ থেকে তাওয়াফ শুরু হয় এবং কাবা ঘরের চতুরদিক ঘুরে আবার সেই নীল দাগ স্পর্শ করলে তাওয়াফ সম্পন্ন হয়। কোন সময় হাত দিয়ে পবিত্র কাবাঘর ধরে, কখনো মাকামে ইব্রাহীম ছুঁয়ে, কখনো হাযরে আসওয়াদ বা কালো পাথরকে দূর থেকে চুমু খেয়ে ৭ বার তাওয়াফ সম্পন্ন করলাম।
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের পাশে দু’রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম। কিন্তু এতই ভীড় ছিলো যে, একটু দূরে নামাজ আদায় করে সাঈ করতে গেলাম। সাঈ হচ্ছে সাফা এবং মারুয়া পাহাড় দু’টির মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় পর্যন্ত আসা-যাওয়া করা। দু’বার যাওয়ার পর আমি আর পারছিলাম না। বয়স যে হয়েছে তা টের পাচ্ছিলাম। যাদের হাটতে অসুবিধা হয়, তাদের জন্য হুইল চেয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। ৭৫ রিয়াল দিয়ে একটা হুইল চেয়ার ভাড়া করে সাঈ শেষ করলাম। পরের দিন অবশ্য ৫০ রিয়ালেই হুইল চেয়ার ভাড়া পেয়েছিলাম। বুঝলাম এখানেও দরদাম চলে।
সাঈ সমাপ্ত করে চুল কেটে পেট ভরে জমজমের পানি পান করে ফিরে এলাম হোটেলে, বিকেলে জিয়ারতের জন্য বের হতে হবে। হোটেলের বাংলাদেশী রুম সার্ভিস আসাদ একজন বাংলাদেশী ড্রাইভারকে ঠিক করে দিলেন, যিনি আমাকে মক্কার আশেপাশের দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখাবেন। দেশী ভাই হিসেবে খুবই আন্তরিকভাবে আমাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেলেন।
বর্তমানে বায়তুল্লাহর সীমানা প্রাচীরের মধ্যেই রয়েছে আবু জেহালের বসতবাড়ী। যে বাড়িটিকে সৌদি সরকার এখন গণ টয়লেটে পরিণত করেছে। মসজিদে হারামের আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে আব্দুল মুত্তালিবের বাড়ী। যেখানে জন্মগ্রহণ করেছেন হযরত মুহাম্মদ (সা:)। বর্তমানে এই বাড়িটিকে লাইব্রেরীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। শহরের মধ্যভাগে রয়েছে মক্কা মিউজিয়াম। যেখানে আছে আদি কাবা ঘরের নমুনা। সৌদি আরবের আদি পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রাচীন ধাতব মুদ্রা, জমজমের কুপ থেকে পানি উত্তোলনের পুরানো যন্ত্রপাতি, পুরান আমলের হাতে লেখা পবিত্র কোরআন শরীফের কপি ইত্যাদি। এরপর আমরা গেলাম জাবালে নূরের পাদদেশে। এখানেই পবিত্র কোরআন নাজেলের শুভ সূচনা শুরু হয়। সূরা আলাকের প্রথম ৫টি আয়াত এখানেই নাজিল হয়। ওহি নাজেল হওয়ার আগে হুজুর (সা:) এই জাবালে পাহাড়েই ধ্যানে বসতেন। বিবি খাদিজা প্রতিদিন সেখানে গিয়ে তাঁর খাবার দিয়ে আসতেন। ৫৬৫ মিটার উচ্চতার এই পাহাড়ে উঠতে সময় লাগে সোয়া ঘন্টার মতো। ভাবলে অবাক হতে হয় যে বিবি খাদিজার মতো একজন নারী প্রতিদিন কিভাবে এই পাহাড়ে আরোহণ করতেন।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য জাবালে সওর। সময়ের অভাবে উপরে উঠা হয়নি। যদিও তরুণ বয়সে হজ্ব করার সময় আমি একবার এই পাহাড়ে আরোহণ করেছিলাম। জাবালে সউর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর স্মৃতি বিজরিত স্থান। মক্কা থেকে মদিনায় হিযরতের সময় তিনি এবং হযরত আবু বকর এখানে তিনদিন অপেক্ষা করেছিলেন। শত্রুরা খুঁজতে খুঁজতে এই গুহার সামনে এসে ফিরে যায়। আল্লাহর হুকুমে এই গুহা মুখে মাকরসা জাল বুনে শত্রুদের বিভ্রান্ত করেছিলো।
