Categories
আফ্রিকা

মিশরের গল্প

আমরা প্রথমে এলাম খুফু’র পিরামিড দেখতে। এর উচ্চতা ৪৮১ ফুট। খ্রীষ্ট জন্মের ২৩৬২ বছর পূর্বে এটি তৈরী করা হয়েছিলো। নির্মাণকালে এর উচ্চতা ছিলো ১৪৩ মিটার, যা এখন ক্ষয় হয়ে ১৩৭ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। খুফু’র পিরামিডের আরেক নাম গ্রেট পিরামিড। ফারাউ শাসক খুফু’র শাসনামলে এটি নির্মাণ করা হয়। এতে রয়েছে তিনটি প্রধান প্রকোষ্ঠ। রাজা যেখানে অতিথিদের বসাতেন সেই কক্ষ বা গ্যালারির দৈর্ঘ্য ৮ দশমিক ৮৪ মিটার। গ্র্যান্ড গ্যালারীর পাশেই ছিলো কিংস চেম্বার। যেখানে রাজা খুফু’র মৃতদেহ মমি করে রাখা হয়। এবং পাশেই ছিলো কুইন্স চেম্বার।
গাইড জানায়, প্রাচীন মিশরীয়রা মমির সাথে প্রচুর ধন-সম্পদ সঙ্গে দিতো। তাদের বিশ্বাস ছিলো মৃত্যুর পর এসব প্রয়োজন পড়বে। কিন্তু ৮২০ সালে খুফু’র পিরামিডে সন্ধান চালিয়ে তার মমি বা ধন-সম্পদ কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করেন প্রাচীনকালেই চোররা মমি সহ ধন-সম্পদ সব লুট করে নিয়ে যায়। উনিশ শতকের প্রথম পর্যন্ত খুফু’র পিরামিড-ই ছিলো পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু স্থাপনা। ১৩ একর জায়গার উপর নির্মিত এই পিরামিডটা নির্মাণে এক লাখ লোকের ২০ বছর সময় লেগেছিলো। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এই পিরামিড নির্মাণের জন্য প্রচুর পাথরের প্রয়োজন হয়। কোন কোন পাথরের ওজন ছিলো কয়েক টন। এতো ভারী ভারী পাথর কিভাবে এতা উপরে উঠানো হয়েছিলো তা ভাবলে এখনো বিস্ময় জাগে।
এবার পিরামিডের ভিতরে ঢোকার পালা। গাইড গেইট থেকেই টিকেট কিনে এনেছিলো। তারপরও আবার জানতে চাইলো- সিদ্ধান্ত পাল্টাবো কিনা। যদিও আমার হাঁটুতে ব্যথা তবুও ভিতরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। সুযোগ পেয়েও পিরামিডের ভিতরটা না দেখে ফেরৎ যাবো? আবার কি কোনদিন এখানে আসতে পারবো? আর আসলেও বয়স তো থেমে থাকবে না!
