Categories
অষ্ট্রেলিয়া

পার্থ -পার্ল অব অস্ট্রেলিয়া

পার্থ-পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী।তাকে আদর করে অনেকে ডাকে পার্ল অব অস্চ্রেলিয়া। সোয়ান নদীর তীরে অবস্হিত এই শহরটি তার দুর্দান্ত আবহাওয়া, এবং পরিষ্কার, এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের জন্য সবার কাছে পরিচিত। ভারত মহাসাগরের পাশাপাশি চলমান উপকূলরেখার এক প্রান্তে অবস্থিত শহর পার্থ।এই শহরটি দীর্ঘদিন ধরে তার প্রাণবন্ত বার, দুর্দান্ত খাবার এবং খুব সম্প্রতি এর বুটিক হোটেলগুলির নতুন স্ট্রিংগুলিতে দর্শকদের আকর্ষণ করে।শহরটির জনসংখ্যা ১.৯৭ মিলিয়ন।সিডনি,মেলবোর্ন আর ব্রিসবেনের পর এটি অস্ট্রেলিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম শহর.।

আজ সকালে গোল্ড কোস্ট থেকে পার্থ এসেছি।সরাসরি ফ্লাইটে সময় লেগেছে সাড়ে পাঁচ ঘন্টা ।জেটস্টার এয়ার লাইনে চমৎকার সময় কেটেছে।মনে হয় এই এয়ারলাইনটি অস্ট্রেলিয়ার এই বেল্টে চলাচল করে এবং ভালো সার্ভিস দেয়।আসার সময়ে হাওয়াই থেকে মেলবোর্ন এসেছিলাম এই এয়ারলাইনেই।
আমার এরাইভাল ছিলো ৪ নং টারমিনালে।ইমিগ্রেশন পেরিয়ে ইনফরমেশন সেন্টারে গিয়ে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানালো এয়ারপোর্ট থেকে সিটির দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার ।ট্যাক্সিতে গেলে সময় লাগবে ১৫ থেকে ২০ মিনিট আর বাসে দেড়ঘন্টার মত।আর আমার হোটেলের সামনেই বাস স্টপ।চাইলেই কম খরচে বাসে হোটেল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারি।ইউরোপ-অস্ট্রেলিয়ার বাস গুলো খুবই আরামদায়ক।আর সুযোগ পেলেই আমি তাতে ভ্রমন করি।
বাসে যাব জানাতেই কাউন্টারের মেয়েটি বল্লো পাশেই ৩ নাম্বার টার্মিনালের সামনে থেকে ৪০ এবং ৮২ নাম্বার বাস যাবে।ভাড়া মাত্র ১৫ অস্ট্রেলিয়ান ডলার।
ইনফরমেশন সেন্টারের মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে একটু হেঁটে ৩ নাম্বার টার্মিনালে গিয়ে ৪০ নাম্বার বাসটি পেয়ে গেলাম যেটি সিটিতে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।বাস টি অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে নামিয়ে দিলো সিটিতে আমার হোটেল হায়াত রিজেন্সী সামনে।
এটি আমার প্রিয় হোটেলের একটি।আমি এই হোটেলটির একজন মেম্বারও।সেরা সেবাটাই পাই আমি এখানে।এখানেও তার ব্যত্যয় হয়নি।১২ তলায় রিভারভিউ একটি রুম দেয়া হলো আমাকে।
দুটো থেকে একটা ট্যুর বুক করা ছিলো আগে থেকেই।কথা ছিলো গাইড আমাকে পিক আপ করবে লবি থেকে।সময় মতই এসে গাইড আমাকে তুলে নিলো।আমাদের প্রথম গন্তব্য সোয়ান টাওয়ার পরিদর্শন।
বাসে বসতেই শুরু হলো গাইডের লেকচার পর্ব।পার্থ শহরটির ইতিহাস -ঐতিহ্য নিয়ে। পার্থ শহরটি সোয়ান নদীর উপর যাত্রা করেছিলো ।আদিবাসীরা এর নামকরন কর ডার্বারি-ইয়েরিগান ।যা ভারত মহাসাগরের সাথে তার সংগম থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে গ্রীষ্ম এবং শরতের মাসে শুকিয়ে যায়। আস্তে আস্তে শহরটি পশ্চিম দিকে পার্থে সমুদ্র উপকূলে পৌঁছে পূর্ব দিকে ডার্লিং রিজে অবস্থিত সোয়ান উপকূলীয় সমভূমির উপর দিয়ে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
১৮২৯ সালের মে মাসে ক্যাপ্টেন চার্লস ফ্রেমেন্টল অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ ঘোষণা করেছিলেন ।একই বছরের জুনে, ব্রিটিশ অধিনায়ক এবং গভর্নর, স্কটসম্যান জেমস স্টার্লিং উপকূলীয় পাহাড় ডার্লিংয়ের অঞ্চলে পারমেলিয়া জাহাজ থেকে নামিয়ে পূর্ব দিকে গিয়ে সোয়ান উপকূলীয় সমভূমি পেরিয়ে গ্রেট লেকে পৌঁছেছিলেন। তিনি এই জায়গাগুলিকে এত পছন্দ করেছিলেন – সুরম্য, জল, উদ্ভিদ এবং প্রাণীর সংমিশ্রণে, তিনি তত্ক্ষণাত পার্থ নামে একচি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সোয়ান নদীর উপনিবেশের প্রথম গ্রাম ছিলো।তৎকালীন যুদ্ধ ও উপনিবেশ মন্ত্রী স্যার ম্যুরের পরামর্শক্রমে স্কটল্যান্ডের পার্থ এলাকার নাম অনুসারে এই শহরটির পার্থ নাম করন করা হয়।১৯৫৬ সালে পার্থ নগরের মর্যাদা লাভ করে। ঊনবিংশ শতকের শেষ দিকে পার্থেনন স্বর্ন প্রাপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে নগরীর জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