আমাদের পরবর্তী গন্তব্য আরাফা প্রান্তর।
মহানবীর (সা:) বিদায় হজের ভাষণের স্থানমক্কা শরীফ থেকে দক্ষিণ পূর্ব দিকে এই প্রান্তরটি অবস্থিত। এবং পবিত্র বায়তুল্লাহ থেকে দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। বাবা আদম (আ:) এবং মা হাওয়ার দুনিয়াতে প্রথম মিলনের স্থান এটা। এখানেই তাদের দোয়া কবুল এবং গুনাহ মাফ হয়। হযরত ইব্রাহীম (আ:) এবং বহু নবী ও তাঁদের অনুসারীরা এই ময়দানে এসে কান্নাকাটি করেছেন। এই আরাফা মাঠের পাশেই জাবালে রহমতের অবস্থান। জাবালে রহমতের উপর দাঁড়িয়েই নবীজি তার বিদায়ী হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। হজের সময় এখানেই হাজীরা জমায়েত হন।
আরাফা মাঠের পাশেই মসজিদে নামিরা। হিজরী শতাব্দীর দ্বিতীয় মধ্যভাগে এটি নির্মিত হয়। হজের সময় ব্যতিত লোকজন এখানে খুব একটা থাকে না। তাই এই সময়টা খুব নিরব এবং সুনসান মনে হলো। আরাফার দিনে হযরত মুহাম্মদ (সা:) এখানেই নামাজে ইমামতি করতেন। এরপর আমরা এলাম মসজিদে খায়েফ-এ। এটা মিনায় অবস্থিত। অধিকাংশ ইসলামী চিন্তাবীদদের মতে এই মসজিদে ৭০জন নবী নামাজ আদায় করেছেন। হজুর (সা:) এই মসজিদে বিদায়ী হজের নামাজ আদায় করেন। এরপর আমরা এলাম মসজিদে জীন পরিদর্শনে। এখানে জীনরা হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর কন্ঠে পবিত্র কোরআন শুনে ঈমান আনে। এখানেই পবিত্র কোরআনের অন্যতম সুরা জীন অবতীর্ণ হয়। মক্কা ফিরার পথে আমরা এলাম জান্নাতুল মাওয়ায়। এটা মক্কা শরীফের একটা বিখ্যাত কবর স্থান। এখানেই হাজার হাজার সাহাবী সমাহিত হয়েছেন। রাসুল (সা:) এর প্রথম বিবি হযরত খাদিজা (রা:) এর কবরও এখানেই।
আমাদের সর্বশেষ গন্তব্য আল কিসওয়া ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরিতেই কাবার গিলাফ তৈরী করা হয়। আজ থেকে ৭৫ বছর আগে বাদশাহ আব্দুল আজীজের নির্দেশে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

Categories
মধ্যপ্রাচ্য

স্মৃতির শহর মক্কা

জেদ্দা লা মেরিডিয়ান হোটেলে লেখক
জেদ্দা লা মেরিডিয়ান হোটেলে লেখক

ইসলাম ধর্মের পবিত্রতম নগরী মক্কা। এই শহরেই হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জন্ম। পৃথিবীর প্রথম মসজিদ কাবা এখানেই অবস্থিত। এই শহরের উপকন্ঠে জাবালে নূর পাহাড়ে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আসমানী কিতাব কোরআন-এর প্রথম ওহি নাজিল হয়। ইসলমের বহু সমৃদ্ধ ইতিহাস ও হুজুর (সা:)-এর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই শহরটি ঘিরে। রয়েছে নবী করীম (সা:) প্রতি আবু জাহেলের অত্যাচারের করুণ চিত্র। কোরাইশ বংশধরদের আভিজাত্যের কাহিনী।
আমার নিজেরও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে শহরটি ঘিরে। আজ থেকে ৪০ বছর আগে কিশোর বয়সে আমার মায়ের সাথে পরিবারের আরো ১১ সদস্যের সাথে সর্বকনিষ্ঠ আমি পবিত্র মক্কা নগরীতে হজ্ব করতে এসেছিলাম। আমার মায়ের হাত ধরেই ঘুরে বেড়িয়েছি এই শহরের পথে-ঘাটে। মা আজ বেঁচে নেই। সেদিন হজ্ব করতে আসা পরিবারের ১১ সদস্যের ৯ জনই হারিয়ে গেছেন মহাকালের ডাকে। আমার প্রিয় নবীজির শহর, আমার স্মৃতির শহর মক্কায় আবার ফিরে আসার আনন্দে শিহরিত হচ্ছি বারবার।