প্রবেশ পথটা ছোট্ট একটা সুরঙ্গের মতো। নীচু ছাদ। একটু বেঁকে গেছে নীচের দিকে। ভিতরে অনুজ্জল একটা আলো জ্বলছিলো। সাহস সঞ্চয় করে গাইডের সাথে সামনে এগুচ্ছি। সুরঙ্গটা এক সময় ছোট্ট একটা কুঠরিতে এসে শেষ হলো। এখানে ছাদটা একটু উঁচুতে। গাইড হাত দিয়ে ডান দিকে আরেকটা সুরঙ্গ দেখালো। বললো- এটা রাণীর সমাধি। এমনিতেই দম বন্ধ লাগছিলো, তাই ওদিকে আর যাইনি। গাইড এবার নিয়ে চললো একটু ওপর দিকে আরেকটা সুরঙ্গের পথে। একটা মাঝারি আকারের ঘরে গিয়ে সুরঙ্গটা শেষ হলো। এটাতে রাখা আছে একটা কালো পাথরের কফিন। প্রচুর পর্যটক ঢুকছে পিরামিডের ভিতরে। তবুও কেমন যেনো ভয় ভয় লাগছিলো। গাইড অন্যদিকে নিয়ে যেতে চাইলেও তাকে বারণ করলাম। বললাম- আর নয়, এখন ফিরে যাবো। ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে রইলাম এটুকুই যথেষ্ট।
খুফু’র পিরামিড থেকে মুক্ত বাতাসে বেরিয়ে এলাম। মাথাটা কেমন যেনো ঝিমঝিম করছিলো। এব্যাপারে গাইডের অভিজ্ঞতা অনেক। ব্যাগ থেকে এক বোতল পানি এগিয়ে দিলো আমার দিকে। বললো- সবটুকু খেয়ে নিন, ১০ মিনিট বসে বিশ্রাম করুন, ঝিমঝিম ভাবটা কেটে যাবে। তার কথামতো সবটুকু পানি ঢক ঢক করে খেয়ে নিলাম, বিশ্রামও নিলাম। একটু ভালো লাগলে ওঠে দাঁড়িয়ে গাইডকে বললাম- চলুন বাকী দুটো পিরামিড দেখে আসি।
বাইরে থেকে বাকী দুটো পিরামিড দেখে রওনা হলাম স্ফিংকস-এর মূর্তি দেখতে। পথে গাইড দেখালো শ্রমিকদের গ্রাম। ঠিক গ্রাম নয়, গ্রামের ধ্বংসাবশেষ। পিরামিড নির্মাণের জন্য পাথর বহন, স্থাপন ইত্যাদির জন্য হাজার হাজার শ্রমিকের প্রয়োজন ছিলো। এছাড়াও ছিলো রান্নার জন্য বাবুর্চি, কাঠ মিস্ত্রি, জলবাহক সহ নানা রকম কাজের লোক। গাইড জানায়, শ্রমিকদের এই গ্রামটি নির্মাণ করা হয় খুফু এবং ম্যানকাউর কমপ্লেক্স-এর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে।
এরপর আমরা এলাম স্ফিংকস-এর মূর্তি দেখতে। মানুষের মাথার সাথে সংযুক্ত হয়েছে সিংহের শরীর। অর্থাৎ স্ফিংকস অমিত বলশালী ও বুদ্ধিমান। গাইড জানায়, এই মূর্তিটি রাজা খুফু’র সময় নির্মিত হয়েছিলো। বর্তমানে এটির নাক ভাঙ্গা। কোন এক সময় দূর্বৃত্তের আক্রমণে তার নাকটি খোয়া গেছে। স্ফিংকসের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তিনটি পিরামিড। মনে হচ্ছিলো স্ফিংকস পিরামিড তিনটিকে পাহারা দিচ্ছে অতন্দ্র প্রহরীর মতো।
পিরামিড কমপ্লেক্স থেকে বেরুনোর পর একটি বিশাল পারফিউম-এর দোকানে নিয়ে গেলো গাইড। অনেকগুলো রুম। একেক রুমে একক ধরণের পারফিউম। এটা কায়রোর সবচেয়ে বড় পারফিউম শপ। আর এগুলোতে কোন কেমিক্যাল মিশ্রিত নেই। একজন সেলসম্যানের কাছে আমাকে গছিয়ে দিয়ে সে অন্য একটি রুমে গিয়ে পত্রিকা পড়তে বসলো। এসব ধান্ধাগুলো আমার চেনা। গাইডরা যেখানে শপিং-এর জন্য নিয়ে যায়, সেখান থেকে তারা পারসেন্টেজ পায়।