১৮৫৬ সালে এটি রানী ভিক্টোরিয়ার ডিক্রি দ্বারা একটি শহরের মর্যাদা লাভ করে। আদিবাসীদের সাথে সম্পর্ক সহজ ছিল না, তবে পার্থের পুরো ইতিহাসে তাদের সাথে কোনও উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ হয়নি।
ইউরোপ থেকে আগত বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর কারণে পার্থ শহরটির জনসংখ্যা এবং তার জাতিগত বৈচিত্র্য বেড়েছে। শহরে বিশেষত প্রচুর ইতালি, গ্রীক, ডাচ, জার্মান, ক্রোয়েট, বসনিয়ান, সার্বস, পোলস, চেক, স্লোভাক, রাশিয়ান, ইউক্রেনীয়, ম্যাসেডোনিয়ান, তুর্কী রয়েছে।
বাস এসে থামলো সোয়ান টাওয়ারের সামনে।স্থাপত্য প্রেমীদের অবশ্যই সোয়ান বাল টাওয়ারটি দেখা উচিত জানালো গাইড।কাঁচের তৈরি বিশ্বের দীর্ঘতম এই বেল টাওয়ারটি নির্মিত হয়েছিলো ২০০৯ সালে।এতে ১৮ টি ঘণ্টা রয়েছে ।এটি লন্ডনের বেল টাওয়ারের আদলে তৈরি।টাওয়ার দেখা শেষ করার পর সবাইকে আধা ঘন্টা সময় দেয়া হলো চা নাস্তা করার জন্য।একটু খুঁজতেই পেয়ে গেলাম অন্নপুর্না নামের হোটেলটি।একজন ভারতীয় দম্পতি হোটেলটি পরিচালনা করেন।গরম গরম লুচিয় ভেদে আনলেন।সাথে হালুয়া।বিদেশে দেশীয় খাবারের সত্যিই তুলনা নেই।নাস্তার পরএককাপ চা খেয়ে আবার বাসে এসে বসলাম।
এবার বাস এসে থামলো পার্থ চিড়িয়াখানার সামনে।সব দেশের চিড়িয়াখানার চরিত্রই এক রকম।তবে স্হানীয় কিছু দীব জন্তু দেখা যায় বলে আমি যে দেশে যাই সে দেশের চিড়িয়াখানা পরিদর্শন করি।তবে পার্থ চিড়িয়াখানার ব্যাপারে আমার অন্য একটু দুর্বলতা ছিলো ।কারণ এখানেই ছিলো বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক ওরাংওটাং পুয়ান।২০১৬ সালে এটি মারা যায়।
গাইড জানালো,সুমাত্রালএই ওরামং ওটাং টার নাম গিনেজ বুক অব রেকর্ডে উঠে যাঁয।এটির ১১ টি বাচ্চা এবং ৫৪ টি বংশধর বিশ্বের বিভিন্ন চিড়িয়াখানার ছড়িয়ে আছে।গাইড আরো জানালো এই চিড়িয়াখানায় ১৬৪টি প্রজাতির ১২৫৮ রকমের প্রাণী রয়েছে।আছে ক্যাঙ্গারুকে খাওয়ানোর সূযোগ ।
ক্যাঙ্গারু সেকসনেগিয়ে অনেকেই নিজ হাতে তাদের খাওয়ালো।ক্যাঙারুর নামকরণ নিয়ে একটা মজার গল্প শোনালো গাইড।
ক্যাপ্টেন কুক অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নেমে ক্যাঙ্গারুর দেখা পেয়ে বেশ মুগ্ধ হন, পেটে বাচ্চা নিয়ে লাফিয়ে চলা এই প্রাণীটিকে তার অনভ্যস্ত ইউরোপীয়ান চোখে বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য্য মনে হয়। সেই প্রথম অস্ট্রেলিয়ান আর ইউরোপীয়ানদের সাক্ষাত, কাজেই কেউ কারো ভাষা বুঝতে পারার প্রশ্নই আসে না, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ ছাড়া। ক্যাপ্টেন কুক স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে ইশারা-ইঙ্গিতে প্রানীটির নাম জানতে চান। জবাবে স্থানীয় অধিবাসীদের একজনতাদের ভাষায় বল্লো-ক্যাঙ্গারু ।যার অর্থ -আমি জানি না। স্থানীয় ভাষার সেই বাক্যটিকেই ক্যাপ্টেন কুক প্রাণীটির নাম মনে করেছিলেন, আর সেই থেকেই বাকী দুনিয়া প্রাণীটিকে ক্যাঙ্গারু নামে ডেকে আসছে, আদি অস্ট্রেলিয়ান ভাষায় যার অর্থ হল ‘আমি জানি না’।
বেলা পরে এসেছিলো।গাইড জানালো সেদিনের মত ট্যুর এখানেই সমাপ্তি।আগামী দিন সে আবার সকলকে হোটেল থেকে উঠিয়ে নেবে অন্য গন্তব্যে।
-লেখক,সাংবাদিক।সিইও বাংলা ট্যুর।