এবারে আমার ট্যুর ছিলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি দেশ নেদারল্যান্ডে। এর আগেও এদেশটি একবার ঘুরে এসেছি। কিন্তু সব দেখা হয়নি। তাই দ্বিতীয়বারের মতো এই দেশটিতে আমার পদার্পণ। রাজধানী আমটাস্টারডাম এবং ফুলের দেশ হিসেবে পরিচিত হল্যান্ড ভ্রমণ শেষে এবার আমার গন্তব্য পবিত্র মক্কা, মদিনা এবং তায়েফ।
মাত্র গত মাসেই সৌদী সরকার তার দেশের অর্থনীতিকে সমুন্নত করতে এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিয়েছে। প্রথমবারের মতো চালু করেছে ট্যুরিষ্ট ভিসা। ফলে যেকোন ধর্মের মানুষ দেশটি ভ্রমণের সুযোগ পাবেন। বিদেশী পর্যটকরা সেখানকার ইউনেস্কো ঘোষিত ৫টি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটও ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন।
আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বাংলা ট্যুর যেহেতু বিশ্বের ৫টি মহাদেশে গাইডেড ট্যুর অপারেট করে, তাই সৌদী সরকারের এই ঘোষণায় আগ্রহান্বিত হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এখানে আসা। তবে কাবা ঘর জিয়ারত, ওমরাহ পালন এবং নবীর (সা:) রওজায় সালাম পৌছানো অন্যতম আকর্ষণ ছিলো। পাশাপাশি মক্কা ও মদিনার বাইরেও অন্যান্য শহর দেখার প্রোগ্রামও আমার এবারের ভ্রমণে অন্তর্ভূক্ত ছিলো।
সৌদী আরব ভ্রমণে এবার আমার বাহন ছিলো ইজিপ্ট এয়ার। নেদারল্যান্ডের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে সোজা মিশরের রাজধানী কায়রো। তারপর ওখান থেকে জেদ্দা। মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকান মুসলিম দেশের অনেক এয়ারলাইন্সে ভ্রমণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। কিন্তু কেনো জানি আমার কাছে ইজিপ্ট এয়ার-কেই অন্য এয়ারলাইন্সের চেয়ে ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। বিশেষ করে তাদের পরিশেষিত খাবারের স্বাদ আমার কাছে অনন্য মনে হয়। গেলোবার ইজিপ্ট এয়ারে ভ্রমণের সময় তাদের পরিবেশিত গরুর মাংসের স্বাদ আজো যেনো আমার জিভে লেগে আছে।
কায়রো এয়ারপোর্টে নেমে তাদের ট্রানজিট লাউঞ্জে কতক্ষণ অপেক্ষা করলাম। বিমানের একজন কর্মকর্তা আমাদের সাথে নিয়ে অন্য একটি টার্মিনালে নিয়ে এলেন, যেখান থেকে জেদ্দার বিমান ছাড়বে। সেই টার্মিনালে গিয়ে হজ্ব বা ওমরাহ’র একটা আবহ পেলাম। কাবা শরিফ এবং রসুল (সা:) -এর রওজা মোবারকের ছবি দেয়ালে দেয়ালে। ওজু গোছল করে এহরাম পরার সুব্যবস্থা রয়েছে।
কায়রো থেকে জেদ্দার দূরত্ব খুবই কম। মাত্র দু ঘন্টার ফ্লাইট। বিমান আকাশে উড্ডয়নের পরেই ডিনার পরিবেশন করলো। তারপর একে একে আসতে থাকলো কেক, কফি, চা। একেবারে বিমান জেদ্দা বন্দরে না নামা পর্যন্ত খাবার আসতেই লাগলো। একেবারে যেনো জামাই আদর।
এয়ারপোর্টে আনুষ্ঠানিকতা সারতে বেশী বিলম্ব হলো না। সম্ভবত আমেরিকান পার্সপোর্টও এর অন্যতম বড় কারণ। ইমেগ্রেশন পেরিয়ে ট্যাক্সি কাউন্টারে গেলাম। এরপোর্টের ভেতরে ট্যাক্সি কাউন্টার থেকে ট্যাক্সি নিতেই আমি সবসময় স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তা যে দেশেই যাই না কেনো। কারণ গাড়ীতে কিছু রেখে গেলে বা ড্রাইভার কোন সমস্যা করলে কর্তৃপক্ষকে সহজেই খুঁজে বের করা যায়।