সেলসম্যানটি পারফিউম-এর গুনাগুণ, কি দিয়ে কিভাবে তৈরী তার ব্যাখা দেয়া শুরু করলো। কখনো একেকটা শিশি থেকে পারফিউম বের করে হাতে মেখে দিতে লাগলো। আমার অমনোযোগিতা দেখে মনে হলো সেলসম্যান খুব আহত হলো। আর আমি তাকে জানিয়ে দিলাম এসব পারফিউম ক্রয়ে আমার তেমন কোন আগ্রহ নেই।

মরুদ্যানের রেষ্টুরেন্টে লেখক
মরুদ্যানের রেষ্টুরেন্টে লেখক

ততক্ষণে খিদে পেট চোঁ চোঁ করতে শুরু করেছে। আগেই বলাছিলো মরুদ্যানের কোন রেষ্টুরেন্টে গিয়ে আমরা দুপুরের খাবার খাবো। গাইড-কে তা বলতেই আমাকে নিয়ে রওনা হলো সেখানে। একটু পড়েই বিশাল একটা বাগানবাড়ীর গেটে এসে গাড়ী থামলো। বাগানবাড়ী মানে চারিদিকে শত শত খেজুর গাছ- অর্থাৎ মরুদ্যান। গাড়ী থেকে নামতেই কয়েকজন লোক এসে ঘিরে দাঁড়ালো। একজনের হাতে বাঁশি, অন্যজনের হাতে তবলার মতো যন্ত্র। আমাকে ঘিরে তারা বাজনা শুরু করে হাঁটতে লাগলো সামনে। আমাকে নিয়ে বসালো মরুদ্যানের ভিতরে একটি রেষ্টুরেন্টে। বিশাল রেষ্টুরেন্ট, উপরে খেজুর গাছের ছানি, নীচে মানানসই চেয়ার-টেবিল পাতা। আমাকে এখানে বসিয়ে রেখে বাদকদল ফিরে গেলো গেটে। গাইড বললো- এই রেষ্টুরেন্টের এটাই ঐতিহ্য।
গাইড ইব্রাহীম-ই খাবার অর্ডার দিলো। সবই স্থানীয় খাবার। প্রথমেই এলো আলু কাবলীর মতো একটা চাট। ছোট ছোট ফুলো ফুলো রুটি। হামাস আর বিফ দিয়ে বানানো সালাদ। বেগুন ভাঁজা, মিটবল। এগুলো খেতে না খেতে বিশাল খাঞ্চায় করে নিয়ে এলো হরেক রকম কাবাব আর চিকেন রোস্ট। সবশেষে কফি। লোক আমরা তিনজন, কিন্তু পরিবেশন করলো ১০ জনের খাবার। উঠতে যাবো। এমন সময় একটা ট্রেতে করে নিয়ে এলো কিছু ফল। প্রতিজনের জন্য একটি কলা একটি পাকা পেয়ারা এবং আপেল। পেট পুরো ভর্তি ছিলো। তবু অনুরোধ ফেলতে না পেরে খেলাম।
উঠার সময় সেই বাদক দল আবার এসে হাজির। বাদ্য বাজাতে বাজাতে আমাদের দিয়ে এলো গাড়ীর কাছে। একটা অদ্ভুত ভালো লাগা নিয়ে গাড়ীতে গিয়ে উঠলাম। গাড়ী ছুটে চললো নীল নদের তীরে আমাদের হোটেল নাইল রিজ কার্টনের দিকে।

Categories
আফ্রিকা

পিরামিডের দেশ ভ্রমণ

পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অন্যতম হচ্ছে মিশরীয় সভ্যতা। প্রায় ৫ হাজার থেকে ৩ হাজার খ্রীষ্ট পুর্বাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে মিশরে এই সভ্যতার বিকাশ ঘটে। খ্রীষ্টপূর্ব ৪ হাজার অব্দে মিশরে হায়ারোগ্লিফিক বা চিত্রলিপি এক উন্নত লিখন পদ্ধতির উদ্ভব হয়। নল খাগরা জাতীয় গাছের মজ্জা থেকে তৈরী প্যাপিরাস নামের এক ধরণের কাগজের উপর তারা লেখার কাজ সম্পন্ন করতো। প্রাচীন মিশরেই জন্ম হয় গণিত শাস্ত্র এবং জ্যামিতির। ক্যালেন্ডার তৈরি করা প্রথম কৃতিত্বও তাদেরই। ছবিতে দেখা সুবিশাল গগণচুম্বি পিরামিড, অত্যাচারী