Categories
অষ্ট্রেলিয়া

গোল্ড কোস্ট -অস্ট্রেলিয়ার লাসভেগাস

গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।

 

হাবিব রহমান: মেলবোর্নের এভালন এয়ারপোর্ট থেকে গোল্ড কোস্টের বিমান ছাড়লো কাঁটায় কাঁটায় সকাল ১০.১০ মিনিটে।টানা ২ ঘন্টার উড়ানে আমাদের যখন কোলানগাটা এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো তখন সময় বারোটা বেজে দশ। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূলীয় শহর। শহরটি রাজ্যের রাজধানী ব্রিসবেনের প্রায় ৬৬ কিলোমিটার (৪১ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব এবং নিউ সাউথ ওয়েলসের রাজ্যের উত্তর সীমান্তের কাছেই অবস্থিত। গোল্ড কোস্ট অস্ট্রেলিয়ার ৬ষ্ঠ বৃহত্তম শহর ও এটি অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম অ-রাজধানী শহর এবং কুইন্সল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর

অনুসন্ধানকারী জন অক্সলি দ্বারা সমুদ্র সৈকতে আবিষ্কারের আগে ১৮২৩ সাল পর্যন্ত গোল্ড কোস্ট অঞ্চলটি ইউরোপীয়দের মধ্যে উপেক্ষিত ছিল। এই অঞ্চল থেকে লাল সিডারের সরবরাহ ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে সকলকে আকর্ষণ করে। পরে ১৮৮৫ সাল থেকে ভ্রমণের স্থান হিসেবে গোল্ড কোস্ট খ্যাতি অর্জন করে।
বর্তমানে শহরটি ব্রিসবেনের পরে অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় জনবহুল এলাকা। গোল্ড কোস্ট তার চমতকার জলবায়ু সাথে পর্যটন গন্তব্য ,সার্ফিং সৈকত, সুউচ্চ ভবন,থিম পার্ক, নাইটলাইফ, এর জন্য অধিক পরিচিত।শহরটি ২১ তম কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করেছিল, যা ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত চলেছিল।
এয়ারপোর্টের ঝামেলা মিটতে বেশী সময় লাগলোনা।তবে বাইরে আসার পরই বাঁধলেী বিপত্তি।হোটেলের গাড়ী আমাকে রিসিভ করার কথা থাকলেও কাউকে প্লাকার্ড উচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেলোনা।যাত্রীদের ভীড়কমে গেলে লাগেজ ঠেলে খুঁজতে বেরোলাম নীল বৃত্তের মাঝখানে স্মল লেটারের সেই ‘আই’সাইনটাকে।যেটা বিদেশে আমার সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্হল।সারা ইউরোপেই এই চিহ্নটা ইনফরমেশন সেনিটারের প্রতীক।এরা সব রকমের সহায়তা করে টুরিস্টদের ।
অল্প দূরেই পাওয়া গেলো ইনফরমেশন সেন্টারের অফিসটা।রিসেপসানের মেয়েটাকে এড্রেসটা দেখাতেই চট জলদি যোগাযোগ করলো হোটেলের সাথে।সেখান থেকে জানানো হলো একটু দেরী হয়েঁছে গাড়ী পাঠাতে।আমি যেন ইনফরমেশন সেন্টারের সামনেই অপেক্ষা করি। হোটেলের লোকজন এসে আমাকে খুঁজে নেবে।