কাউন্টারের কাছাকাছি ঢুকতেই বেশ কয়েকজন ঘিরে ধরলো। এদের থেকে একজনকে বেছে নিয়ে আমার হোটেলের ঠিকানা দেখালাম। কাবাঘর সংলগ্ন হোটেল ‘লা মেরেডিয়ান’। ঠিকানা দেখে বললো ৯০ রিয়াল দিতে হবে। আমি দামাদামি না করে তাতেই রাজি হলাম। সৌদী ৯০ রিয়াল আমেরিকার ডলারে ২২ ডলারের মতো। আমস্টারডামে আমার হোটেল থেকে এয়ারপোর্টে আসতে ভাড়া দিতে হয়েছে ৭০ ইউরো। যা প্রায় ৭৮ ইউএস ডলারের সমমান। সেই হিসেবে জেদ্দা থেকে মক্কার ভাড়া এর চার ভাগের এক ভাগ।
মক্কাকাউন্টারের লোকটি আমাকে ট্যাক্সির কাছে এনে একজন ড্রাইভারের কাছে বুঝিয়ে দিলো। আরবীতে তাকে ঠিকানাও বলে দিলো। গাড়ী ছুটে চললো মক্কার দিকে। চুপচুপ এক মনে গাড়ী চালাচ্ছে ড্রাইভার। লম্বা জুব্বা আর টুপি মাথায় থাকলেও তাকে আমার ভারত উপমহাদেশের লোক বলে মনে হচ্ছিলো। ইরেজীতেই জিজ্ঞেস করলাম তার দেশ কোথায়? আমাকে অবাক করে দিয়ে বাংলায় জবাব দিলো বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় তার জন্মস্থান। সৌদীর মাটিতে পা রেখেই প্রথমে একজন বাংলাদেশীকে পেয়ে খুবই ভালো লাগলো। গল্প করতে করতে এগিয়ে চললাম। জানলাম, তিনি এর আগে মক্কার বাইরে ছোট একটি শহরের মসজিদে ইমামতি করতেন। এখন জেদ্দা এসে এই কোম্পানীর গাড়ী চালান। গল্পে গল্পে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো টের পাইনি। একসময় তিনি গাড়ী থামিয়ে বললেন- আমরা এসে গেছি। নেমে দেখলাম, বিশাল হোটেল। গেটে লা মেরেডিয়ান সাইন জ্বল জ্বল করছে। তার ভাড়া এবং টিপস মিটিয়ে দিয়ে বিদায় দিলাম। হোটেলের বেল বয় এসে লাগেজ উঠিয়ে নিয়ে গেলো।
উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম রিসিপসনে। লম্বা জুব্বা, টুপি, রূমাল পরা একজন ইয়ংম্যান আমাকে স্বাগত জানালো। কিন্তু কম্পিউটারে তিনি আমার বুকিং খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অবশেষে আমার বুকিং রিসিট দেখতে চাইলেন। এতে আমি খুবই বিরক্ত হলাম। কারণ আমি সারা বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াই। আজ পর্যন্ত কেউই বুকিং রিসিট দেখতে চায়নি। সৌদী আরব বলেই সম্ভববত এটা প্রয়োজন। তবে বিরক্ত হলেও ব্যাগ খুলে রিসিটটা বের করে তার হাতে দিলাম। কপিটা হাতে নিয়েই তিনি এক গাল হেসে বললেন হোটেল ঠিক আছে, তবে এটা জেদ্দা লা মেরেডিয়ান। আমার বুকিং মক্কা লা মেরিডিয়ানে। যা এখান থেকে আরো ৯০ কিলোমিটার দূরে।
তার কথা শুনে আমি আকাশ থেকে পরলাম। নিমিষেই যেনো সারাদিনের ক্লান্তি এস ভর করলো শরীরে। রিসিপসনিষ্ট জানালেন সম্ভবত ইচ্ছে করেই ড্রাইভার আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়েছে। কারণ ঠিকানা দেখার পর তার এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো একজন দেশী ভাই মধ্যরাতে আমাকে মরুভূমির একটি অচেনা জায়গায় নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে। তার ফোন নম্বরও আমি রাখিনি যে কল দেবো। তবে আমার সাথে মানি রিসিট ছিলো। ওটা হোটেলের রিসিপসনিষ্টকে দিয়ে অনুরোধ জানালাম এয়ারপোর্টে ট্যাক্সি কাউন্টারে কল দিতে। ওনি ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই একজন ফোন ধরলো। ড্রাইভার আমাকে নামিয়ে দিয়ে গিয়ে তখনো রিপোর্ট করেনি। কাউন্টার থেকে জানালো তারা ট্যাক্সি একটা পাঠাতে পারেন তবে মক্কায় আমার হোটেলের ঠিকানায় পৌছে দিতে আরো ২০০ রিয়াল পরিশোধ করতে হবে। আমার ভুলটা কোথায় বুঝতে পরছিলাম না। আমি তো তাদের মুখে কিছু বলিনি। আমার বুকিং রিসিট দেখিয়েছিলাম। তারপরও আমারকে কেনো মাঝপথে নামিয়ে দিলো আমারই বাংলাদেশী ভাই!