ফেরাউন, নীল নদ, মুসা নবীর দেশ, মমির গল্প, সব মিলিয়ে আমার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো মিশর। এবারে আমার আমেরিকান ট্যুরিস্টদের নিয়ে ভ্রমণের সমাপ্তি ছিলো গ্রীসের এথেন্সে। তাদের সবাইকে এথেন্স বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের বিমানে তুলে দিয়ে আমি রওনা হলাম কায়রোর পথে। আমার এই ভ্রমণ ছিলো ইতিহাসের দুই দেশ মিশর ও তুরস্ক দেখা। আর নিউইয়র্ক ফেরার পথে প্যারিস।
এথেন্স থেকে আমার কায়রো ফ্লাইট ছিলো রাত ১২টায়। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর নিয়ে ইজিপ্ট এয়ারের বিমানে চড়েই সীটে শরীরটা এলিয়ে দিলাম। গত কয়েকদিনে শরীরের উপর দিয়ে বেশ ধকল গিয়েছে। নিউইয়র্ক থেকে ট্যুর গ্রুপ নিয়ে প্রথমে আইসল্যান্ড, পরে নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম হয়ে গ্রীসের এথেন্সে গিয়ে ট্যুরের সমাপ্তি। ট্যুরের প্রতিটি দিন ছিলো সকাল সন্ধ্যা প্রোগ্রামে ঠাসা। আজ এথেন্স থেকে নিউইয়র্কের পথে আমার ট্যুর গ্রুপ-কে বিদায় দিয়ে এখন আমার ফ্রি টাইম। আহ! কি প্রশান্তি!
এজিয়ান এয়ারলাইন্সের সরাসরি ফ্লাইটে এথেন্স বিমানবন্দর থেকে এক ঘন্টা ৫৫ মিনিটে চলে এলাম কায়রো। আগেই মিশরের ভিসা নেয়া ছিলো নিউইয়র্ক থেকে। তাই এয়ারপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে বেশি একটা বিলম্ব হলো না। আমেরিকান পাসপোর্টের বদৌলতে এয়ারপোর্টে হাঙ্গামা পোহাতে হয় খুব কম। বিমানবন্দর থেকে বেরুতেই ছেঁকে ধরলো দালালেরা। সবাই আমাকে সুলভ মূল্যে ট্যুর প্যাকেজ দিতে চায়। পিরামিড, আলেকজান্দ্রিয়া, লুক্সর, আসোয়ানবাঁধ – সবই তারা দেখিয়ে দেবে মনের মতো করে। আমি একটু রুঢ়ভাবেই বললাম, দেখো আমি একজন প্রফেশনাল ট্যুরিস্ট, সারা বিশ^ ঘুরে বেড়াই। কোথাও যাবার আগে আমি সে দেশ সম্পর্কে হোম ওয়ার্ক সেরে তবেই আসি। তাছাড়া আমি নিউইয়র্ক থেকে মিশর দেখার সব ট্যুর প্রোগ্রাম আগেভাগেই বুক করে এসেছি। এখানে ট্যুর সস্তা বা দামি তা দেখার এখন কোন অবকাশ নেই। আমার রুদ্র মূর্তি দেখে দালালদের অনেকেই কেটে পড়লো। দু একজন যা ছিলো তাদের পাত্তা না দিয়ে ট্যাক্সি খুঁজতে বেরুলাম। ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেও একই অবস্থা। কেউ কেউ লাগেজ নিয়ে টানাটানি শুরু করলো। এদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নিয়ে দ্রুত গাড়ীতে চেপে বসলাম। মিটার চালু করে ট্যাক্সি ছুটে চললো ডাউন-টাউন কায়রোর পথে।