আমি কাউন্টারের মেয়েটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে সামনে একটা বেন্চেএসে বসে পড়লাম।
শেরাটন হোটেলআমার পছন্দের একটি।দেশে এবং বিদেশে কোথাও গেলেই এদের আতিথ্য গ্রহন করি।গোল কোস্টে এদের দ্বায়িত্বহীনতা আমাকে পীড়া দিচ্ছিলো। আতিথ্যের পাশাপাশি এই হোটেলটির নিজস্ব প্রাইভেট বীচ ,হাঁটা দূরত্বে সী ওয়ার্ল্ড,শপিং সেন্টার ইত্যাদি আকর্ষন দেখেই বেছে নিয়েছিলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই হোটেলের গাড়ী এসে আমাকে পিক করলো।সাথে থাকা একজন তরুন দেরী হওয়ায় বার বার দু:খ প্রকাশ করে লাগেজ গুলি দ্রুত গাড়ীতে উঠিয়ে রওয়ানা হলো হোটেলের দিকে।
সমুদ্রের পাড়ঘেষে চমৎকার রাস্তা ধরে গাড়ী চলছিলো।আগেই জেনেছিলাম অস্ট্রেলিয়া অমন একটি দেশ যা ঘুরে দেখতে হলে অনেক সময় প্রয়োজন।সিডনি যেমন অস্ট্রেলিয়ার বানিজ্যিক রাজধানি,তেমনি মেলবোর্নকে হলো সাংস্কৃতিক রাজধানী আর পর্যটন রাজধানী বলা হয় এই গোল কোস্ট কে।শুধু বাইরের দেশ থেকে নয় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি প্রান্তের জনগন এখানে ছুটে আসে বিনোদনের জন্য।এখানে আছে অনেকগুলো ক্যাসিনো।যেজন্যঅনেকে একে অস্ট্রেলিয়ার লাসভেগাস বলেও আখ্যা দেয় ।গোল্ড কোস্টের সবচেয়ে বড়আকর্ষন এর দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত।বড়বড়হোটেলগুলির বেশীরভাগ এই বীচের পাশে। বলা যায় বীচ কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গোল্ড কোস্টের পর্যটন ব্যবস্হা।
সমুদ্রের তীর ঘেষে তৈরি শেরাটন গ্রান্ড মিরেজ রিসোর্টিতে ২৯৫ টি রুম।অনেক উপরে একটা চমৎকার রুম দিলো আমাকে।সামনে ব্যালকনিতে আরামদায়ক চেয়ার পাতা শুয়ে শুয়ে সমুদ্র দেখার জন্য।সামনের নীল সমুদ্র মুহুরতেই মনটা ভালো করে দিলো।
রুমে একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে এলাম নীচে।লবিতেই অনেক টুরিস্ট কোম্পানীর অফিস।বড়বড়সাইন লাগানো অফিসের বাইরে।কোথায় কোন আকর্ষন,ফি কত ইত্যা্দি ইত্যাদি।হঁট এয়ার বেলুনে চড়া,হেলিকপ্টার ভ্রমন,জাহাজে চড়ে তিমি মাছ দর্শন,নগর পরিভ্রমন সহ আরো কত কি!
টিকিট কাটলাম জাহাজে চড়ে তিমি দর্শনের।সারা বছর পৃথিবীর নানা দেশে ঘুরে বেড়াই অথচ তিনি দর্শন হয়নি।আমি থাকি যুক্তরাষ্ট্রে।এখানেও ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের কেপ কডে তিমি দর্শনের ব্যবস্হা আছে ।কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও আর যাওয়া হয়নি।তাই এবার সূদুর অস্ট্রেলিঁয়ার এই গোল্ড কোস্টে এসে সে শখ মিটাতে হলো।