সারা বছর আমি দেশে দেশে ঘুরে বেড়াই। এধরনের সমস্যা মোকাবেলা করার অভ্যাস আমার রয়েছে। তাই আবার অনুরোধ করে বললাম তাদের একটা ফোন করে জানাতে যে আমি ফিরে আসছি জেদ্দায়, তবে একা নয়, সৌদি পুলিশ নিয়ে। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে কে সঠিক বা কে বেঠিক।
এবারের কলে যেনো মন্ত্রের মতো কাজ হলো। কাউন্টার থেকে জানালো আমাকে আসতে হবে না, তারা গাড়ী পাঠাচ্ছে। সে গাড়ী আমাকে মক্কা হোটেলে পৌছে দিলাম। আমি তখন তাদের জানাতে বললাম, তারা যেনো সেই একই ড্রাইভারকে পাঠায় যে আমাকে এখানে নামিয়ে দিয়েছিলো। তারা তাতেই রাজী হলো।
আমি এবার স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললাম। বসলাম সোফাতে। রিসিপশন ম্যানেজার আমার জন্য খাবারের অর্ডার দিলেন। সাথে সাথেই হুকুম তামিল হলো। ওয়েটার নানা ধরনের খাবার নিয়ে এলো। আরবীয়রা যে অতিথিপরায়ণ নতুন করে তার প্রমাণ পেলাম।
একটু পরেই গাড়ী এসে পৌছালো। কিন্তু হোটেল ম্যানেজার অনুরোধ জানালো রাতটা এখানেই কাটাতে। সকালে তিনি নিজেই ড্রাইভ করে মক্কায় আমার হোটেলে পৌছে দেবেন। আমি তার বদান্যতারজন্য ধন্যবাদ জানিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম।
রাগে আমার শরীর রি রি করছিলো। ড্রাইভারকে বললাম, ভাই এই মাঝরাতে একটা অচেনা-অজানা জায়গায় নামিয়ে দিতে একটুও খারাপ লাগেনি? আপনি তো দীর্ঘদিন সৌদি আরবে আছেন। আমি ওমরাহ করতে এসেছি। ৯০ মাইল দূরে থেকে কিভাবে প্রতিদিন আমি কাবাঘর জিয়ারতে যবো- এই প্রশ্নটি কি একবারো মনে উঁকি দেয়নি? আমতা আমতা করে তিনি কি যেনো বলতে চাচ্ছিলেন। তাক বললাম- কোন কথা নয় সোজা মক্কায় আমার হোটেলের দিকে গাড়ী চালান। তাকে আরো বললাম। আমি ইচ্ছে করলেই আপনার ক্ষতি করতে পারতাম। পুলিশে রিপোর্ট করলে প্রথমেই আপনি গ্রেফতার হতেন। দেশী ভাই হিসেবে আমি তা করিনি। কিন্তু আপনি দেশী ভাইয়ের মর্যাদা রক্ষা করেননি।
তার সাথে আর কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ীর সীটে শরীর এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ক্লান্তিতে কখন যে চোখ বন্ধ হয়ে গেছে টের পাইনি। তার ডাকে সম্বিত ফিরে পেলাম। বললো আমরা হোটেলে এসে গেছি।
এবার আর আমি ঠকতে রাজি নই। গাড়ী থেকে বেড়িয়ে তাকে বললাম কোথাও যেনো না যায়। আমি ভিতরে খোঁজ নিয়ে আসি। যদি এবারও ভুল জায়গায় নিয়ে আসে তাহলে দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষমা করবো না। আমি রিসিপশনে গিয়ে রুমের চাবি নিলাম। বেল বয় লাগেজ নিয়ে উপরে গেলে আমি ফিরে এসে দেখলাম আমার দেশী ভাই অবনত মস্তকে অপেক্ষা করছে। আমি তাকে শুধু যেতে বললাম। কোন কথা না বলে তিনি রওনা হলেন জেদ্দার দিকে।