ঘড়ির কাঁটায় তখন মধ্য রাত। তারপরও রাস্তাঘাট একেবারেই জনশূন্য নয়। কায়রো এয়ারপোর্ট থেকে আততাহরীর স্কোয়ার সংলগ্ন আমার হোটেলের দুরত্ব ২২ কিলোমিটার। ড্রাইভার আগেই জানিয়েছিলো ওখানে পৌঁছাতে আধা ঘন্টার বেশি সময় লাগবে না। বাস্তবেই তাই হলো। মাত্র ২৫ মিনিটে সে আমাকে নিয়ে এলো আমার বুক করা হোটেল নাইল রিজ কাল্টন এর সামনে। বিদেশ ভ্রমণে ভালো হোটেলে থাকা আমার একটা বিলাসিতা। ট্যুর গ্রুপ নিয়ে যখন কোন শহরে যাই, তখন স্বাভাবিকভাবেই সকলের কথা বিবেচনা করে মধ্যম মানের ট্যুরিস্ট হোটেল বেছে নিতে হয়। আর যখন একা ভ্রমণ করি, তখন আমি যুবরাজ। শহরের সেরা হোটেলটি আমার চাই। এবার কায়রোতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
ডলারের সাথে কায়রোর পাউন্ডের বিস্তর ব্যবধান থাকায় খুব সস্তায় এখানে হোটেল পাওয়া যায়। তাই ইন্টারনেট ঘেঁটে কায়রো সিটির কেন্দ্রস্থলে পাঁচ তারকা মানের এই হোটেলটি বেছে নিয়েছিলাম। ৩৩১টি গেষ্ট রুম, ৪টি রেস্টুরেন্ট আর ৫টি বারসহ সুবিশাল এই হোটেলটি ঐতিহাসিক আল তাহরীর স্কোয়ারের একেবারেই গাঁ ঘেষে। তাছাড়া কায়রোর বড় বড় হোটেলের যে কয়টি সরাসরি একেবারেই নীল নদের পাড় ঘেষে অবস্থিত, নাইল রিজ কার্ল্টন তার একটি। এর সামনেই বিখ্যাত ইজিপ্টসীয়ান মিউজিয়াম।
হোটেলের সামনে গাড়ি থামাতেই বেলবয় ছুটে আসলো। এসেই সালাম জানিয়ে লাগেজ তুলে নিয়ে প্রথমে রিসিপসন কাউন্টার এবং পরে রুমে পৌঁছে দিলো। জানতেই চাইলো ডিনার করেছি কিনা। বললাম – আকাশে বিমানের খাবার খেয়েছি। তবে এতো রাতে রেস্টুরেন্ট খোলা থাকলে খাবারে আপত্তি নেই। ছেলেটি তার নাম বললো- আহমেদ। সে বললো রাত বেশী হওয়ায় হোটেলের রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। তবে বাইরে এখনো প্রচুর রেস্টুরেন্ট খোলা আছে। আমি চাইলেই সে আমাকে নিয়ে আমার পছন্দমতো রেস্টুরেন্ট বেছে নিয়ে খাওয়াতে পারবে। আমি তাকে আধা ঘন্টা পরে আসতে বললাম। গোসল সেরে ফ্রেস হয়ে তার সাথে বেরুবো।
কাঁটায় কাঁটায় আধা ঘন্টা পরে দরজায় টোকা দিলো আহমেদ। আমি তৈরীই ছিলাম। তার সাথে বেরুলাম। জানতে চাইলাম, এতো রাতে রাস্তা-ঘাট নিরাপদ কিনা? আহমেদ তার ৩২ পাটি দাঁত বের করে বললো- স্যার নিশ্চিন্তে সারারাত কায়রো শহরে ঘুরে বেরাতে পারবেন। চোর-ডাকাত কারোরই টিকিটি খুঁজে পাবেন না।
রাস্তায় নেমে আহমেদের কথার সত্যতা পেলাম। মোড়ে মোড়ে কাফেগুলো জমজমাট। ক্যাফের পাশে খোলা জায়গায় চেয়ার-টেবিল পাতা। সবাই দল বেঁধে হোক্কা খাচ্ছে আর গল্প-গুজবে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ এদিক-সেদিক ঘুরে ফিরে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে কাবাব-নান কিনে ফিরে এলাম হোটেলে। আহমেদ এক কাপ গরম কফি নিয়ে এলো। খাবার খেয়ে বিছানায় গা এড়িয়ে দিতেই চারিদিকে মাইকে ভেসে এলো ফজরের আজান। মনে হচ্ছিলো ঢাকায় যেন শুয়ে আছি। আমেরিকার দীর্ঘ প্রবাস জীবনে মাইকে আজান শুনিনি। ক্লান্ত শরীর নিয়ে আজান শুনতে শুনতে চোখ মুদে এলো। সকালে বেরুতে হবে পিরামিড দর্শনে।