গাইডের সাথে একটু পরেই একটা মাঝারি আকারের জাহাজে চড়ে বসলাম। তিমি দেখতে হলে আমাদের যেতে হবে গভীর সমুদ্রে।কিছুটা ভয় কাজ করলেও এডভেন্চারের কাছে ভয় নতি স্বীকার করলো।জাহাজ ছুটে চললো গভীর সমুদ্র অভিমুখে।
জাহাজ ছাডতেই গাইড শুরু করলো তার বিদ্যা বিতরণ।অবশ্য রাগ করে লাভ নেই।এটাই তার চাকুরি ।এই গলা বাজি করেই তার অন্ন সংস্হান করতে হয়।তাছাড়া সবাই যে হোম ওয়ার্ক করে আসে তা নয়।তারা গন্তব্য সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকে।
গাইড জানালো ,তিমি মাছ মুখ বড় করে খাদ্য গ্রহন করে ।সে সময় মুখে ঢুকে পরা পানি দুই চোয়াল দিয়ে বের করে দেয়।সে পানি উপরে উঠে একটা বিশাল ফোয়ারার মত। গাইডের বলার পর প্যাক্টিকাল দৃশ্যটা দেখাতেই যেন আমাদের জাহাজের সামনে একটা বিশাল তিমি ভেসে উঠলো। সবাই ক্যামেরা নিয়ে শুরু করলো ক্লিক ক্লিক করে ছবি তোলা ।
জাহাজ আরো এগিয়ে গেলো সামনে।বেশ কয়েকটি ছোট ছোট তিমি দলের সাক্ষাত পেলাম আমরা।গাইড জানালো প্রমাণ আকারের একটা নীল তিমি প্রায় ৯৮ ফুট লম্বা হয়ে থাকে। ওজন প্রায় ১৮০ টন। এখন পৃথিবীতে ১০ হাজারের বেশি নীল তিমি নেই বলে গবেষকদের দাবী।মোটামুটি তৃপ্তি করে তিমি দর্শন সমাপ্ত করে ফিরে এলাম হোটেলে।
অস্ট্রেলিয়ার গোল্ড কোস্ট এমন এক স্হান যেখানে বছরের ২৫০ দিন থাকে গ্রীস্ম কাল।জুপিটার নামের সর্ববৃহৎ ক্যাসিনোটি২৪ ঘন্টা খোলা থাকে।সার্ফারস প্যারাডাইস সবচেয়ে বড়বীচ,যার বালি সাদা পাউডারের মত মিহি,কিউ-১ ভবনটি অস্ট্রেলিয়ার উচ্চতম ,পুরো গোল্ড কোস্ট শহরটি এর উপর থেকে দেখা যায়।গোল্ড কোস্টকে বলা হয় অস্চ্রেলিয়ার থিম পার্ক গুলোর রাজধানী ।এখানেই রয়েঁছে পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম,বৃহত্তম এবং ভয়ংকর রাইডের পার্ক।তা ছাড়াওআছে বিখ্যাত সী ওয়ার্ল্ড।আমাদের মাত ত দিনের গোল্ড কোস্ট ভ্রমনে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। তবে কাল সকালে আমাদের তরুন গাইড আসলে তার সাথে পরামর্শ করেই বাকী পরিকল্পনাটা সাজাবো ভেবে নিয়ে রাতের মত হোটেলে ফিরে আসলাম।
সন্ধ্যার একটু পর বীচে খোলা আকাশের নীচে ডিনার করতে নেমে এলাম।আলোকোজ্জ্বল বীচে সারি সারি সীফুডের দোকান।স্কুইড ,লবস্টার,গ্রিলড স্নাপার ফিস,রকমারী ঝিনুক ,আরো কত কী!কিন্তু আমার সীফুডে এলার্জি হয়।তাই লোভ সংবরণ করে গ্রীন স্যালাড,ফিস স্যুপ ,আর চিংড়ীর একটা আইটেম নিয়ে ডিনার সেরে ফিরে এলাম হোটেলে।